সম্মানিত গ্রাহক,
আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন আপনারা? নিশ্চয়ই ভালো আছেন? আর ভালো থাকুন এটাই আমরা চাই। আজ আপনাদের জন্য নতুন একটি বিষয় নিয়ে হাজির হয়েছি। আপনারা থাম্বেল দেখেই এতক্ষণে বুঝতে পেরেছেন বিষয়টি কি?? বন্ধুরা বিষয়টি বর্তমান প্রজন্মের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক ছাত্র ছাত্রী বন্ধুদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আসুন দেখে নি কিভাবে বিষয়টির উপরে একটি অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করা যায়।
বন্ধুরা একটি বিষয় মনে রাখবেন পরীক্ষার খাতায় এবড়োথেবড়ো এবং উল্টো পাল্টা কতগুলো শব্দ জুড়ে খাতা ভরে লিখে আসলেই আপনি কখনোই ভালো মার্ক বা আশানুরূপ ফলাফল অর্জন করতে পারবেন না। এর জন্য দরকার গুনগতমানের কতগুল কোডিশন এবং সহজ সরল ও প্রাঞ্জল ভাষার কতগুলো শব্দ চয়ন। তো বন্ধুরা আসুন জেনে নেই উক্ত বিষয়ের উপর কি কোডিশন লেপন করা যায়।
ক। দুটি কথা
খ। আভিধানিক সংগা
গ। অন্তর্গত ব্যাখা
ঘ। অপূরনীয় ঋন
ঙ। তাৎপর্য
চ। উপসংহার।
বন্ধুরা বিস্তারিত আলোচনায় যাবার আগে কোডিশনগুলো সম্পর্কে একটু ভালোভাবে হৃদয়াংগম করতে হবে। তা হলে পড়ে কিংবা লিখে কখনোই এর প্রকৃত স্বাদ পাওয়া যাবে না। তো কোডিশনের প্রথমে বলা হয়েছে ”দুটি কথা”এর মানে হলো ভুমিকা অর্থাৎ বিষয়বস্তুর ভুমিকাই এখানে তুলে ধরতে হবে। দ্বিতীয় কোডিশনে বলা হয়েছে ”আভিধানিক অর্থ” এর অর্থ হলো যেকোনো বিষয়ের একটি প্রকৃত অর্থ থাকে যার সাথে অন্য কোন অর্থের তুলনা হবে না এটাই আভিধানিক অর্থ।
তৃতীয় কোডিশনে বলা হয়েছে ‘অন্তর্গত ব্যাখ্যা” অর্থাৎ বিষয়টি সম্পর্কে পূর্ণ ব্যাখা এখানে প্রদান করতে হবে। ৪র্থ কোডিশনে বলা হয়েছে অপূরনীয় ঋন এটাও বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে এবং অবশ্যই থাকতে হবে। ৫ম কোডিশনে বলা হয়েছে ‘তাৎপর্য ” অর্থাৎ আমারা কি শিখলাম, কতটুকুন শিখতে পারলাম তার বিবরনই এখানে দিতে হবে। শেষ পর্যায়ে ”উপসংহার” এটা তো আমরা সবাই জানি। তো বন্ধুরা এতক্ষণ জানলাম কিভাবে একটি অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করা যায়। এবার জানবো এর কাঠামোগুলো কিভাবে সাজানো যায়।
দুটি কথাঃ-
শব্দটি খুবই ছোট তবে এর ওজন এতটাই বেশি যে যা পরিমাপযোগ্য নয়, যার ভিতরে এমনি এক মধুর মিশ্রণ রয়েছে যা মুখে উচ্চারণ করার সংগে সংগেই প্রাণ ভরে যায়। যতবারই মুখে এই শব্দটি নেওয়া হয় ততবারই নিতে ইচ্ছে করে যেখানে কোন ক্লান্তি থাকে না। শব্দটি হলো ‘মা’। এর ভাব গাম্ভীর্য ও অন্তর্নিহীত তাৎপর্য এতটাই বেশী যে পৃথিবীর বড় বড় লেখক, পন্ডিত ও সাহিত্যিকের কলমের কালিও লেপন করতে গিয়ে থমকে দাড়ায়।
