আত্মহত্যা একটি সামাজিক ব্যাধি। আমার দেখা কয়েকটি আত্মহত্যা এর কারন ও প্রতিকার নিয়ে লেখা সাজিয়েছি কয়েকটি পর্বের গল্প। প্রতিটি ঘটনাই সত্য ঘটনা অবলম্বনে। আজকে প্রথম পর্ব দিলাম। আগামীকে আমার পোস্ট গুলোতে চোখ রাখবেন। পরবর্তী পর্বগুলোও দিবো।
আত্মহত্যার ইতিকথা পর্ব (১)
বাবার একমাত্র মেয়ে মিলি স্বভাবতই একটু জেদি, খুব সুন্দরী না বলা গেলেও মন্দ বলা যায় না, গায়ের রঙটাও বেশ মিষ্টি, সবে মাত্র ক্লাস এইটে। এরই মধ্যে আয়নাতে নিজেকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে তার বেশ লাগে, গলির মোড়ে ছেলেগুলোর ডাব ডাব করে তাঁকিয়ে থাকা দেখে বুঝতে পারে সে দিন দিন বেশ সুন্দরী হয়ে উঠছে। মিলির প্রাইভেট টিউটর সুনীল।সুনীলের পেশাই বাড়ী বাড়ী টিউশনি করা। গ্রামের বাবা মা আর একগাদা ভাইবোন। নিজের পকেট খরচ আর পেটের খরচ দুটোই নিজেকেই সামলাতে হয় তাছাড়া মাঝে মাঝে বাবা মাকেও দিতে হয়। সুনীল শ্যামবর্ণের, লম্বা আর মোটামুটি হ্যান্ডসাম বলা যায়। তো, টিনএজ মিলিকে পড়াতে যায় সুনীল। সুনীলের বাচনভঙ্গী আর দৃষ্টির তীক্ষ্ণতা টিনএজ মিলিকে সহজেই আকৃষ্ট করে। প্রেমে পরে যায় মিলি সুনীলের। মিলির হৃদয় গহীনের ঝড় টের পেতে দেরী হয় না সুনীলের। না না করেও সুনীল ধরা দেয় মিলির চাহনীতে। পড়া কম প্রেম বেশী চলতে থাকে তাদের মধ্যে। এমনি করে ২টা বছর কেটে যায়। এরই মাঝে একে অপরের মনের পাশাপাশী শরীরকেও চেনা জানা হয়ে যায় একে অপরের। একসময় মিলি আবিষ্কার করে সে প্রেগনেন্ট। সুনীল ভয় পেয়ে যায়। মিলিদের বাসায় যাওয়া কমাতে শুরু করে। মিলিকে এ্যাবরসন করতে অনুরোধ করে। মিলি বিয়ে করতে চায়, সুনীল দারিদ্রতার দোহায় দেয়। মিলি ক্রেজি হয়ে উঠে। মিলিকে ঠেকানো যাচ্ছে না দেখে সুনীল ওদের বাসায় যাওয়া ছেড়ে দেয়। মিলির মায়ের এতদিনে টনক নড়ে, জানতে চায় সুনীলের কাছে কেন আসছে না পড়াতে। সঠিক উত্তর না পাওয়াতে মিলির জন্য অন্য টিউটর ঠিক করে। মিলি সুনীলের কাছে যায়। সুনীল নিজের বিয়ের দাওয়াতপত্র মিলির হাতে ধরিয়ে দেয়। আর মিলিকে ক্লিনিকে যেতে বলে।
মিলি বাসায় এসে ফ্যানের সাথে নিজের ওড়না জড়িয়ে আত্মহত্যা করে।
(আত্মহত্যার কারণ ও প্রতিকার)
আত্মহত্যা বিষয়টি আবেগ নিয়ে দেখা উচিত, না ঘৃণা নিয়ে, আমি জানি না। একটা মানুষ কতটা অসহায় হলে নিজেকে মেরে ফেলতে পারে, সেটা আসলে আমাদের কারোই জানা নেই। একটা মানুষ কতটা দুর্বল হলে লড়াই না করে মরে যায়, সেটাও কিন্তু আমরা জানি না। আত্মহত্যা কখনোই কাম্য নয়। এটা একটা সামাজিক ব্যাধি।অনাকাঙ্খিত এইসব ঘটনা এড়াতে সন্তানের সাথে বন্ধুত্ব করুন। সন্তানকে বিপথ থেকে আগলে রাখতে পারবেন।
আত্মহত্যা প্রতিরোধ করতে হলে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। শিশুদের বিকাশের সময় তাদের এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে, যাতে তারা সফলতার মতো ব্যর্থতাকে মেনে নিতে পারে। আত্মহত্যার উপকরণ, যেমন ঘুমের ওষুধ, কীটনাশকের সহজলভ্যতা কমাতে হবে। প্রেসক্রিপশন ছাড়া ঘুমের ওষুধ বিক্রি বন্ধ করতে হবে।
লেখা – রাখী দোজা