মহাবন আমাজনের কথা নিশ্চয়ই অনেকে শুনে থাকবেন। আমাজন অনেক প্রকৃতি প্রেমিদের ভ্রমনের জন্য নি:সন্দেহে একটি স্বপ্নের জায়গা। এটি পৃথিবীর আকর্ষনীয় জায়গাগুলোর মধ্যে একটি। কিন্ত এটি আবার অনেক বিপজ্জনক জায়গাও বটে। এখানে অনেক বিপজ্জনক প্রানি আছে তারা আপনাকে কিছু বুঝে ওঠার আগেই মেরে দিতে পারে। অর্থাৎ, আপনি মৃত্যু শঙ্কায় পড়ে যেতে পারেন। আপনি যদি কখনো আমাজনে ভ্রমনে যান তবে আপনাকে অনেক বেশি সতর্কতার পরিচয় দিতে হবে। আজ আমি আপনাদের সাথে আমাজন রেইন ফরেস্টের এমন কিছু বিপজ্জনক প্রানিদের নিয়ে আলোচনা করবো। যাদের সম্পর্কে জানা ভ্রমন পিপাসুদের খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি নিচ থেকে এমন ছয়টি প্রানি সম্পর্কে আলোচনা করছি।
৬. ইলেকট্রিক ইয়েল: এটি মানুষের জন্য খুব বিপজ্জনক। এটি আমাজনের জলে বাস করে। এবং এই প্রানিটি বৈদ্যুতিক শক দিতে পারে। এটি প্রায় ৬০০ ভোল্টের শক দিতে সক্ষম। এরা আমাজনের ফ্রেশ পানির কর্দমাক্ত তলায় বসবাস করে। কিন্ত তারা বাতাসের প্রয়োজনে ঘন ঘন পানির উপরে উঠে আসে। এদের দ্বারা সৃষ্ট বৈদ্যুতিক শক যে কোনো মানুষের জন্য হার্ট এ্যাটাকের কারন হয়ে দাড়াতে পারে। এই শক মারার দক্ষতাটি তাদের স্তন্যপায়ী ও অমেরুদন্ডী প্রানি শিকারের জন্য বেশ সহায়ক। চিড়িয়াখানাগুলোতে এসব ইলেকট্রিক ইয়েলকে তেমন দেখা য়ায় না। কারন, এদের অভ্যন্তরীন শক সিস্টেমের কারনে এদেরকে ধরা যায় না। অন্যদিকে সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে তাদের প্রজনন প্রক্রিয়া। শুষ্ক মৌসুমে পুরুষ প্রজাতিরা তাদের তাদের লালা দিয়ে বাসা তৈরি করে এবং স্ত্রী প্রজাতিরা সেই বাসায় ডিম রাখে। একটি বাসার ডিমের জটলাতে সতেরো হাজার পর্যন্ত ইলেকট্রিেক ইয়েল জন্ম নিতে পারে। তাই এখন থেকে সাবধানে আমাজনের নদী বা জলাশয়ে পা রাখবেন।
৫. জাগোয়ার: এক বিশিষ্ট প্রজাতির বিড়াল এই জাগোয়ার। এরা খুবই ভয়ংকর শিকারী। এরা সাতাশি ধরনের প্রানি শিকার করে থাকে। যেমন হরিন থেকে শুরু করে ইদুর সবই যেন এদের সুস্বাদু খাবার। এরা খুবই সুযোগসন্ধানী এদের শিকারের জন্য এবং মুহুর্তেই যে কোনো মানুষকেই মেরে ফেলবে যদি সামনে পায়। এরা বাঘের মত সাতার কাটতেও পছন্দ করে তাই ভাববেন না যে নৌকা দিয়ে দূরে সরে যাবেন। যেখানেই যান না কেন এরা আপনাকে ফলো করবে। এরা রেইন ফরেস্টে বসবাস করতে পছন্দ করে। পশ্চিম গোলার্ধে সবচেয়ে বড় বিড়াল এরা পুরো পৃথিবীতে। শুধুমাত্র বাঘ ও সিংহরা এদের থেকে বড়। যদিও এরা বড় নির্দয় ও নির্মম তারপরও দেখতে খুব সুন্দর। এদের বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা উচিত।
