ফ্রিল্যান্সিং শব্দটা শুনলেই আমরা মনেকরি শুধু টাকা আর টাকা। যারা ফ্রিল্যান্সিং করে তারা লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করে। আর এই স্বপ্ন দেখে কিংবা এর পিছনে দৌড়াতে গিয়ে আমরা নিজেরাই নষ্ট করে ফেলেছি হয় লক্ষ লক্ষ টাকা। হ্যাঁ এটাই বাস্তবতা। তাহলে কি বলবেন ফ্রিল্যান্সিং সবই ভুয়া। না এ ধারণাটাও ঠিক না। আপনি যদি সফল ফ্রিল্যান্সার হতে চান তাহলে আজকের এই পোষ্টটি আপনার জন্য। অবশ্যই ধৈর্য্য সহকারে আপনাকে পড়তে হবে এবং বুঝতে হবে। আপনার যদি এই পোষ্টটি পড়ার মত ধৈর্য্য না থাকে তাহলে সোজাসুজি বলতে গেলে আপনার দ্বারা কখনই অনলাইন থেকে আর্ণি সম্ভব না কেননা এটা প্রচুর ধৈর্য্যের কাজ। যাইহোক চলুন তাহলে আপনাদেরকে নিয়ে যাই সেই স্বপ্নের ফ্রিল্যাসিং জগতে যা নিয়ে আমাদের এত জল্পনা কল্পনা।
ফ্রিল্যান্সিং আসলে কি?
অনেকে মনে করেন ইন্টারনেট থেকে আয় মানেই ফ্রিল্যান্সিং, বিষয়টা ওরকম না আবার অনেকটাই সামঞ্জস্য। যেমন কোন একসময় আমরা দেখেছি ক্লিক করে টাকা আয় করা যায় অর্থাৎ বিভিন্ন পিটিসি সাইট থেকে এ্যাড দেখে ভিডিও দেখে আয়। অনেকে এই চক্রে পড়ে অনেক অর্থও নষ্ট করেছেন। তাহলে এটাকে কি ফ্রিল্যান্সিং বলে। কখনই না এগুলো ফ্রিল্যান্সিং না। আপনি যদি কোন বিষয় বা কাজের উপর দক্ষ হয়ে থাকেন এবং সেই কাজ দ্বারা যদি আপনি অনলাইন থেকে আয় করতে পারেন তাহলে আপনি একজন ফ্রিল্যান্সার এবং সেটাই হবে ফ্রিল্যান্সিং। অর্থাাৎ আপনাকে অবশ্যই অনলাইন সম্পর্কিত যে কোন একটি কাজের উপরে জ্ঞান থাকতে হবে এবং আপনার নিজের একটি ব্যক্তিগত দক্ষতা থাকতে হবে। উধাহরণস্বরূপ আপনি যদি ভাল গান গাইতে পারেন তবে আপনিও একজন ফ্রিল্যান্সার হতে পারবেন। হয়তো বিষয়টা হাস্যকর মনে হতে পারে আপনার কাছে যে গান গেয়ে ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে সম্ভব। হ্যাঁ সেটাও সম্ভব আর আমি আজ সে বিষয় নিয়েই আলোচনা করতে চলেছি। আমি আপনাদেরকে দেখাবো কি কি উপায়ে এবং কি কি দক্ষতা থাকলে আপনি ফ্রিল্যানিং করতে পারবেন। সেইসব সাইট সম্পর্কে আমি আপনাদের ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করবো আশাকরি আপনাদের সকল ভূল ধারণা দূর হবে এবং চেষ্টা করে আপনিও হয়ে যেতে পারবেন সফল ফ্রিল্যান্সার। চলুন তবে শুরু করা যাক।
ফ্রিল্যান্স মার্কপ্লেসঃ –
আমরা যেমন জব করি অফিসে এই মার্কপ্লেসগুলোও তেমনই। এখানে বিদেশি বায়াররা বিভিন্ন কাজের অর্ডার দিয়ে থাকেন বিভিন্ন মূল্যের। আপনি যদি ঐ বিষয়গুলোর যে কোন একটিতে দক্ষ হয়ে থাকেন তাহলে বিট করার মাধ্যমে বায়ারের কাজ করে দিয়ে তার মাধ্যমে আপনি ভাল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। যেমন আপনি কিছুই জানেন না শুধুমাত্র Ms Word, Excel এগুলো পারেন তাতেও আপনার জন্য জব রয়েছে এই মার্কপ্লেসে যেমন, Data Entry, Copyright, Content Writing ইত্যাদি। এ সকল মার্কপ্লেসে ১০০ বা তারও বেশি ধরণের কাজ রয়েছে। আপনি যে কোন একটি কাজ খুব ভাল করে শিখুন আপনি নিশ্চিত এখান থেকে সফলতা পাবে। বাংলাদেশের অনেকেই আছেন যারা Web design & Development, Graphics Design, SEO, ইত্যাদি বিভিন্ন কাজ করে মাসে লক্ষ টাকার উপরে আয় করছেন। তারা যদি পারে আপনি আমি কেন পারবো না। চেষ্টা করলে সফলতা আসবেই।
