বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশে বর্তমানে যে সংকট চলছে, তা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সুষ্ঠু রাষ্ট্র পরিচালনার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। মঙ্গলবার, রাজধানীর ইস্কাটনে একটি শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও সংবিধানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাড়াহুড়া পরিহার করে সুচিন্তিত পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত। তার বক্তব্যে অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন প্রক্রিয়ার ওপর রাজনৈতিক মহলে চলমান বিতর্কের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, এ ধরনের বিতর্ক দেশের প্রশাসনিক গতিশীলতাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
তাঁর মতে, আওয়ামী লীগ সরকারের অব্যাহত শাসনের ফলে দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন অব্যাহতভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে একটি বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক ও মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে একত্রিত হয়ে কাজ করতে হবে। গত ১৫ বছর ধরে চলমান রাজনৈতিক সংকটের প্রেক্ষাপটে, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সহযোগিতার আহ্বান জানান তিনি। তারেক রহমানের মতে, এই যাত্রাপথে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কিছু মতভিন্নতা থাকলেও, সকলের লক্ষ্য অভিন্ন।
আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে বিএনপির নেতারা সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “বর্তমান সরকার একটি ভঙ্গুর রাষ্ট্রকে মেরামতের লক্ষ্যে সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করেছে, যা অবশ্যই একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ।” তবে তিনি সতর্ক করেন যে, যদি জনগণের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করতে না পারা হয় এবং তাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত না করা হয়, তাহলে সরকারের সকল সংস্কার কার্যক্রম জনগণের আস্থার মুখে পড়বে।
সরকারের বিরুদ্ধে গত ১৫ বছরে গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের অভাব নিয়ে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি জানান, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পূজা-উত্সবগুলো এখন শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হচ্ছে, যা বাংলাদেশের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের পরিচায়ক। তবে, তিনি সতর্ক করেন যে, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা সৃষ্টি করার জন্য রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের অপচেষ্টা চলছে।
এছাড়াও, তারেক রহমান ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, “ধর্ম যার যার, নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার সবার।” ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর রাজনৈতিক চাপের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তিনি সকলের জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। তাঁর মতে, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা না হলে, রাষ্ট্রে কেউ নিরাপদ থাকবে না।
উল্লেখ্য, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও রাজনৈতিক পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর আওয়ামী লীগের ব্যর্থতা নিয়ে সমালোচনা করে তিনি বলেন, “নতুন বাংলাদেশ গড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।” এ লক্ষ্যে সকল রাজনৈতিক শক্তিকে একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
এই প্রেক্ষাপটে, বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে একটি নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্ম নেওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। রাষ্ট্রের স্বার্থে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করা জরুরি।