মেঘের মতো কালো বর্নের ও রহস্য জনক ঝলসানো হাসি।কে জানতো সে অপয়া হবে বাকরুদ্ধ না হলেও সে এভাবেই থাকিতো। সে জন্মানোর আগেই মা নাম ঠিক করে রেখেছিলো। পুত্র হলে তিনি নাম রাখিবেন রুদ্ধ, আর যদি পুত্রী হয় নাম রাখিবেন রুদ্ধছায়া।বাড়ির উঠোনে ছিলো বকুল ফুলের একটি বড়ো গাছ। তার মগডাল থেকে পাখিগুলো কিচিরমিচির সুরকার করে এক করুন সুরে ডাকছিলো। এঠাৎ বৃষ্টি নেমে এলো আকাশ থেকে। আকাশে বজ্রাঘাত টংকার শুরু হইয়া গেলো। বকুল ফুলগুলো ঝরে গেলো,পাখির বাসাটি মগডাল থেকে বাঙিয়া পরিলো ।
যেনো প্রকৃতির অন্যরকম রূপে সেজে উঠলো। সবাই নিজ নিজ আনন্দে মাতিয়া উঠিলো ; ঘরে নয়া অতিথি আসছে। কেও উদ্ধ কন্ঠে গান গাইছে, কেও কাঁথা আর বালিশ সেলাই করছে আপন হাতে। সবাই কি নাম দেবে তা নিয়ে অনেক জল্পনা- কল্পনা।সবাই তার নিজ নিজ নাম ঠিক করিয়া ফেললো। পিতা সবসময় ভগবানের কাছে প্রার্থনা করিত তাহার যেনো একখান পুত্র সন্তান হয়, এই ভাবনা নিয়ে সে সবসময় কাটাতো। যদিও ও পিতা ছেলের আশা করেছিলো কিন্তু ভাগ্যর নির্মম পরিহাস। সে একখান পুত্রী সন্তান লাভ করেন।পুত্রীর মুখ দর্শন করিয়া সবাই ‘হতোভম্ব ‘হইয়া গেলো।পিতা বলিলো এ কেমন পুত্রী দিলে প্রভু’। পিতার মুখে কোনো আনন্দের ছাপ লক্ষ করা গেলো না।যেনো বৃষ্টির জলে আনন্দের সুখ ধুয়ে মুছে গিয়েছে সবার রিদয় থেকে পরিবারের কারো মুভে এক চিলতে হাসি নেই ‘।সে হঠাৎ কাদিঁয়া উঠিলো, চারদিকে হঠাৎ তখন শুনশান হয়ে গেলো। বৃষ্টি ও তখন থেমে গেলো আকাশে সূর্য উঠিলো কিরন ছড়িয়ে তাকে শুভেচ্ছা জানালো। প্রজাপতি এসে তার কপালে বসিয়া চন্দন ফোটা লাগিয়া দিলো! ঠিক কথা মতো তার নাম রাখা হলো রুদ্ধছায়া’। ধীরে ধীরে বড়ো হচ্ছে রুদ্ধছায়া।হাটা চলা ও কথার বুলি ফুটতে শুরু করলো।
সে গৃহের আঙ্গিনায় থাকিত না। হাটতে হাটতে কোথায় যেতো কেও জানিত না। মানুষ বলতো কালো ভূতটা পুকুরের পারে সারাদিন বসিয়া থাকিত। সবাই তাকে অপয়া ‘কালো ভূত বলে ক্ষেপাতো। যদিও তার একটি সুন্দর নাম ছিলো কিন্তু মানুষ এই নামে তাকে ডাকিত না।কারন মানুষ মনে করিতো কালো মুখ অশুভ প্রতিক। মনে করা হয় তার মুখ যে একবার দেখিবে তাহার কোনো কাজ শুভ হবে না, এবং বিপদ আসিবে।তাই তাকে কেও ভালোবাসিত না। সবাই তাকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করিত। তার গাঁয়ে কোনো অশুভ ঘটনা ঘটিলে তাকেই দোষি করা হতো। সবার ধারনা সে এক কোনো বৃষ্টির দিনে অন্ধকারে জন্মগ্রহণ করেছিলো’ এজন্য তার রূপ কালো বর্নের হয়েছে। সে ধীরে ধীরে আরো বড়ো হতে লাগিলো, আর সমাজের চোখে ততোটাই খারাপ হতে লাগিলো। তার বিয়ের বয়স হয়ে গেলো। কালো হওয়াতে সমন্ধ নিয়ে গেলেও বরপক্ষ ফিরিয়া দিতো! এমন করে আর কয়দিন’ পিতা মাতা চিন্তিত হইয়া পড়িলো। কেইবা বিয়ে করিবে তাকে।