Cheap price backlink from grathor: info@grathor.com

A+ তো পাইলা না এখন কি করবা ?

২০১১ সালে যেদিন আমার এইচএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট দেয়। সেদিন আমার বন্ধুরা সবাই বাসায় জিপিএ ৫ নিয়ে ফিরেছিল। আমি পারি নাই। আমি ৪.৭ নিয়ে ফিরেছিলাম। মাত্র ০.৩ পয়েন্টের জন্য। আমি যেন লজ্জায়-অপমানে মাটির সাথে মিশে যাচ্ছিলাম। এই ০.৩ পয়েন্টই যেন আমাকে দেশের তৃতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করেছিল। বাবা-মা হতাশ ছিলেন, কিন্তু আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ যে, তারা তাদের হতাশা আমাকে বুঝতে দেননি। আমাকে বকাঝকা। তাে দূরের কথা, হাতে টাকা দিয়ে ভাইবােনকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে গিয়ে খেয়ে আসতে বলেছিলেন। আমি যেদিন এইচএসসির রেজাল্ট পাই সেদিন হিসাব করে বুঝতে পারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০ নম্বরের যেই মূল্যায়ন তার মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে যেই ৮০ নম্বর, সেখানে আমার আছে মাত্র ৭০.২৮। আমার বেশির ভাগ বন্ধুরই তখন ৮০। আমি প্রায় ১০ নম্বর পিছিয়ে আছি। শতকরা হিসাবে সেটা মাত্র ৫ শতাংশ। তবুও মনে হলাে আমি যেন যােজন যােজন পেছনে আছি। তাই ঠিক করলাম, বন্ধুদের তুলনায় দ্বিগুণ। পড়তে হবে, দ্বিগুণ এফোর্ট দিতে হবে। বন্ধরা সিনেমা দেখতে যাচ্ছে, আমি যাচ্ছি না। বন্ধুরা ঢাকার বাইরে বেড়াতে যাচ্ছে আমি যাব না। মাথার পেছনে ওই ১০ নম্বরের পিছিয়ে থাকা। মনকে বুঝ দেওয়া ‘এই তিনটা মাস ভালােমতাে খাটলে ওদের সাথে সব সময়ই ঘুরতে যাওয়া যাবে। মাত্র তাে তিনটা মাস। 

জীবনে কোনাে দিন এত এফোর্ট দিয়ে পড়িনি যত ওই তিন মাসে পড়েছি। সবই ওই ১০ নম্বর পিছিয়ে থাকার কল্যাণে। আমি এইচএসসির রেজাল্ট দেওয়ার আগে ভাবতেও পারিনি যে আমি ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম ২০০-এর মধ্যে থাকব। অথচ ১০ নম্বর পিছিয়ে গিয়েও শেষ পর্যন্ত ১১৬তম হলাম। আর এর সব থেকে বেশি কৃতিত্ব আমি দিই ওই ১০ নম্বর পিছিয়ে থাকাকে। কচ্ছপ আর খরগােশের সেই গল্পটা মনে আছে? ওই ১০ নম্বর আমাকে দৌড়ের কচ্ছপ বানিয়ে দিয়েছে। স্লো অ্যান্ড স্টেডি। রেইস তাে জিতবই, নাকি? আজ ৯ বছর পার হয়ে গেছে। ৪.৭ আমার জীবনে এখন শুধু একটা সংখ্যা, এর থেকে বেশি কিছু নয়। আমি বলছি না, জীবনে অনেক বড় কিছু করে ফেলেছি বা স্টিভ জবস হয়ে গিয়েছি। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা বেশ ভালােই রেখেছেন।

দিনশেষে তােমার জিপিএ ৫ই হােক আর ৩ই হােক, সেটা তােমার জীবনটাকে নির্ধারণ করে দেবে না। আজকের পর সেটা তােমার জীবনেও একটা সংখ্যা হয়েই রয়ে যাবে। তােমার আগামীকালটা এখন তােমার হাতে। সেই লড়াইয়ের জন্য শুভকামনা। বিশেষ দ্রষ্টব্য: তােমার ফলাফল যদি জিপিএ ৫ হয়, তাহলে তােমাকে অভিনন্দন। কিন্তু এই ফলাফল নিয়ে বেশি বড়াই করতে যেও না। কখনাে দেখেছ বড় কেউ তাদের মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে গর্ব করে কথা বলছেন কিংবা অন্য কারও ফলাফল নিয়ে ব্যঙ্গ বা কটুক্তি করছেন? কারণ তারা জীবনে আরও অনেক বড় বড় চ্যালেঞ্জের মােকাবিলা করে এসেছেন। আর তােমার আশেপাশের মানুষ যেমন জিপিএ ৫-কে মহাআরাদ্ধ সােনার হরিণ মনে করেন, তােমার ভবিষৎ চাকরিদাতা কিন্তু এতটা অতি মূল্যায়ন করেন না। বরং তুমি কী কী কাজে দক্ষ, কেমন অভিজ্ঞতা আছে। এগুলােকে অনেক বেশি মূল্যায়ন করেন। সুতরাং জিপি এ ৫ সংক্রান্ত হতাশা বা অহংকার দুটোই ঝেড়ে ফেলে নিজেকে আরও দক্ষ করে গড়ে তােলাে।

Related Posts

11 Comments

Leave a Reply

Press OK to receive new updates from Firstsheba OK No