সোসাল মিডিয়াঃ-
আমরা সারাদিন ফেসবুক, ইউটিউব নিয়ে পড়ে থাকি। কিন্তু আপনি কি জানেন সেখান থেকে ভাল পরিমাণ অর্থ আয় করা সম্ভব। হ্যাঁ সেই সুযোগও রয়েছে আপনার জন্য যদি আপনার ইচ্ছাশক্তি থাকে। ফেসুবক মনিটাইজেশন চালু করেছে। আপনার যদি একটি ফেসুবক পেজ থাকে এবং সেটা যদি জনপ্রিয় করে তুলতে পারেন তবে পেজে ভিডিও আপলোড করে আপনি ভাল পরিমাণ আয় করতে পারবেন। ঠিক তেমনি আপনি সুন্দর সুন্দর ভিডিও তৈরি করে ইউটিউবে আপলোড করেও আয় করতে পারবেন। একটু আগেই বলেছিলাম আপনি যদি গান গাইতে পারেন তবেও আপনি ফ্রিল্যান্সিং করতে পারবেন। হ্যাঁ আপনি ভাল গান গাইতে পারলে সেটা আপনি ভিডিও করুন তারপর ইউটিউব এবং ফেসবুক পেজে আপলোড করুন। পপুলার হতে পারলে আপনি সেখান থেকে ভাল আয় করতে পারবেন, শুধু গান নয় কবিতা আবৃতি, ভাল কৌতুক উপস্থাপন কিংবা আপনি যে কাজই পারেন সেটাই ভিডিও করুন শেয়ার করুন। এমন অনেকেই আছেন যারা ইউটিউবে আয় করে সফল।
ই-কমার্সঃ-
ই-কমার্স বলতে গেলে মূলত ইলেকট্রনিক্স মার্কেট বলা যায়। যেমন আমরা দেখি দারাজ ডট কম কিংবা অনেক সাইট যারা অনলাইনে বিভিন্ন পন্য কেনাবেচা করে। আপনি নিজে চাইলেও এমন একটি সাইট তৈরি করে আপনার নিজের বিজনেস শুরু করতে পারেন কিংবা কয়েকজন মিলে শেয়ারেও শুরু করতে পারেন। তবে যেহেতু এটা একটা বিজনেস সেহেতু আপনাকে অবশ্যই এ সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে এবং বিনিয়োগ করতে হবে। আপনি যদি সাইট তৈরি নাও করেন আপনি আপনার ফেসবুক পেজের মাধ্যমেও আপানর প্রোডাক্ট বিক্রি করতে পারবেন। আমি নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে এমনও দেখেছি একজন নারী ঘরে বিভিন্ন ধরণের মজাদার খাবার তৈরি করে তা অনলাইনে সেল করে থাকেন এবং পার্সেল ও হোম ডেলিভারি দিয়ে থাকেন। একজন নারী ঘরে বসেই যদি সফল হতে পারেন তবে আপনি আমি কেন পারবো না। দরকার শুধু ইচ্ছাশক্তি আর কঠোর পরিশ্রম।
ছবি ও ভিডিওঃ-
অনেকে আছেন ছবি তুলতে বা আঁকতে পছন্দ করেন। অনেকে সখের বসেও ফটোগ্রাফি করেন। কিন্তু আপনার এই ফটোগ্রাফি থেকে যদি ভাল পরিমাণ অর্থ আয় হয় সেটা নিশ্চই আপনার জন্য আনন্দের ব্যাপার হবে। হ্যাঁ আপনি আপনার ক্যামেরা দিয়ে তোলা সুন্দর সুন্দর ছবিগুলোকে বিক্রি করতে পারেন অনলাইন মার্কপ্লেসে। আপনার ছবি যতবার বিক্রি হবে ততবার আপনার আয় হবে। অনলাইনে এমন অনেক সাইট আছে যারা ছবি বিক্রয় করে থাকে। আপনার ছবিটি সেখানে আপলোড করলে সেটা যতবার বিক্রি হবে তার থেকে নিদৃষ্ট একটা কমিশন রেখে বাকি টাকা তারা আপনাকে দিবে। এর মধ্যে সবথেকে জনপ্রিয় সাইট হচ্ছে Sutterstoke.com যেখানে আপনি ফ্রিতে এ্যাকাউন্ট খুলে আপনার ছবিগুলো আপলোড দিতে পারবেন। আপনি যদি ফটোগ্রাফি ভাল পারেন তাহলে আজই শুরু করে দিন।
লিখালিখি করেঃ-
