দৈনন্দিন জীবনে কাজের ব্যস্ততার জন্য আমরা অনেকেই সুরের যত্ন নিতে পারি না বা সময় পায় না। যেটুকু সময় পায় তাও গুরুত্ব সহকারে নেই না খামখেয়ালি করে দিন পার হয়ে যায় কিন্তু চুলের যত্ন আর নেয়া হয় না। আমার মত যারা একটু অসল টাইপের মাথায় প্যাক লাগিয়ে চুলের যত্ন নিতে ইচ্ছে করে না, মূলত তাদের শেষ সম্বল হল তেল। আমরা কম বেশি সবাই তেল ব্যবহার করে থাকি। তেল মাথার চুলের পুষ্টি যোগায় এবং চুলকে মজবুত করতে সাহায্য করে। সে রকম দারুন একটি তেল নিয়ে কথা বলবো আজ সেটি হচ্ছে অলিভ অয়েল। আজকে আমি আসল অলিভ অয়েল চেনার উপায় গুলো আপনাদের সামনে তুলে ধরবো।
আমরা বাজার থেকে কম দামে হুটহাট করে যেকোন তেল কিনে এনে চুলে ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু এসব তেল গুলো চুলের জন্য সেইরকম কোন উপহারে আসে না উল্টো চুল পড়ে যায়। ফলে টাকা পয়সা অযথা নষ্ট হয় এবং চুলের ও মহা ক্ষতি করে ফেলি। তাই আপনার চুলগুলো যদি যত্ন নিতে চান আমি একটাই পরামর্শ দেবো সেটা হচ্ছে আসল অলিভ অয়েল ব্যবহার করুন। এই খাঁটি তেল ব্যবহার না করলে চুলের কোনো উন্নতি হবে না। তার জন্য আপনাকে অবশ্যই চিনতে হবে তেলটি আসল কি না। প্রিয় পাঠক, চলুন আসল অলিভ অয়েল চেনার উপায় জেনে নিই।
আসল অলিভ অয়েল চেনার উপায়
১. ঘনত্ব
আসল অলিভ অয়েল চেনার উপায় হচ্ছে এই তেলে মেক্সিমাম মনোস্যাচুরেট ফ্যাট থাকায় এটি অন্যান্য নকল তেলের সেই ঘনত্ব বেশি। যার কারনে এই তেল ঠান্ডা জায়গায় এর ঘনত্ব স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ঘন দেখা যায়। তাই কম তাপমাত্রায় নকল তেলের ঘনত্ব পরিবর্তন হচ্ছে কিনা সেটা দেখে আপনি সহজে চিনতে পারবেন কোনটা আসল কোনটা নকল তেল। আসল নকল অলিভ অয়েল চেনার এটাই প্রথম ধাপ।
২. মেয়াদ
সাধারণত খাঁটি অলিভ অয়েলের মে য়াদ ২ বছর হয়ে থাকে। উন্নত তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এই তেল দুই বছর মেয়াদ দিলে ও তারা আপনাকে ১৮ মাসের মধ্যে ব্যবহার করার পরামর্শ দেয় এবং সেটি বোতলের গায়েও লিখে দেন। যদি আপনি বোতলের গায়ে তেলের মেয়াদ ৩/৪ বছর লেখা থাকে তাহলে বুঝে নিতে হবে এই তেলটা নকল। এই তেল কোন অবস্থাতে কেনা যাবে না।
৩. দাম
আসল খাঁটি অলিভ অয়েল অন্যান্য তেলের চেয়ে অনেকটাই দামি এবং বেয়ার একটি পণ্য। বর্তমানে এই তেল বাজারে সহজে পাওয়া যায় না। কারণ এই তেল দামি হওয়ার কারণে অনেক মানুষ কিনতে চায় না বা এর গুণগতমান মানুষ বুঝতে পারে না। তাই এই তেলের দাম বেশি হওয়ার কারণে এই তেলের বিক্রির হার কমে যাওয়ার ফলে উৎপাদনও ব্যাপকভাবে কমেছে।
৪. বোতল চেক করুন
আসল অলিভ অয়েল তৈরি করার সময় মোটা কাছের বোতলে স্টোর করা হয় এবং সূর্যলোক থেকে দূরে রাখা হয়। যদি অতিরিক্ত তাপমাত্রায় এই তেল রাখা হয় তাহলে এর গুনাগুন নষ্ট হয়ে যায়। আসল অলিভ অয়েল কখনো পাতলা/ টিন/ প্লাস্টিক বোতলে ভরে এই তেল উৎপন্ন করা হয় না।
অলিভ অয়েল তেলের দাম কত