৪. ব্ল্যাক কেইম্যান: কখনো কুমিরের দিকে তাকিয়ে হাসতে যাবেন না। অথবা একই কাজ কুমিরের কাজিন ব্ল্যাক কেইম্যানদের দিকে তাকিয়েও। বিশেষকরে যখন এরা সাইজে বড় থাকবে অথবা পাজি থাকবে। গাঢ় রঙের চামড়ার কারনে প্রকৃতির সাথে মিশে যেতে পারে বলে এরা খুব সহজে শিকার করতে পারে। এদের প্রধান খাবার হচ্ছে পিরহানা মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। কিন্ত এরা হরিন, কেপিবানা ও এ্যানাকোন্ডা সাপের মত বিষধর সাপকেও শিকার করে থাকে।
৩. এ্যানাকোন্ডা: আপনি যদি সাপ ভয় পান তাহলে আপনার আমাজন ভ্রমনে না যাওয়াই ভালো কারন এ্যানাকোন্ডা আসলেই অনেক বড় সাপ। এদের বিকাশ কখনো বন্ধ হয় না। এরা ওজনে ৪০ টন ও লম্বায় ২১ ফিট পর্যন্ত বেড়ে উঠতে পারে। সুখবর হচ্ছে এদের কোনো বিষ নেই। এরা ভিন্ন উপায়ে শিকার করে থাকে। এরা সাধারনত এদের শিকারকে পেচিয়ে জোরে চেপে ধরে রাখে যতক্ষন পর্যন্ত শিকারটি মারা না যায়। তারপর এরা না চাবিয়ে আস্তে আস্তে গিলে ফেলে। তাই হজম হতে এক সপ্তাহ পর্যন্ত লেগে থাকে। এরা খুব ঘন ঘন খায় না তবে যখন তাদের ক্ষুধা লাগবে কেউই নিরাপদ নয় এমনকি মানুষও না।
২. পিরানহা: বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে পিরানহাকে যতটা বিপজ্জনক প্রানি হিসেবে উপস্থাপন করা হয় এরা ততটা বিপজ্জনক নয়। এরা অধিকাংশ সময় ময়লা আবর্জনায় থাকে তাই এরা বিভিন্ন মৃত মাছকে খাবার হিসেবে খেয়ে থাকে। এরা মানুষ অথবা বড় প্রানিকে আঘাত প্রায় করে না বললেই চলে। কিন্ত তারা মানুষকেও আক্রমন করতে পারে যদি তারা ক্ষুধার্ত থাকে। পানিতে রক্তপাতও এক ধরনের সিগন্যাগ তাদের জন্য যে, তাদের খাবার রেডি। তাই যে নদীতে পিরানহা রয়েছে সে নদীতে কোনো প্রকার কাটা ছাড়া নিয়া নামা উচিত নয়। এদের ব্লেডের মত ধারালো দাত ও শক্ত চোয়োলের মাধ্যমে হয়তো আপনাকে গিলতে পারবে না তবে সাংঘাতিক জখম করতে পারবে।
১. মসা: এত শত শক্তিশালী প্রানি থাকার সত্ত্বেও আজ ভয়ংকর প্রানি হিসেবে পুরষ্কার পাওয়া উচিত মসার। মসার সাথে আমরা সবাই পরিচিত। এরা ভয়ংকর হওয়ার প্রধান কারন হচ্ছে এরা মরন ব্যাধি ভাইরাস বহন করে থাকে। তাই এরা রেইন ফরেস্টের সবচেয়ে বিপজ্জনক প্রানি। তার মানে হলো এরা যদি আপনাকে কামড়ে দেয় তাহলে সেই ভাইরাস সরাসরি রক্তের মাধ্যমে অাপনার দেহে স্থানান্তরিত হয়ে যাবে। এবং সেই ভাইরাসের কারনে আপনার মৃত্যুও হতে পারে। সবচেয়ে খারাপ খবরটি হচ্ছে এরা দিন দিন খুব চালাক হয়ে যাচ্ছে।
আপনারা কেউ যদি সত্যিই আমাজনে যান তাহলে অবশ্যই জাগোয়ারদের কেউ কাছে যাবেন না। কেইম্যানদের এড়িয়ে চলুন এবং গুরুত্বপূর্ণভাবে মশারী সাথে রাখুন।