Cheap price backlink from grathor: info@grathor.com

অসমাপ্ত ভালোবাসা (পর্ব-৩) [একটি আত্মজীবনীমূলক গল্প]

মাদের জীবনে ভাললাগার মত মানুষের অভাব নেই। সংক্ষিপ্ত এই জীবনে অনেক সময় অনেক মানুষের আনাগোনা হয়। কেউ এসে ভালো কিছু উপহার দিয়ে যায়, আবার কেউ কেউ দেয় ভালো/খারাপের অভিজ্ঞতা। ভালোদের ভালো গুলো দেখে যেমন আমরা খুশি হই, তেমনি খারাপদের খারাপ গুলো দেখে আমাদের শিক্ষা নেওয়াটা জরুরী..

আমাদের প্রত্যেকের জীবনে সত্যিকারের ভালোবাসা আসে একবারই। আপনি যতই বলুন না কেন, অনেকের সাথে রিলেশন করেছেন, অনেক প্রেমকাহিনী রচনা করেছেন, আসলে সেগুলো ভালোবাসা ছিলনা। সেসব ছিলো ভালোলাগা। ভালোলাগার সেসব মানুষগুলো হয়তো আপনাকে কিছু আনন্দ ও বেদনাময় স্মৃতি উপহার দিয়ে গেছে। আর ভালোবাসা? সে কি দিল? সে হচ্ছে এমন একজন, যার কথা মনে করে আজও আপনি আনন্দিত বা মনঃক্ষুণ্ণ হন। সে বর্তমান থাকুক বা অতীত হয়ে যাক, তার কিছু কথা, কিছু আবদার, কিছু প্রতিজ্ঞা এখনো রয়ে গেছে আপনার মনে। যেগুলো আপনি কখনোই ভুলবেন না…

আমার জীবনে অনেক ভাললাগার মানুষের সমাগম হয়েছে। কিন্তু ভালোবেসেছি একজনকেই। আগের পর্বে নিশ্চয়ই তাকে নিয়ে একটি ঘটনা আপনাদের শুনিয়েছি। মূলত সেটাই ছিল কোন মেয়ের সাথে আমার প্রথম দেখা করা। আমার জীবনের সেই এক্সপেরিয়েন্স টা আমার ভালবাসার মানুষটার সাথেই হয়…

সেদিন রেস্টুরেন্ট থেকে ফেরার পর আমার মন যেন আর টিকছিলনা। তার কথা বার বার মনে পড়ছিল। কি করবো না কি করবো মাথায় আসছিল না; তাই হোস্টেলের রুমে ঢুকে বেডের উপর হাত পা ছাড়িয়ে শুয়ে ছিলাম কিছুক্ষণ। এদিকে আমার অবস্থা থেকে আমার রুমমেট হাসছিল..

দিনগুলো পর পর যেতে থাকে, আর সুমাইয়ার সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। একদিন তাকে হঠাৎ বলে বসি, “আচ্ছা, যদি আমাদের মিল না হয়?” তখন সে বলে, “মিল হবেনা বলতে? কি মিলের কথা বলতে চাচ্ছিস?”
মানে.. এই যে তোর আর আমার এত ঘনিষ্ঠতা, তুই কি থাকতে পারবে আমাকে ছাড়া?
কেন থাকবো না? তুই কি কোথাও হারিয়ে যাবি নাকি?
আমি আমার না; তোর হারানোর কথা চিন্তা করছি..
মানে?
মানে দেখ, তুই হচ্ছিস মেয়ে মানুষ। তোর গার্জিয়ান তোকে বেশি দিন অবিবাহিত রাখবেননা।
মানে তুই কি বুঝাতে চাইছিস? বুঝিয়ে বল..
দেখ, আমাদের যে ঘনিষ্ঠতা, মনে হয়না এই ঘনিষ্ঠতা সহজেই প্রতিরোধ্য। যদি তোর বিয়ে ঠিক হয়ে যায়, তখন কি করবি?
নসীবে যদি বিয়ে ঠিক হয়ে যায়, তাহলে বিয়ে করে নেব। কেন? তুই আসবি না আমার বিয়েতে?

