সুপ্রিয় পাঠকবৃন্দ, আসসালামু আলাইকুম। আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে আপনারা সবাই ভাল আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় ভাল আছি। আজ আমি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় নব্য এক আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার কারণে আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মে চলার পথে যে যে সমস্যার সম্মুখীন হবে তার সম্ভাব্য কিছু ঘটনা তুলে ধরার চেষ্টা করব।
আমরা জানি পৃথিবী ব্যাপী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ার কারণে আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ২০২০ সালের ১৭ ই মার্চ বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে দেশব্যাপী প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকে। তবে অনলাইন ভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম ক্রমবর্ধমান গতিতে চলতে থাকে তাও আবার প্রায় দুই তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতিতে।
শিক্ষার্থীরা ঘরবন্দি হয়ে লেখাপড়া হীন অলস জীবন যাপন করতে থাকে। এতে করে একদিকে যেমন তাদের মেধাবিকাশ চরমভাবে ব্যর্থ হয় অপরদিকে নৈতিকতারও চরম অবক্ষয় ঘটতে শুরু করে। করোনা ভাইরাস সবকিছু দমিয়ে রাখতে পারলেও পরবর্তী শ্রেণীতে প্রমোশন নিশ্চিত হওয়া দমিয়ে রাখতে পারিনি। করোনা পরীক্ষা কে বা মূলয়ন পদ্ধতি কে স্থগিত রাখতে সক্ষম হয়েছে কিন্তু পরবর্তী শ্রেণীতে প্রমোশনের ক্ষেত্রে করনো ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।
আসলে কি তাই???? সুপ্রিয় পাঠকবৃন্দ, আমাদের এই অবহেলিত শিক্ষাব্যবস্থায় একে তো বিভিন্ন ধরনের শিক্ষাবান্ধব শিক্ষা উপকরণ ও নিয়ম কানুনের অভাবে শিক্ষার পূর্ণতা পায় না।
আবার যদি অটো পাশ দিয়ে শিক্ষার্থীদের কে পরবর্তী শ্রেণীতে উত্তীর্ণ করানো হয় তাহলে ওই শিক্ষার্থী তার মেধা মনন ও সৃজনশীলতা কিভাবে বিকশিত করবে?? আপনাদের বিবেকের আদালতে আমার প্রশ্ন রয়ে গেল।।। এখন আপনারা বলতে পারেন তাহলে পরবর্তী শ্রেণীতে কি তারা উঠবে না বা পরবর্তী শ্রেণীতে কি তারা লেখাপড়া শিখবে না?? এর প্রতি উত্তরে আমি বলব অবশ্যই উঠবে শিখবে কিন্তু তার একটা সুষ্ঠু মূল্যায়ন থাকা দরকার। আপনি বলবেন শিক্ষার্থীরা তো লেখাপড়া শিখে নাই,লেখাপড়া করে নাই, মেধার প্রয়োগ করে নাই,তাহলে কিভাবে তারা মূল্যায়নে অংশগ্রহণ করবে???
আমি বলছি তারা মূল্যায়নে অংশগ্রহণ করবে,আমি বলছি না তারা লেখাপড়া না করে মূল্যায়নে অংশগ্রহণ করুক। তারা অবশ্যই প্রাতিষ্ঠানিক পাঠদান কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট হয়ে মেধার পরিপূর্ণ প্রয়োগ করে লেখাপড়া শিখে মূল্যায়িত হোক। এখন আমাদের বর্তমানে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সীমিত পরিসরে হলেও চলছে তারা যা শিখেছে তার থেকে আমরা মূল্যায়ন নিয়ে একবারে দুইটা শ্রেণীর ফলাফল প্রকাশ করতে পারতাম এবং সেটা অবশ্যই সংক্ষিপ্ত পরিসরে হলেও করা সম্ভব হতো।
আজকে যে সমস্ত শিক্ষার্থীদের কে অটো পাশ দিয়ে দেওয়া হয়েছে যারা তাদের বাস্তব জীবনে এই অটো বাসের কটু কথা শুনতে শুনতে জীবনটা তিক্ত হয়ে যাবে। কোন চাকরির পরীক্ষায় বা ভাইভা বোর্ডে নিজেকে যখন অটো পাশের বা সেশনের ছাত্র বা শিক্ষার্থী বলে পরিচয় দিবে অর্থাৎ যখন বলবে আমি অটো পাশ করেছি অটো পাস তখন দেখবেন তার উক্ত পদে নিয়োগ পাওয়ার ক্ষেত্রে কত জটিলতা সৃষ্টি হয়।
আমি বলব অবশ্যই জটিলতা সৃষ্টি হবে ভাইভা বোর্ডে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় জ্ঞান চর্চার অভাবে অনেককে ভাইভা বোর্ডে আটকে যায়। মাধ্যমিক পর্যায়ের সিলেবাস থেকে অনেক সময় বেশিরভাগই প্রশ্ন ভাইভা বোর্ডে হয়ে থাকে সেই মাধ্যমিক পর্যায়ে যদি অটো বাসের মতো সার্টিফিকেট নিয়ে ভাইভা বোর্ডে অথবা লিখিত চাকরির কোন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সেক্ষেত্রে তাদের পরাজয় বাস্তবায়ন হওয়া অনিশ্চিত বা অকল্পনীয় কিছুই নয়।
আমাদের এই অবহেলিত শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে যদি শিক্ষাবান্ধব নিয়ম নীতি প্রয়োগ করে সমূহ ইতিবাচক পরিবর্তন আনা যায় তাহলে আমাদের এই শিক্ষা ব্যবস্থা দ্বারা আমাদের শিক্ষার্থীরা অনেক উপকৃত হবে। এটা আমার নিছক আশা মাত্র। বলতে চাই আর কখনো অটো পাস চাইনা, চাই মেধা বিকাশে নিজ যোগ্যতায় অর্জিত পাস। অটো পাশের কটু কথার শুনতে চায় না। বরং নিজ যোগ্যতায় পাস করে দেশ ও জাতির মঙ্গলে নিজেকে নিয়োজিত করতে চাই।
সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।।।