বিশ্বের সবচেয়ে স্বাস্থ্যসম্মত এবং উপকারিতা গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো অলিভ অয়েল। আমি আগেই বলেছি এই তেলের দাম অনেক বেশি। বর্তমানে এই তেল আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। আজকে আমি আপনাদের মাঝে বিভিন্ন কোম্পানির অলিভ অয়েল তেলের দাম নিয়ে আলোচনা করবো। চলুন জেনে নিই।
জীবনের কঠিন সময় নিয়ে উক্তি
Vita are এক্সট্রা অলিভ অয়েল ২০০ মিলি =২৬৫ টাকা।
Ambassador স্পানিশ আসল অলিভ অয়েল ১০০ মিলি = ৩৩০ টাকা।
Hat Bazar পিউর এন্ড ন্যআচআরআল অলিভ অয়েল ১৫০ মিলি = ৩৫০ টাকা।
Lucy Olivia আসল অলিভ অয়েল ৩০০ মিলি = ৬৫০ টাকা।
Natural Organic Extra Vargin অলিভ অয়েল ৫০০ মিলি = ১২০০ টাকা।
Oillina Skin Care Extra Vargin অলিভ অয়েল ১০০ মিলি= ২০০ টাকা।
এছাড়াও বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের আসল অলিভ অয়েল তেল পাবেন। সেগুলো গুণগত মান অনুযায়ী দামও পার্থক্য হতে পারে। আপনারা বিভিন্ন সোর্স থেকে যাচাই-বাছাই করে এই তেল কিনে নিতে পারেন।
অলিভ অয়েল তেল এর ব্যবহার
বর্তমানে বিভিন্ন কাজে আমাদের অলিভ অয়েল তেল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আমাদের প্রতিনিয়ত রান্নার কাজ থেকে শুরু করে চুল ও ত্বকের যত্নে এই তাই ব্যবহার করা হইয়া থাকে। যা আমাদের শরীরের জন্য বিশেষ উপকারী। চলুন অলিভ অয়েল তেলের বিভিন্ন ব্যবহার সম্পর্কে জেনে নিই।
১. মুখের ত্বকের জন্য
প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে অবশ্যই মুখ পরিষ্কার করে নেয়া প্রয়োজন বলে জানা চিকিৎসকেরা। মুখ পরিষ্কার করার জন্য প্রথমে সাবান দিয়ে ভালো করে মুখ পরিষ্কার করে নিন। এবার হালকা কুসুম গরম পানিতে কাপড় ভিজিয়ে মুক্তা আস্তে আস্তে করে মুছে ফেলুন। তারপর একটি পাত্রে অলিভ অয়েল এবং পানি সমপরিমাণে মিশিয়ে নিন। মিশানোর পরে তারপর মুখে দুই আঙ্গুল দিয়ে মেসেজ করে নিন। দেখবেন পরদিন সকালে আপনার ত্বকের সজীবতা।
২. হাত পায়ের যত্নে
বাইরে থেকে ঘরে ফিরে আসার পর লেবুর রস মিশিয়ে কুসুম কুসুম গরম পানিতে আপনার হাত-পা ধুয়ে ফেলুন। এখন একটি কাপড় অথবা একটি নরম ব্রাশের সাহায্যে শ্যাম্পু দিয়ে আপনার হাত-পা ঘষে ঘষে পরিষ্কার করে ফেলুন। তারপর হাত-পা মুছে ফেলে অলিভ অয়েল তেল মেসেজ করুন। তবে অলিভ অয়েল তেল না থাকলে হাত পায়ের জন্য আপনি নারিকেল তেলও বেছে নিতে পারেন।
৩. পুরো শরীরের যত্নে
রাতের বেলায় সারা শরীরের গায়ে মশ্চারাইজার লাগাতে হবে। আপনারা যদি সম্ভব হয় রাতের বেলায় ঘুমাতে যাওয়ার আগে কুসুম কুসুম গরম পানি দিয়ে পুরো শরীর ধুয়ে নিতে হবে। তারপর আগের মত অলিভ অয়েল এবং পানি সমপরিমাণে মিশিয়ে পুরো শরীর ম্যাসেজ করে নিতে হবে। এটি ব্যবহার করার পর শরীরে ডিপ ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম লাগাতে পারবেন। এতে আপনার শরীরকে সতেজ রাখতে সাহায্য করবে।
৪. চুলের জন্য অলিভ অয়েল