জন্ম সকল প্রাণীই দিতে পারে কিন্তু মা সকলে হতে পারে না। একটি শিশুকে ভ্রুন থেকে শুরু করে পূর্ণ বয়স্ক পর্যন্ত স্তরে নিয়ে আসতে মা যে ভূমিকা রাখে সেটাই মায়ের স্নেহ। এর পিছনে কোন খাদ, ফাঁক ও কোন স্বার্থ থাকে না আর থাকবেও না। আজ আমি মায়ের এই স্নেহ নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা করবো।
আভিধানিক সংগাঃ
মূলতো মায়ের স্নেহের কোন আবিধানিক অর্থ থাকে না। কারন এর মুল অর্থ বুঝার সাধ্য আমাদের কারোরই নেই। তবে সাহিত্যিকের সাধ্যের মধ্যে এর একটা সংগা দাড় করানো যায় আর তা হলো ভেজা ধুলোমাখা ও এঁদো গন্ধযুক্ত কাপড় জড়ানো মায়াভরা একখানা দেহ যখন তার সন্তানের দেহের দিকে হেলে কপালে হাত রেখে বলে কিরে এত রাত হলো এখনো ঘুমাসনি?? এই আদরমাখা কন্ঠ ও তার শরীরের গন্ধ এবং উঞ্চতা মিলে যে এক অনাবিল শান্তির পরশের সৃষ্টি হয় একেই মায়ের স্নেহ বলে। তবে মায়ের এই স্নেহ শুধু একই স্থানে সীমাবদ্ধ নয়, সংগার প্রয়োজনে শুধুমাত্র একটি ক্ষেত্রকেই ব্যবহার করা হয়েছে।
অন্তর্গত ব্যাখ্যাঃ-
মা পৃথিবী, মা মাটি, মা-ই ধরিত্রী, মা-ই জননী, মা-ই জগত, মা-ই সব। আসলেই তো একটু নিগুঢ়ভাবে চিন্তা করলে এগুলোই পাওয়া যাবে। বিভিন্ন ধর্মীয় শাস্ত্রে মাকে মাটির সাথে তুলনা করা হয়েছে। মাটি যেমন একটি বৃক্ষের অংকুরোদগম থেকে শুরু কর অন্তিম পর্যন্ত নিঃস্বার্থে, নির্বিঘ্নে ও কলুরবলদের ন্যায় সেবা দিয়ে আসতে থাকে একজন মাও ঠিক এভাবেই তার সন্তানকে নিঃস্বার্থে, নির্বিঘ্নে সেবা ও আদর ভালোবাসা দিয়ে বড় করে তোলে।
সন্তান কেঁদে উঠলে মা বুঝতে পারে ও ক্ষুধার্ত, মায়ের স্তনে যন্ত্রনা শুরু হলে মা বুঝতে পারে তার শিশুকে দুধ দিতে হবে। দশমাস দশদিন একটি শিশুকে মা শুধু পেটেই রাখে না তার ধীরে ধীরে বড় হয়ে ওঠার দায়িত্বটাও মা-ই নেন। মায়ের নাভীর সাথে তার একটি যোগসূত্র থাকায় মায়ের সাথে শিশুর কথা প্রাসংগীক সকল কার্যক্রম চলতে থাকে।
শিশু যখন ক্রন্দন করে একমাত্র মা ছাড়া সেই ক্রদন কেউই থামাতে পারেন না। এখন প্রশ্ন হলো এই কাজগুলো মা ছাড়া অন্য কাউকে দিয়ে করালে সম্ভব নয় কেন??? এর কারন খুঁজতে গিয়ে যে উত্তরটি পাওয়া যাবে সেটা হলো স্নেহ। এটাই মায়ের স্নেহ। একজন মমতাময়ী মা ই জানেন মমতার প্রয়োগ, একজন মমতাময়ী মায়ের এই মমতার প্রয়োগই হলো মায়ের স্নেহ। মায়ের এমন একটি বিষয় যা কোথাও কিনতে পাওয়া কিংবা বিক্রি করা যায় না।
উদাহরণঃ- আমার মা একজন গৃহিণী, স্কুল কলেজ জ্ঞান শুন্য আমার মায়ের বিদ্যালয়ে এমএ পাশ করার পরেও আমার ভাইবোনরা এখনো পড়ি। আমার জীবন বিদ্যালয়ের সবচেয় বড় শিক্ষক আমার মা। কিন্তু তাজ্জবের বিষয় হলো তার কাছে কোন একটা বিষয় যত সহজে শিখতে পারছি আর কোন শিক্ষকের কাছে এত তাড়াতাড়ি এত সহজে শিখতে পারছি না। তার কারন স্নেহ নামক যে পরিমান জাদু মায়ের আঁচলে লেগে থাকে সেই পরিমাণ স্নেহের ছিটেফোঁটাও কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের নামীদামী শিক্ষকের ঝুলিতেও নাই।
