একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ- স্নাতক না হলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি নয়

ন্যুনতম স্নাতক বা ডিগ্রি পাস না হলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পদে থাকতে পারবেন না। অর্থাৎ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হতে হলে কোনো ব্যক্তিকে অবশ্যই ন্যূনতম ¯স্নাতক বা ডিগ্রিধারি হবে। এই বিধান রেখে আইন পাশ করার চিন্তা করছে সরকার। সে জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে এ বিষয়ে প্রস্তাব পাঠানোর নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ বজায় রাখা, শিক্ষার মান বৃদ্ধি করা, শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সরকারি সিদ্ধান্তসমূহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কার্যকর করাসহ নানা বিষয়ে পরিচালনা পর্ষদকে সিদ্ধান্ত ও তদারকি করতে হয়। সেক্ষেত্রে সভাপতি মহোদয়ের ভূমিকাই থাকে সবচেয়ে বেশি। আর এসব কাজ সম্পাদন করতে গিয়ে তাকে নিয়মিত শিক্ষকদের সাথে কখনো অভিভাবকদের সাথে মিটিং করতে হয়। তাকে শিক্ষা কারিকুলাম সম্পর্কে জানতে হয়। বিভিন্ন জাতীয় দিবসগুলোতে বক্তব্য বিবৃতিও দিতে হয়। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে আমাদের দেশের অনেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েই যোগ্যতাসম্পন্ন সভাপতি নেই। বেশিরভাগ কম শিক্ষিত ব্যক্তিরাই প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উঁচু পদটি দখল করে আছে। কোথাও কোথাও আবার একেবারে নিরক্ষর ব্যক্তিরা সভাপতির আসন ধরে রেখেছেন। । স্থানীয় প্রভাব, রাজনৈতিক প্রভাব, অর্থের আধিক্যসহ নানা প্রভাব খাটিয়ে তারা এসব পদ দখল করে আছেন। দেশের অসংখ্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে যেখানে পরিচালনা পর্ষদের অধিকাংশ সদস্য ও সভাপতি রাজনৈতিক বিবেচনায় অধিষ্ঠিত। সেখানে সেই ব্যক্তি শিক্ষিত কি না সে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ নয়। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার, রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতারা এ পদের জন্য এগিয়ে থাকেন। কোনো কোনো ব্যবসায়ী বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের জন্য অনুদানের বদৌলতে বাগিয়ে নেন এ পদটি। বর্তমানে নিয়ম অনুযায়ী স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, শিক্ষানুরাগী, শিক্ষক , জমিদাতাসহ মোট ১১ সদস্যের কমিটি রাখা হয় স্কুল পরিচালনার জন্য। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সভাপতির আসনটি দখল করেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। ফলে বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষকদের সাথে তাদের মতের অমিল হয়। এসব অযোগ্য সভাপতিদের বিরুদ্ধে প্রায়শই শিক্ষকদের সাথে অসদাচরণ, অর্থ আত্মসাৎ ও নৈতিক অপরাধের মতো গুরুতর অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। তাছাড়া লেখাপড়া না জানায় তারা শিক্ষার গুরুত্ব ও শিক্ষকের মর্যাদার ব্যাপারেও উদাসিন। এতে করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনুকুল পরিবেশ ও শিক্ষার মান অবনমিত হয়ে পড়ছে। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার কাঙ্খিত গুণগত মান। দীর্ঘদিন ধরেই এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ আসছিল। সরকারও বিষয়টি নিয়ে কিছু করার কথা ভাবছিল। এখন এ বিষয়টি সরকার নজরে আনায় এবং ন্যুনতম স্নাতক পাশের বাধ্যবাধকতার বিধান করে আইন পাশ করার প্রস্তাবে সন্তোষ প্রকাশ করছেন অনেকে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন যদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সভাপতির পদের জন্য ন্যুনতম স্নাতক পাশের বিধান করে আইন করা হয় এবং সেটা দেশের সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনুসরণ করা হয়, তবে অচিরেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গুণগত পরিবর্তন আসবে। তাই সরকারের এ চিন্তাকে সাধুবাদ জানিয়ে দ্রত এ ব্যাপারে আইন পাশের উদ্যোগ নেওয়ার আহবান জানিয়েছে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।

Related Posts

8 Comments

মন্তব্য করুন