উন্নয়নের সাথে মানসিকতার একটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। আপনি যদি মন ও মননে উন্নয়নকে ধারণ করতে না পারেন তাহলে আপনার শতচেষ্টাও ব্যর্থ হতে বাধ্য। আমরা ইরানের ইসলামিক বিপ্লবের কথা জানি। সেখানকার জনগন অতি উন্নয়নকে তাদের মানসিকতায় ধারণ করতে না পারার কারণেই ইরানে ইসলামিক বিপ্লব সম্ভব হয়েছিল। যা ইরানকে করেছে পশ্চাৎপদ একটি রাষ্ট্র।
ধর্ম কখনই উন্নয়নের পথে বাঁধা নয়, তবে যদি বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে ধর্মকে ব্যবহার করা হয় তা শুধু বাঁধা সৃষ্টিই করে না, দেশ ও জাতির জন্য বিপজ্জনকও হয়ে উঠে। আমি কখনই ধর্মের বিরুদ্ধে নই। আবার ধর্মকে নিয়ে ব্যবসা করার পক্ষেও নই। ধর্ম একান্তই ব্যক্তির ব্যক্তিগত বিষয়। তবে একদল বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীর ধর্মীয় মানসিকতা আমাকে খানিকটা আহত করেছে। কলেজ পড়ুয়া একজন মেয়ে শিক্ষার্থী একটি কবিতা লিখেছেন। তাতে তিনি বলছেন, “মেয়েরা হল ঘরের শোভা তারা ঘরেই থাকবে।
ঘরেই তাদেরকে সুন্দর দেখায়। সৃষ্টিকর্তা তাদের অনেক অধিকার দিয়েছেন তবু কেন তারা সমান অধিকার দাবি করে।” একদল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী আবার তার এই লেখনিকে হাততালি দিয়ে বাহবা জানাচ্ছে। তাদের এই হাততালি বাংলাদেশের উন্নয়নকেই যেন উপহাস করছিল। তাদের এই মানসিকতাই বলে দিচ্ছে, তারা চায় না নারীরা সূর্যের আলো দেখুক।
দেশের অর্ধেক জনসংখ্যাকে গৃহবন্দি করে ধর্মের দোহাই আর ফতোয়া দিয়ে এরা দেশকে উন্নতির চরম শিখরে নিয়ে যেতে চায়। এই হচ্ছে বাংলাদেশের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মানসিকতা।
একটি দেশ যখন বিশ্ব দরবারে মাথা উচু করে দাঁড়াচ্ছে, নারী পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করছে, নারীকে মুক্তি দিচ্ছে শত বছরের দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে ঠিক তখনই একদল উচ্চশিক্ষিত তরুণ এই অগ্রযাত্রাকে ধর্মের বেড়াজালে বেঁধে আটকে রাখতে চাইছে। তাদের উদ্দেশ্য কোমলমতি নারী হৃদয়কে ধর্মের বুলি আওড়িয়ে গৃহবন্দি করে শত বছর ধরে চলে আসা সংস্কারকে পূর্ণতা দেয়া।
অথচ এরাই বলে, তুমি ছোট পোশাক পড়ে কেন বের হইছিলা? ওড়না ছাড়া বের হলে তুমি তো ধর্ষিত হবাই! আবার এই দরবেশরাই দুধের বাচ্চাটিকেও ধর্ষন করতে ছাড়েনা। যাইহোক, আগামীর সোনার বাংলা বিনির্মাণ যে একটা বড় ধরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে করতে হবে তা নিশ্চিত।
সর্বশেষ, আমি তো কাউকে আমার মত হতে বলিনি। আমি সমস্যা চিহ্নিত করেছি। এবং বোঝাতে চেয়েছি আমাদের স্বাভাবিকতা কিভাবে ব্যাহত হচ্ছে। কে কিভাবে চলবে এটা তার ব্যক্তিগত পছন্দ। এটা তার অধিকার। নিজের অধিকার পালনের স্বাধীনতা সংবিধান দিয়েছে কিন্তু অন্যের অধিকার খর্ব করার স্বাধীনতা তো সংবিধান দেয়নি। আমার নিজের গার্লফ্রেন্ডই পর্দা করে। আমি কখনই তাকে পর্দা করার জন্য বলিনি। আবার বাঁধাও দেইনি। কারণ এটা তার স্বাধীনতা এবং চয়েস। কিন্তু তার এই অবাধ স্বাধীনতা যেন জাতীয় উন্নয়নের পথে বাঁধা হয়ে না দাঁড়ায় সেটা দেখার দায়িত্ব অবশ্যই আমার।