কথাটা শুনে মনে একটু কষ্ট যদিওবা লেগেছিল আমার। সেটি প্রকাশ না করে আমি বলতে থাকি,
সুমাইয়া, তুই আমাকে ছাড়া অন্য কারো কাছে কিভাবে থাকবি? কে তোকে এত কেয়ার করবে আর কে আমাকে এতো কেয়ার করবে?
আরে তোর আর আমার সম্পর্কটা তুই এখনো বুঝলি না?
হুঁ বুঝি তো..
তো? বুঝলে এসব বলছিস যে?
–   . . . .
আরে পাগল, আমরা তো শুধুমাত্র বন্ধু। এর বেশি কিছু না। বিয়ে আমার তোর সাথে হতে হবে কেন!
তো কিভাবে থাকবি আমাকে ছেড়ে বল?
কেন, আমার বিয়ে হয়ে গেলে কি তুই আর আমার বন্ধু থাকবি না?
আমি তো সব সময় তোরই আছি সুমাইয়া।
আচ্ছা হৃদয়, আজ এত আবেগ কেন তোর?
কই আবেগ?
এই যে এত আবেগ দেখাচ্ছিস.. কি হয়েছে বলতো?
আচ্ছা সুমাইয়া, তুই বলতো ভালোবাসাটা কোন দিক থেকে আসে?
কেনো, মন থেকে আরকি..
আচ্ছা সুমাইয়া, তুই আমাকে মন থেকে ভালোবাসিস না?
কেন বাসব না! আজিব! অবশ্যই অন্য বন্ধুদের থেকে তোকে একটু বেশিই ভালোবাসি।
আচ্ছা, তাহলে আমার কি হবে এখন? আমি যে তোকে বন্ধুত্বের চেয়েও বেশি; মানে আজন্ম ভালবেসে ফেলেছি?
শোন হৃদয়, এটা কিন্তু একদম উচিত নয়। তুই কি বোঝাতে চেয়েছিস আমি প্রথমেই বুঝেছি। শুধু তোর মুখ থেকে স্বীকার করানোর অপেক্ষায় ছিলাম।

শোন হৃদয়, প্রথমতঃ আমরা সমবয়সি। দ্বিতীয়তঃ তোর সেটেল হতে অনেক সময় লাগবে। তৃতীয়তঃ আমার বাবা-মা আমাকে আর এক বছরের মধ্যে কিংবা সর্বোচ্চ দুই বছরের মধ্যে বিয়ে দিয়ে দিবেন। তাঁদের একমাত্র মেয়ে বিধায় উনাদের ডিমান্ডও অনেক বেশি। হয়তো সরকারি চাকরিজীবি ছাড়া বিয়েই দিবে না আমায়। আর তোর সবকিছু আমি মেনে নিলেও আমার বাবা মা মেনে নেবে না। কারণ, তোর বিয়ের জন্য তোর বয়সটা একটু ছোট। আর তোর কেন লাগতেছে এসব? তুই আমাদের বন্ধুত্বটাকে বজায় রাখতে পারবে না এটাই বুঝাচ্ছিস তো?

আমি তোকে হারিয়ে ফেলার ভয় থেকেই এসব বলছি। আর কিছু না।
আচ্ছা হইছে। এসব বিয়ে-টিয়ে নিয়ে আর কোন কথা বলিস না আমার সাথে। আমি এসব অপছন্দ করি।
আচ্ছা ঠিক আছে। তোকে আর শুনতে হবে না..

নিজেকে নিজের অনেক ছোট মনে হতে লাগলো। সত্যিই কি আমি তার কাছে এতই নগণ্য? অথচ দেখুন, তাকে আমি আমার মনের রাজ্যে কোথায় বসিয়ে রেখেছি! ভাবতেই মনটা আমার ছোট হয়ে যায় অনেক…

সারাদিনেও আমার এক দানা খাওয়া পেটে ঢোকেনা। আসলে ওই সময়টাতে বুঝতে পারিনি যে আবেগ সব সময় সবকিছু কে ধ্বংস করে দেয়। ভয় হচ্ছিল, যদি আমি আমার বন্ধুত্বটা হারাযই, সে হয়তো থাকতে পারবে। কিন্তু আমার কষ্টটা কই যাবে? কোথায় রাখবো সে কষ্ট?

আবেগের চাপে কাঁচুমাঁচু হয়ে থাকা আমার পুরুষত্বটা হঠাৎ জেগে উঠে তখন। কিরে! কি করছি আমি! গ্রাম থেকে শহরে কেন এসেছি! বাবার হালাল ব্যবসায় কামানো হক্বের টাকাগুলো কেন খরচ করছি! নিশ্চয়ই এসব করার জন্য না। অবশ্যই না… আমাকে কিছু একটা হতে হবে।

সে যেমন তার পরিবারের একমাত্র মেয়ে, আমিও আমার পরিবারের একমাত্র ছেলে। আর ছেলে হিসেবে আমার দায়িত্বটাও অনেক বেশি। ব্যাস… ব্যস্ত হয়ে যাই আমি নিজের কাজে।

