“শিক্ষকতা একটা মহৎ ও সম্মানজনক পেশা” এই বাক্যটি আমরা অকপটে শ্রদ্ধার সাথে স্বীকার করি এবং বিশ্বাস করি। একজন আদর্শ শিক্ষক তার আদর্শিক কারিগরি কৌশলে ভবিষ্যৎ জাতির কর্ণধার তৈরি করে থাকে। এককথায় একজন আদর্শ শিক্ষক হলো জাতি গঠনের কারিগর। তাহলে আমরা বুঝলাম জাতিকে সঠিক ভাবে পুনর্গঠিত করতে হলে অবশ্যই আমাদেরকে আদর্শ শিক্ষকের দ্বারস্থ হয়ে আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কে লালন পালন করতে হবে।
এখন আমরা যদি বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দিকে নজর দেয় তাহলে দেখতে পাবো আমাদের সন্তানেরা অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় মূল্যায়নে বা প্রাতিষ্ঠানিক মূল্যায়নে ঠিকই কাঙ্খিত জি পি এ বয়ে আনছে তবে মনুষ্যত্ব ও নৈতিকতার মূল্যায়নে তারা হচ্ছে সর্বোচ্চ পর্যায়ের ব্যর্থ।এই ব্যর্থতার প্রকট গ্লানি তাদের আচার -আচরনে, কাজে-কর্মে সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ পাচ্ছে। আমরা কি দেখছি না?? যদি না দেখি তাহলে আমরা চোখ থাকিতেও অন্ধ।
আমরা কী কখনোও এটা চিন্তা করি যে এর জন্য আসলে দায়ী কে বা কারা??
আমরা হয়তোবা দায়ী করি সন্তানকে অথবা সন্তানের মা বাবাকে আবার কখনও শিক্ষককে। আসলে কী এরাই দায়ী না আমাদের এই অবহেলিত শিক্ষাব্যবস্থা?? আমি মনে করি সন্তানের নীতি-নৈতিকতার অক্ষয় ঘটিয়েছে আমাদের এই অবহেলিত শিক্ষা ব্যবস্থা। আজকে আমরা শিক্ষকেরা যারা শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রদান করে থাকি তাদের অধিকাংশই প্রশিক্ষণ ছাড়াই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে সংশ্লিষ্ট হয়ে থাকি।
একটা সহজ উদাহরন দিলে সবার বোধগম্য হবে বিষয়টা। দেশের গুরুত্বপূর্ণ একটা ক্ষেত্র হলো সামরিক ক্ষেত্র যেটা দেশের জাতীয়তাকে সংরক্ষিত করার জন্য আন্তরিক চিত্তে প্রতিনিধিত্ব করে। একজন সামরিক ক্ষেত্রে কোন ব্যক্তি প্রশিক্ষণ ছাড়া যেমন সামরিক ক্ষেত্রে পরিচালনা করতে পারে না অর্থাৎ একজন ব্যক্তি প্রশিক্ষণকে অস্বীকার করে যেমন আর্মি, বি ডি আর, র্যাব ইত্যাদি হতে পারে না ঠিক তেমনি একজন শিক্ষক প্রশিক্ষণ ছাড়া তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারে না। নিজের শিক্ষকসুলভ আদর্শিক কৌশল ও অনুসরণযোগ্য বৈশিষ্ট্য দ্বারা শিক্ষার্থীদের মনকে আনন্দিত ও বিকশিত করতে পারে না। কেউ যদি বলে শিক্ষক তো সম্মান ও উচ্চতর সম্মান শ্রেণি পাশ করেই শিক্ষকতা করছে তাহলে আবার প্রশিক্ষণের প্রয়োজন কেন??
এমন প্রশ্নের উত্তরে আমি বলব সম্মান ও উচ্চতর সম্মান শ্রেণি পাস করে দুই জন বন্ধুর একজন ব্যাংকে যোগ দিল ব্যাংকার হিসেবে আর একজন শিক্ষা প্রতিষ্টানে যোগ দিল শিক্ষক হিসেবে। তাদের মধ্যে নিশ্চয়ই আদর্শিক পার্থক্য থাকা বাঞ্ছনীয়। আর সেই আদর্শিক পার্থক্যটা তৈরি করতে হয় সঠিক ও উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে। আরো একটি সহজ উদাহরণ দিলে সবার বিষয়টি বোধগম্য হবে।
আমরা জানি ভাত পাওয়া যায় ধান থেকে অপরপক্ষে আটা বা রুটিও পাওয়া যায় ধান থেকে অর্থাৎ একই উৎস ধান থেকে যথাক্রমে ভাত ও রুটি তৈরি করতে হলে নিশ্চয়ই এখানে ধানের উপর সঠিক পরিচর্যা বা মেহনতের প্রয়োজন হয়েছে।
তদ্রুপ একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে কয়েকজন বন্ধু একই সম্মান অর্জন করে বিভিন্ন ধরনের কাজকে তার পেশা হিসেবে বেছে নিতে হলে উক্ত পেশাকে সঠিকভাবে সম্পাদনের জন্য সঠিক প্রশিক্ষণ প্রয়োজন।
প্রশিক্ষণ ছাড়া কোন কাজে সফলতা অর্জন করা সম্ভব নয়। ব্যতিক্রম ক্ষেত্রে সফলতা অর্জিত হলেও তার স্বাদ অনেকক্ষেত্রে তিক্ত এবং বিতর্কিত হয়।
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় দেখতে পায় আমাদের শিক্ষার্থীরা ঠিকই জিপিএ ৫ অর্জন করছে কিন্তু মানুষের মত মানুষ কয়জন শিক্ষার্থী হচ্ছে?? আর এই শিক্ষার্থীদের কে মানুষের মত মানুষ তৈরি করতে হলে শিক্ষকের আগে শিক্ষকসূলভ আচারণ এবং শ্রেণি পাঠপ্রদান কৌশল বা পদ্ধতি শিখতে হবে।একজন প্রশিক্ষিত শিক্ষক তার শিক্ষক সুলভ আচরণ এবং পাঠপ্রদান কৌশলের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কে যথাক্রমে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন এবং একই সাথে মানসম্মত টেকসই জিপিএ এনে দিতে পারেন।
শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের নিকটে শিক্ষাব্যবস্থার এই গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন টুকু বাস্তবায়নের জোর দাবি করে এখানেই শেষ করলাম।।
(মো. ইদ্রিস আলী
সহকারী শিক্ষক ( বিজ্ঞান ),
এন কে এম হাই স্কুল এন্ড হোমস নরসিংদী)