এমন ৫ জন লোক যারা প্রমান করে দেখিয়েছে যে সফলতায় হচ্ছে সবচেয়ে বড় প্রতিশোধ।
নাম্বার ১। স্টিভ জবস– অনেকেই হয়তো জানেন স্টিভ জবস’কে তার নিজের হাতে তৈরি করা কোম্পানি অ্যাপেল থেকেই বহিশকার করে দেয়া হচেছিল। স্টিভ জবসের এই পরিচিত চেহারা আমরা কে না চিনি। বর্তমানে বিশ্বের মোবাইল জগৎ যে শাসন করছে সেই কম্পানির নাম হচ্ছে অ্যাপেল, অভিজাত্য ও স্থায়িত্বের অ্যাপেল এর জুরি মেলা ভার। স্টিভ জবস নিজের হাতে অত্যন্ত যত্ন করে তৈতি করেছিলেন এই অ্যাপেল কোম্পানিটি। একদিন স্টিভ জবস পেপসি কোম্পানির প্রবন্ধ জন্ স্ক্যালিকে নিয়োগ দিয়েছিলেন। কিন্তু অত্যন্ত অকৃতজ্ঞের মতন এই লোকটি একদিন বোর্ড অফ ডিরেক্টরদের সামেন প্রমাণ করেছিলেন যে, এই কোম্পানিতে স্টিভ জবসের এখন আর কোন প্রয়োজন নেই। আর ফলশ্রুতিতে স্টিভ জবসকে তার নিজের তৈরি কোম্পানি থেকে বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু অদম্য স্টিভ জবস এখানেই থেমে যায়নি। অ্যাপেল থেকে বের হয়ে নেক্সট নামের একটি কোম্পানি দার করায়। অত্যন্ত সম্ভাবনাময় এই কোম্পানি নেক্সটকে একসময় অ্যাপেল কিনে নেয়। আর এরই মাধ্যমে এপেল কোম্পানির সাথে স্টিভ জবস পুনরায় যুক্ত হয়ে যায় এবং ধীরে ধীরে অ্যাপেল কোম্পানির সমস্ত ক্ষমতার অধীকারি হয়ে ওঠেন এই লোকটি। আর এর পরে যা হয়েছিল তা তো ইতিহাস। আজ অ্যাপলকে তিনি কোথায় এনে দাঁড় করিয়েছেন তাতো বিশ্ববাসী দেখেছেই। এভাবেই স্টিভ জবস তার সেই অপমানের উপযুক্ত জবাব দিতে পেরেছিল তার এই ঈর্ষণীয় সফলতার মধ্য দিয়ে।
নাম্বার ২/ স্টিফেন স্পিলবার্গ– হলিউডের অত্যন্ত জনপ্রিয়ু মুভি জুরাসিক পার্ক যদি আপনি দেখে থাকেন’ আর যদি বলেন আপনি স্পিলবার্গ কে চেনেন না আমি মোটেও বিশ্বাস করব না। অসাধারণ এবং যুগের সেরা এই ডিরেক্টরের সমকক্ষ কাউকে পাওয়া হয়তো দুস্কর হয়ে উঠেতে পারে। তার ফিল্ম প্রোডাকশন হাউজ টাকায় যদি হিসাব করা হয়’ তাহলে হয়তো ৭০০০ কোটি ডলারের উপর হয়ে থাকবে। তবে তার শুরুর জীবন যদি শোনেন অবাক হয়ে যাবেন আপনিও যখন স্টভেন স্পিলবার্গ সিনেমা তৈরি করার কথা ভাবছিলেন আর সেই মোতাবেক তিনি সিনেমা তৈরীর ওপরে পড়াশোনা করতে চাইছিলেন। কিন্তু ইউনিভার্সিটি অফ সাউদার্ন ক্যালিফর্নিয়া স্কুল অফ সিনেমেটিক আর্ট তাকে এডমিশন নিতে বাধা দেয় এই বলে যে, তার শিক্ষাগত যোগ্যতা একেবারে এভারেজ লেভেলের আর এখানে এভারেজ ছাত্রদের কোন জায়গা নেই। সেখান থেকে বহিস্কার হয়েও স্টভেন স্পিলবার্গ তৈরি করে JAWS –এর মতন বিশ্ব বিখ্যাত মুভি তারপর আর তাকে পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি। সবচেয়ে মজার ব্যাপার কি জানেন? এর কিছু বছর পরেই তাকে সেই ইউনিভার্সিটি সম্মান সূচক ডিগ্রী দেয়। কিন্তু স্টিফেন স্পিলবার্গও করেছিল এক অদ্ভুত আবদার। সে দাবি করেছিল তার সেই ডিগ্রির সার্টিফিকেট ঐ লোকের স্বাক্ষর দরকার যে তাকে এই ইউনিভার্সিটি থেকে বের করে দিয়েছিল। এবং সত্যি সত্যি তাই করা হয়েছিল। হয়তো একেই বলে ওস্তাদের মার শেষ রাতে।