অনেকে আছেন লিখালিখি করতে পছন্দ করেন। তাহলে আপনিও হতে পারেন ফ্রিল্যান্সার। এমন অনেক সাইট আছে যেখানে আপনার লেখা প্রকাশের মাধ্যমে আপনি আয় করতে পারবেন। যেমন এই সাইটি যেখানে আপনারা এখন এই আর্টিকেলটি পড়ছেন। এখানেও সুন্দর সুন্দর পোষ্ট করে আপনারা ভাল পরিমাণ আয় করতে হবে। তবে কারো লেখা কপি করা যাবে না। নিজের আইডিয়া থেকে লিখতে হবে। আপনি যদি মনে করেন যে আপনি অন্যের সাইটে কেন লিখবেন। তাহলে আপনি নিজেই নিজের সাইট তৈরি করে নিতে পারেন। আবার ব্লগ কিংবা ওয়ার্ডপ্রেসে ফ্রিতেই সাইট তৈরি করা যায় একটু কাস্টোমাইজেশন সম্পর্কে জ্ঞান থাকলেই। আপনি একটা ব্লগ সাইট খুলে তাতে গুগল এ্যাডসেন্স এর এ্যাড বসিয়েও ভাল আয় করতে পারবেন। যদি আপনি এ বিষয়ে দক্ষ হন তবে সময় নষ্ট না করে আজই শুরু করুন।
বড়ভাইঃ-
এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনি হয়তো কিছু কাজ জানেন কিন্ত কাজ পাচ্ছেন না বা ভাল গাইডলাইনের অভাব। সেক্ষেত্রে আপনার পরিচিত কোন বড়ভাই বা এমন কেউ থাকে যারা ফ্রিল্যান্সিং করেন এবং সফলতা অর্জন করেছেন। তাহলে তাদের থেকে হেল্প নিন। প্রয়োজনে তাদের থেকে ২-৪ টি কাজ নিয়ে ফ্রিতে করে দিন তাতে করে আপনি আসলে সেই কাজের জন্য দক্ষ কিনা তা যাচাই হয়ে যাবে। এবং আপনার কাজের দক্ষতা দেখে একসময় তারাই আপনাকে হেল্প করবে। তাদের মাধ্যমেই পেয়ে যেতে পারেন ভাল ভাল কাজ।
আমি যেগুলো বললাম এগুলো বাদেও অনলাইনে আয়ের হাজার রকমের পথ আছে বলে শেষ করা যাবে না। এবার আসি মূল কথায়। অনেকে এগুলো জানেন কিন্তু চেষ্টা করে সফল হতে পারেননি তাই ছেড়ে দিয়েছেন। আসলে এটা আপনার ব্যর্থতা। আপনি নিজেই চিন্তা করুন একটা ভাল জব পেতে আমাদের গ্রাজুয়েশন শেষ করতে হয়। জীবনের অনেকগুলো বছর ব্যায় করতে হয়। তারপরও ইন্টারভিউ দিয়ে সহজে জব পাওয়া যায় না। শিক্ষাক্ষেত্রে যদি আপনি জীবনের ২৫ বছর ব্যায় করেন তারপর চাকরির জন্য ঘুরতে হয় আরো ২-৫ বছর তাহলে আপনি কি করে ভাবলেন যে আপনি মাত্র ২-৪ মাসে সফল ফ্রিল্যান্সার হবেন। এজন্য আগেই বলেছিলাম যাদের এই পোষ্টটি পড়ার ধৈর্য্য নেই তাদের পক্ষে ফ্রিল্যান্সার হওয়া সম্ভব না। আপনাকে প্রচুর ধৈর্য্যশীল হতে হবে। কঠোর পরিশ্রমী হতে হবে। তবেই আপনি সফল হবেন। শুধু ফ্রিল্যান্সিং নয় এটা সকল ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। আপনি ২-৩ বছর লেগে থাকেন আজথেকে। তারপর দেখবেন আপনার পজিশনটা কোথায় যায়। যারা আজ সফল তাদের কাছেই জিজ্ঞেস করেন তারা কতটা পরিশ্রম করে আজ এই পর্যন্ত এসেছে।
সুতরাং আপনার মানষিকতাকে ঠিক করুন এবং সেইভাবে প্রস্তুতি নিন। আপনিও হবেন সফল ফ্রিল্যান্সার। আর হ্যাঁ যারা এ্যাড দেখে আয়, ক্লিক করে আয়, প্রতিদিন ১০০ ডলার ইত্যাদি পোষ্ট কিংবা ইউটিউব ভিডিও দেখে এগুলোর পিছনে ছুটছেন তারা সাবধান হোন। এগুলোতে আপনার কোন আয়ের সম্ভাবনা নেই কিংবা সাময়িক কিছু হলেও তা কখনও চিরস্থায়ী হয় না। তাই কাজ শিখুন। যেটা শিখবেন মনযোগ দিয়ে শিখুন। ইংশা আল্লাহ সফল হবেন। আশাকরি আমার লেখাটি সকলের উপকারে আসবে। কেউ যদি নূন্যতম উপকার পেয়ে থাকেন তাহলেই আমার এই লেখার স্বার্থকতা।