মা খাচ্ছে না কারন আমি খাইনি বলে।
মা ঘুমোচ্ছে না কারন আমি ঘুমাই নি বলে।
মা চিন্তিত কারন আমি ঘরে ফিরিনি বলে।
মায়ের প্রথম চাহনি আমার মুখে কারন আমার মুখ শুখনো বলে।
মা প্রার্থনারত কারন আমি অসুস্থ বলে।
মায়ের মুখে প্রচন্ড হাসি কারন আমি ঘরে ফিরছি বলে।
মায়ের চোখে জল টলমল করছে কারন আমার ছুটি শেষ বলে।
মায়ের মন ভালো নেই কারন কতদিন আমাকে দেখে না বলে।
মায়ের মন আনন্দে মেতেছে কারন আমি বাড়ি আসবো বলে।
এগুলোই মায়ের স্নেহ, এগুলোই একজন মায়ের বৈশিষ্ট্য। মায়ের এই স্নেহ পবিত্র ধর্মগ্রন্থ গীতা,বেদ, পুরান ও কোরানের মতই সত্য। এখানে বিন্দু পরিমানে খাদের লেশমাত্র নাই।
অপূরনীয় ঋনঃ
পৃথিবীতে সত্য বলতে যদি কোন শব্দ থেকে থাকে তাহলে মায়ের ঋন কখনো শোধ করা যায় না এই কথাটিই তাই। এর বাস্তব একটি উদাহরণও রয়েছে একদা কোন এক ব্যক্তি তার বৃদ্ধা মাকে বল্ল মা আমি তোমার সব ঋন শোধ করে দিবো। মা মুচকি হাসি দিয়ে বল্ল বোকা ছেলে। আসলেই ওই ব্যক্তি প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী তার মায়ের সকল ঋন শোধ করার চেষ্টা করলো, মা ছেলের ভালোবাসা ও দেখভালে বড়ই খুশি হতে লাগলো এবং একদিন মা মারা গেলো। ওই ব্যক্তি তার মৃত মায়ের কবর সংগে সংগে স্বর্ন দারা বাঁধাই করে দিলো এবং মনে মনে ভাবলো আজ বুঝি আমার মায়ের ঋন শোধ করতে পারলাম। যখনি এই কথা বল্ল আর সংগে সংগেই তার মায়ের সেই স্বর্নের কবর ভেঙে পড়লো। তো এটাই প্রমান হলো যে মায়ের ঋন কখনো শোধ করা যায় না, আর শোধ করতে যাওয়াও পাপের কাজ।
তাৎপর্যঃ
মা মানে জীবন, মা মানে অসুস্থ শরীরে সুস্থ হওয়ার ওসুধ, মা মানে প্রাণহীন শরীরে প্রান ফিরে পাওয়া। মায়ের স্নেহই জগতকে সৃষ্টির রহস্য উন্মোচনে সাহায্য করছে। মায়ের স্নেহ অতুলনীয় অর্থাৎ মায়ের স্নেহের সাথে কোন কিছুরই তুলনা চলে না। মা মানে সন্তানের শ্বাস প্রশ্বাস, মা মানেই ফুল বাগান, মা মানেই খাদ্য ভান্ডার, মা মানেই শান্তির কোল, মা মানেই সব কিছুই শেয়ার করার মাধ্যম, মা মানেই কান মলা খাওয়ার স্বাধ, মা মানেই খোকা ডাক শুনার অপেক্ষা, মা মানেই কিরে এখনো ঘুমাসনি? মা মানেই কিরে এখনো উঠিস নি? মা মানে নাস্তা না খেয়ে কোথাও যাসনে খোকা। সুতারং মায়ের স্নেহ জড়ানো নাই এমন কোন ক্ষেত্রই মা নামক এই শব্দের মধ্যে নাই।
উপসংহারঃ
পরিশেষে একটা কথা না বল্লেই নয় মা ও মায়ের স্নেহ শব্দ দুটির আলাদা কোন অর্থই নাই। দুটিই এক ও অভিন্ন। মা-ই জাতির সৃষ্টি, মা-ই সর্বং ফলেসু। সুতরাং মাকে কস্ট দেওয়া তো দুরের কথা মায়ের সাথে এমন কোন আচারন করা উচিৎ নয় যাতে মা কিঞ্চিৎ হলেও মনে আঘাত পায়। আই লাভ মাই মাদার। আমি আমার মাকে অনেক অনেক ভালোবাসি।
আসুন আমরা সবাই মাকে ভালোবাসি।
মাস্ক পরি, করোনা প্রটোকল মেনে চলি।
সবাই সুস্থ থাকি, গ্রাথর.কমের সংগেই থাকি।।