নাম্বার ৩/ ওয়াল্ট ডিজনি- সন্দর এই কিউট ইদুরকে কে না চিনে? একসময় আমাদের সবচেয়ে প্রিয় কার্টুন এর তালিকায় ছিল মিকি মাউস নামের এই কার্টুন। এই লিজেন্ডারি ক্যারেক্টারটা তৈরি করেছিলেন ওয়াল্ট ডিজনি। জীবনের শুরুর দিকে তিনি নিউজ পেপারের জন্য কাজ করতেন । কিন্তু জেনে অবাক হবেন যে, সেই জিউজ পেপার কোম্পানিটি ওয়াল্ট ডিজনি কে রিতিমত ছুড়ে ফেলে দেয় এই বলে যে, তার ভেতরে একেবারেই কোন ধরনের ক্রিয়েটিভিটি নেই। এরপর সে অনেকগুলো ব্যবসায়ই দাঁড় করানোর চেষ্টা করে কিন্তু কোনটাই সঠিক ভাবে দাঁড় করাতে পারেনী কখনো। তার বেশ কিছু অসাধারণ অ্যানিমেশন সৃষ্টি করার দক্ষতা দেখে মোশন অ্যানিমেশন কোম্পানি তাকে চাকরিতে নিযুক্ত করে। আর সেখান থেকে যাত্রা শুরু হয় মিকি মাউস নামের এই ক্যারেকটারের। এর পর তাকে আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি একের পর এক রেকর্ড করেছেন তিনি। তিনি তার সাড়া জীবনের ২৬ টি অস্কার অ্যাওয়ার্ড জিতে নিয়েছিলেন। সত্যি কথা বলতে কি এত গুলো অ্যাওয়ার্ড একজন মানুষের জেতাও একটি দুর্লভ রেকর্ড। শুনে অবাক হবেন যে, তিনি তার পরে তার প্রতিশোধ কিভাবে নিয়েছিলেন। তিনি শুধু ওই নিউজ পেপার কোম্পানি টিকে কিনে নেননী সাথে কিনে নিয়েছিল সেই নিউজ পেপার কোম্পানির মাদার কম্পানিটিও।
নাম্বার ৪/ রতন টাটা- ভারতে বসবাসকারী ধনকুবের রতন টাটাকে বিশ্বের প্রায় সবাই চেনে। ১৯৯৯ সালে রতন টাটা, টাটা কোম্পানির কিছু অংশকে বিক্রি করার ইচ্ছা প্রকাশ করে এবং এর জন্য তিনি বিশ্যবিখ্যাত ফোর্ড কোম্পানি কে আহ্বান জানায়। কিন্তু ফোর্ড কোম্পানি সোজাসাপ্টা বলে দেয়, এতে আমাদের কোন লাভ নেই তারপরও যদি আমাদেরকে কিনতে হয় তাহলে সেটা হবে আপনাকে এহসান করা আর সে সময় এখন আমাদের নেই। এর ঠিক নয় বছর পর ২০০৮ –এ ফোর্ড কোম্পানি প্রায় দেউলিয়া হতে বসেছিল উপায়ন্ত না পেয়ে তাদের ল্যান্ড রোভার এবং জাগুয়ার গাড়িটি প্যাটেন বিক্রি করতে চাইছিলো। রতন টাটা সেই গাড়ী দুটি সত্ত ফোর্ড কোম্পানির কাছ থেকে ২.৩ বিনিয়ন ডলার দিয়ে কিনে নেয়। কিনে নেয়ার পর ফোর্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপক কি বলেছিল জানেন? বলেছিল আপনি আমাদের উপর বড় একটি এহসান করলেন। যেই কোম্পানি একদিন বলেছিল আপনাকে কোন ধরনের সাহায্য আমরা করতে চাই না। সেই কোম্পানিকেই পরবর্তীতে বলতে’ হয়েছিল আপনি আমাদের উপর অনেক বর এহসান করলেন এর চেয়ে বড় প্রতিশোধ আত কি হতে পারে?
নাম্বার ৫/ জান কোউম এবং ব্রাইন এক্টন- জান কোউম এবং ব্রাইন এক্টন ইয়াহু কোম্পানিতে চাকরি করতেন। ২০০৭ সালে ইয়াহুর চাকরিটি ছেড়ে দেন। পরে ২০০৮ সালে তারা দুজনেই ইয়হু এবং টুইটারে চাকরির জন্য আবেদন করে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত দ’জনকেই রিজেক্ট করে দেয়া হয়। এরপর তারা দুজনে মিলে একটি মেসেঞ্জার তৈরি করেছিল যার নাম ছিল হোয়াটসঅ্যাপ। এই মেসেঞ্জার টি অল্পদিনের মধ্যেই মানুষের মন জয় করে নেয়। এতই জনপ্রিয় হয় যে ফেসবুক তা পরবর্তীতে ১৯ বিলিয়ন ডলার দিয়ে কিনে নেয়। যে কোম্পানিটি একদিন তাদেকে চাকরি না দিয়ে বের করে দিয়েছিল সেই কোম্পানিকেই এত বড় রকমের একটি মূল্য দিয়ে তাদের কাছ থেকে সফটওয়্যার কিনে নিতে হয়েছিল। এটা কি তাদের কম বড় প্রতিশোধ বলে আপনি মনে করছেন।
প্রিয় পাঠক সফলতার মাধ্যমে প্রতিশোধ নেওয়া এই ঘটনাগুলোর মধ্যে কোনটি আপনার ভালো লেগেছে তা আমাকে জানান এতে করে আমি উৎসাহিত হব এমন আরও সফলতার গল্প আপনাদেরকে উপহার দিতে । ধন্যবাদ।
আর যদি মনে হয় এর মাধ্যমে আপনি বা আপনার পরিচিতজনদের কিছু খিক্ষার বিষয় আছে তাহলে শেয়ার করে তাকে জানিয়ে দিতে পারেন। ধন্যবাদ আবারো।