কিন্তু মনটাকে বেশিদিন মানাতে পারেনি অবাধ্য এই মন আমার, বারবার তার কাছেই ফিরে যেতে চায়। তিনদিন পর সে নিজ থেকে আমাকে কল দেয় এবং সেদিনের খুশিটা আমি আজও আমার মনে অনুভব করতে পারি…

বিয়ে করবো না বলছি বলে যোগাযোগ টা বন্ধ করে দিচ্ছিস না? আমার সাথে?
হাহা! তুই আমার জীবনের একটা অংশ হয়ে গেছিস। বিয়ে আর কি এমন জিনিস..
এমন করিস না হৃদয়। তুই বুঝতে পারছিস না কিছুতেই কিছু হবে না। তোর আর আমার বন্ধুত্বটা সবসময়ের জন্য বেঁচে থাকুক, আমি সেটাই চাই।
হ্যাঁ আমিও সেটাই চাই।
তাহলে আর মন খারাপ করে থাকবি না, কেমন?
ঠিক আছে দেখা যাক। আচ্ছা দুপুরে খাওয়া হয়েছে তোর?
হ্যাঁ আলহামদুলিল্লাহ, হয়েছে। তুই খেয়েছিস?
হ্যাঁ আমিও খেয়েছি..

এরপর কিছুক্ষণ কথা চলতে থাকে আমাদের মধ্যে। আমার মনটা অল্প হলেও শান্ত হয়ে যায়।
এভাবে আবারো কন্টিনিউ হয়ে যায় আমাদের কথাবার্তা, একজনের প্রতি আরেকজনের কেয়ারনেস, যোগাযোগ ইত্যাদি…

এই সময়টাতে মূলত সবচেয়ে বেশি তার সাথে ভিডিও কলে কথা হত। কারণ, আমি আইসিটিতে দুর্বল ছিলাম। আর সে ছিল মাস্টার অব আইসিটি। আমাকে শিখা তো অনেককিছু। আর আমি তাকে শেখাতাম হিসাববিজ্ঞান ও ইংলিশ। এভাবে একে অপরের পরিপূরক হিসেবে আমরা অনেকদিন ছিলাম।

একদিন আমার আম্মুরা গ্রাম থেকে বেড়াতে এসেছেন আমার নানুর বাসায়। সে সুবাদে অনেক দিন পর সেখানে বেড়াতে যাওয়া হয়। নানুর বাসার বিল্ডিংয়ের ছাদে উঠে সুমাইয়ার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। দেখি, তার নাম্বার বন্ধ। কিছুক্ষণ পায়চারি করে চলে আসছিলাম..
এমন সময় একটা কল আসে আননোউন নাম্বার থেকে…

হ্যালো আসসালামু আলাইকুম। কে বলছেন?
আব্বু কেমন আছো তুমি?
জ্বী আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আপনি কে বলছেন?
তোমার সম্বন্ধে অনেক বলেছে সুমাইয়া। আমি ওর আম্মু বলতেছি
জ্বি! জ্বি!! জ্বী!!… আন্টি কেমন আছেন?
আল্লাহর রহমতে ভালো আছি বাবা।
জ্বী আন্টি… হঠাৎ! কিভাবে মনে করলেন আমার কথা আন্টি?
তোমাদেরতো বার্ষিক পরীক্ষা শেষ তাইনা?
জ্বী আন্টি শেষ হলো, এইত কিছুদিন হয়।
তুমি ফ্রি কখন আছো বলতে পারবা?
জ্বী আন্টি.. আমি তো সবসময়ই ফ্রি..
তাহলে আগামী রবিবার পটিয়া চলে আসো..
জ্বী আন্টি??
হ্যাঁ.. আসতে পারবা?
জ্বী  আন্টি অবশ্যই..
ঠিক আছে আব্বু তাহলে। আমি আর সুমাইয়া যাব তোমার সাথে দেখা করতে।
জ্বী আন্টি ঠিক আছে।

আমার সাথে কি হতে যাচ্ছে, আমি কিছুই জানিনা! পাঠকবৃন্দ, আপনারা দয়া করে আমাকে জানান.. কি হতে যাচ্ছে আসলে আমার সাথে.. দেখি আপনাদের প্রেডিকশন ঠিক কিনা..

কমেন্ট করে জানিয়ে দিন আপনার প্রেডিকশন.. দেখা হচ্ছে তাহলে পরবর্তী পর্বে.. অপেক্ষায় থাকুন। ধন্যবাদ সকলকে 💘💘

Related Posts

5 Comments

  1. ধন্যবাদ ভাইয়া। সাথেই থাকুন। নতুন নতুন আরও গল্প আসছে আপনাদের জন্য

Leave a Reply

Press OK to receive new updates from Firstsheba OK No