বাংলাদেশের রাজনীতিতে ছাত্রসমাজের ভূমিকা সবসময় গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তবে শুধুমাত্র ছাত্র আন্দোলন দিয়ে সরকারের পতন সম্ভব হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি এবং ডাকসুর সাবেক ভিপি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে জমে থাকা ক্ষোভ ও চাপ দেশের ভেতরে বারুদের মতো বিস্ফোরণ-প্রস্তুত অবস্থায় ছিল, আর কোটাবিরোধী আন্দোলন সেই বারুদে আগুন জ্বালিয়েছে।
ফরিদপুরে জনসমাবেশে বক্তৃতা
সোমবার বিকেলে ফরিদপুরের আলীপুর মোড়ে আয়োজিত একটি জনসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন মুজাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, কোটাবিরোধী আন্দোলন না হলে অন্য কোনো ইস্যুতে আন্দোলন হলেও সরকারের পতন ঘটতে পারত। কারণ দেশের সাধারণ মানুষ, বিশেষত কুলি-মজুর-শ্রমিক শ্রেণি দীর্ঘদিন ধরে পরিবর্তনের অপেক্ষায় ছিল। এই আন্দোলন তাদের চাপা কণ্ঠস্বরের প্রতিধ্বনি ঘটিয়েছে।
দ্রব্যমূল্য ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে দাবি
সিপিবি এই জনসমাবেশ আয়োজন করে একাধিক জাতীয় দাবি তুলে ধরে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, কৃষিজ ফসলের সঠিক মূল্য নির্ধারণ, জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণ, এবং গ্রাম-শহরব্যাপী রেশনিং ব্যবস্থা চালু। পাশাপাশি, তারা দ্রুত নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কার করে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি তোলে।
ফ্যাসিস্ট শাসনের পুনরুত্থান ঠেকানোর আহ্বান
মুজাহিদুল ইসলাম আরও বলেন, বাংলাদেশের মাটিতে ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার নতুন করে জায়গা নিতে পারবে না। তবে তিনি সতর্ক করেন, নতুন ধরনের ফ্যাসিস্ট শাসনের জন্ম ঠেকাতে প্রয়োজন এমন একটি কাঠামো, যা জনগণের অধিকারের পক্ষে কাজ করবে। তিনি বলেন, যে সংবিধানের ভিত্তিতে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছিল, তা রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি।
স্বাধীন নির্বাচনের গুরুত্ব
বর্তমান সরকারের ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি বলেন, এটি কোনো বিপ্লবী সরকার নয় বরং একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তাদের মূল দায়িত্ব হবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করা। তিনি বর্তমান সরকারকে সংস্কারপন্থী হিসেবে আখ্যা দিয়ে জনগণের প্রকৃত ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার তাগিদ দেন।
সমাবেশে নেতৃত্ব ও মিছিল
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সিপিবির জেলা সভাপতি আজাদ আবুল কালাম। উপস্থিত ছিলেন ট্রেড ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতা কাজী রুহুল আমীন এবং সিপিবির কেন্দ্রীয় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রফিকুজ্জামান। সমাবেশ শেষে একটি মিছিলের মাধ্যমে এ আন্দোলনের প্রেরণার বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
এই সমাবেশের আলোচনায় স্পষ্টতই উঠে আসে, জনগণের দীর্ঘদিনের হতাশা ও ক্ষোভই যে কোনো পরিবর্তনের মূল চালিকাশক্তি। মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের বক্তব্যে ফুটে ওঠে জনগণের দাবি ও অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের প্রয়োজনীয়তা।