এক গ্রামে বাস করত দুটি লোক । তাদের একজন হল সত্যবাদী অন্যজন মিথ্যাবাদী । যে সত্যবাদী সে সব সময় সরাসরি সত্যকথা বলে দিত । আর মিথ্যাবাদী নানা রকম ঘুরিয়ে প্যাচিয়ে সত্যকে মিথ্যা করে বলত । একদিন দুজনে ঘুরতে ঘুরতে এল বনের মধ্যে একটা জায়গায় । সেখানে ছিল বানরদের রাজত্ব । বাইরের মানুষজন বড় একটা ঢুকত না । এখন বানরদের যে রাজা সে দূর থেকে দুজন মানুষকে আসতে দেখে তার অনুচরদের হুকুম করল , শিগগির একটা সিংহাসন নিয়ে আয় । হুকুম পেয়ে তৎক্ষণাৎ একদল বানর গাছতলায় সুন্দর এক সিংহাসন এনে হাজির করল ।
বানররাজ সেই সিংহাসনে চেপে বসে বানরদের আদেশ করল , তার সামনে সারি দিয়ে দাঁড়াতে ।রাজার সামনে সারি দিয়ে পরপর দাঁড়িয়ে গেল । দুজন মানুষ আসছে , এগিয়ে গিয়ে তাদের এখানে নিয়ে এসো । সঙ্গে সঙ্গে ঝুপঝাপ গাছ থেকে লাফিয়ে নেমে দলে দলে বানর তাদের এবারে বানররাজ গাট্টাগোট্ট চেহারার এক বানরকে ডেকে বলল , ওই যে সেই বানর তখনি গিয়ে সত্যবাদী আর মিথ্যাবাদীকে বানররাজের সামনে । বানররাজ মিথ্যাবাদীর দিকে তাকিয়ে বলল , ওহে বলতো আমি কে ? মিথ্যাবাদী সঙ্গে সঙ্গে উত্তর করল , আপনি হুজুর সম্রাট । এনে হাজির করল ।
উত্তর শুনে বানররাজ খুব খুশি হল । সে হাসতে হাসতে ফের জিজ্ঞেস করল , আমার সামনে যারা সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে , এরা সব কে বলতে পার ? মিথ্যাবাদী চটপট চারদিকে চোখ বুলিয়ে নিয়ে বলল , হুজুর , আপনি হলেন গিয়ে সম্রাট , আর এরা সব হল আপনার সৈন্যসামন্ত , কর্মচারী – পুরস্কার দিল । মিথ্যাবাদীর কথায় তুষ্ট হয়ে বানররাজ তৎক্ষণাৎ এক থলে মোহর তাকে সব দেখে শুনে সত্যবাদী ভাবতে লাগল , মিথ্যাবাদী যদি মিথ্যা কথা বলে পুরস্কার পাব । মোহরের থলে পুরস্কার পায় তবে আমি সত্যকথা বলে নিশ্চয় আরও বেশি পুরস্কার পাবো।
বানররাজ এরপর সত্যবাদীকে ডেকে বলল , এবারে তুমি বলতো আমি কে ? আর আমার সামনে যারা দাড়িয়ে আছে এরাই বা কারা ? “ সত্যবাদী গম্ভীরমুখে বলল , তুমি তো দেখছি জলজ্যান্ত একটা বাঁদর । আর তোমার সামনে যারা দাঁড়িয়ে আছে তারাও বাঁদর ছাড়া কিছু নয় । সত্যবাদীর কথা শুনে বানররাজ রাগে হুঙ্কার ছেড়ে বলল , কী এত বড় কথা— এরপর বানররাজের হুকুমে বানরের দল দাঁতমুখ খিঁচিয়ে লাফিয়ে এসে পড়ল সত্যবাদীর ঘাড়ে । দেখতে দেখতে তারা তাকে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলল ।
এই গল্প থেকে আমরা বুঝতে পারি যে মানুষের মধ্যে শুধুমাত্র মানবিক গুনাবলি থাকলেই চলে না। তার সাথে সবচেয়ে বেশি যে জিনিসটা দরকার সেটি হল উপস্থিত বুদ্ধি। উপস্থিত বুদ্ধির সদ্ব্যবহার এবং সঠিক প্রয়োগ আমাদের প্রত্যেকের জীবনে বাস্তবায়ন করা বাঞ্ছনীয়।