অলিভ অয়েল শুরু স্বাস্থ্য ভালো রাখে না, চুলের জন্য ও দারুন উপকার করে। ঘন,ঝকঝকে ও মজবুত চুল পাওয়ার জন্য আসল অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। গোসল করার পর সরাসরি এই তেল চুলে ব্যবহার করা যায় অথবা ১টি ডিমের কুসুমের সঙ্গে ২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল এবং সাথে ১ চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে পেষ্ট তৈরি করে নিন। এই পেষ্টটি চুলে ১৫/২০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। তারপর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
৫. রান্না কাজে অলিভ অয়েল
রান্না করার সময় আমরা সাধারনত সোয়াবিন তেল অথবা সরিষার তেল ব্যবহার করি। তবে কোন খাবার ভাঁজিপোড়া করার জন্য সোয়াবিন তেল বেশি ব্যবহার করা হয়। এতে শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। আপনি চাইলে অলিভ অয়েলের তেল দিয়ে খুব সহজে রান্না করতে পারবেন। অলিভ অয়েলের ফ্লেভার খুবই হালকা। যাদের অল্প তেলে ভেজে রান্না পছন্দ তাদের জন্য এই তেল হবে সেরা। যারা বাড়ি পোড়া খাবার খেতে পছন্দ করেন না তারা অলিভ অয়েল তেল খেতে পারেন। এটি শরীরের জন্য খুবই উপকারী।
অলিভ অয়েল তেলের উপকারিতা
আমাদের শরীরের সুস্বাস্থ্যের জন্য অলিভ অয়েল তেলের উপকারিতা অপরিসীম। এই তেলে ওমেগা ৬ এবং ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড রয়েছে। তাছাড়াও এই খেলে সলিড এসিড নাম ক একপ্রকার স্বাস্থ্যকর মনসিচুয়েটেড ফ্যাট রয়েছে যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। চলুন তাহলে অলিভ অয়েল তেলের উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিই।
১. অলিভ অয়েল তেল পেতের সমস্যা দূর করে।
২. নাক ডাকা বন্ধ করে
৩. কানের সমস্যা দূর করে
৪. নখের যত্নে, নখের ভঙ্গুরতা দূর করে
৫. ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে
৬. ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে
৭. শরীরের প্রদাহ কমায়
৮. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের রাখে
৯. ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়
১০. ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী
১১. চুলের ঘনত্ব বাড়ায়
১২. চোখ ও হাড়ের জন্য উপকারী
এছাড়াও এই তেলের অনেক উপকারিতা রয়েছে। যারা এই তেল ব্যবহার করে তারা জানে এই তেল কতটা উপকারী। আসল অলিভ ওয়েল পেরিশোধিত না হওয়ার এর মধ্যে সকল পুষ্টিগুণগুলি সংরক্ষিত থাকে। যা অন্যান্য তেলে পাবেন না।
পরিশেষে,আসল অলিভ অয়েল চেনার উপায় অবশ্যই জেনে নিতে হবে। যদি কম দামে নকল অলিভ ওয়েল তেল ব্যবহার করেন তাহলে শরীরের জন্য মারাত্নক ক্ষতি হবে। আসল অলিভ ওয়েল ৩ ধরনের গ্রেড রয়েছে যথা-পরিশোধিত জলপাই তেল,ভার্জিন জলপাই তেল,অতিরিক্ত কুমারি জলপাই তেল। কেনার সময় অবশ্যই আসল নকল দেখে কিনবেন। এমন সব দারুন দারুন পোস্ট পেতে Grathor এর সাথেই থাকুন এবং গ্রাথোর ফেসবুক পেইজ ও ফেসবুক গ্রুপ এ যুক্ত থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।