বিয়ে দিতে না পারায় পরিবারের সে হয়ে রইলো বোঝা।সবাই তাকে ঘৃনার চোখে দেখিত ‘আর বলিত পিতা মাতার কোন জন্মের পাপের ফলসরূপ এই অপয়া পুত্রী তারা লাভ করেছে। সে সব শুনে যেতো কিন্তু কিছু করার নেই তাকে সব কথা মুখ বুঝে সহ্য করিতে হবে। কারো সাথে সে কথা বলিত না। শুধু ওই রাতের জোস্নায় কাঁদো গলায় আকাশের তারার দিকে তাঁকিয়ে বলিত।
একটি বার ফেলতে চাই স্বস্তির নিশ্বাস,
ভুলে যেতে চাই পুরনো সব দীর্ঘশ্বাস।
হে ঈশ্বর! শুনতে কি পাও আমার এ ডাক?
এবার আর হয়ে থেকনা তুমি নির্বাক।
সে ঈশ্বরের সাথে সন্ধি করিতে চাহিতো, কিন্তু ঈশ্বর কি শুনছেন তার রিদয়ের ডাক, তার ধারনা হতে লাগলো ঈশ্বর ও বুঝি তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়া নিয়াছেন। তখন একটু একটু ঈশ্বরের প্রতি অভিমান মনে গেঁথে গেছে। রুদ্রছায়া বৃষ্টিতে ভিজতে খুবই ভালোবাসিত, এঠাৎ চারিদিকে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পরতে লাগিলো। সে বৃষ্টি খুবই ভালোবাসিত। যখন মুসলধারে বৃষ্টি ঝরত তখন সে বৃষ্টিতে খেলা করিত,এবং হাত দুটি বাড়িয়ে দিতো ওই আকাশের দিকে, আর বলিত বৃষ্টি তুই ধুয়ে দে আমার কালো চেহারা, আমাকে আকাশের তারার মতো উজ্জল করে দে।তাইলেই সবাই আমাকে ভালোবাসবে।বৃষ্টি মানুষের মনটা দুয়ে পরিষ্কার করে দে তাহলে তাদের মনে আমার অশুভ ঘৃনা মুছে যাবে। হঠাৎ চারদিকে শুনশান নিজস্তব্দ হয়ে গেলো মনে হয়! বৃষ্টি ও থেমে গিয়ে আধাঁর ঘনিয়ে আসছে। চারদিকে শিউলী ফুলের গন্ধে মনোমোহিত। কাশফুলগুলো হাওয়ায় দুলছে।আর সংকেত দিচ্ছে জীবনে কোনো সুখ ও আনন্দ আসতে চলেছে।’অভাগার আবার কিসের শুখ’? হঠাৎ আকাশে সাতরাঙা রংধনুর উদয় হলো। তখনই মনে পরলো বাড়ি ফিরে যেতে হবে, কিন্তু এখানের সৌন্দর্যে আমার মনে গেঁথে গিয়েছে। বাড়ি যেতে হচ্ছে করছিলো না মন। ইচ্ছে করে সারারাত কাশবনেই কাটিয়ে দিই। কিন্তু উপায় তো নেই বাড়ি তো ফিরতেই হবে।
না হলে মায়ের মার খেতে হবে। তাই কোনোকিছু না ভেবে হাটা শুরু করলাম বাড়ির দিকে। তখন লক্ষ করলাম কে যেনো পিছন থেকে ‘রুদ্ধছায়া’ বলে আমায় ডাকিতে লাগিলো। আমি হাটা থামিয়ে পিছন ফিরে তাকাতে লাগলাম কিন্তু কাউকেই আমার চোখে পরলো না। হয়তো এটা আমার মনের ভ্রান্তি হবে। তারপর আবার হাটা শুরু করলাম। কিন্তু আবারো পিছন থেকে ডাক পরলো আমার । আমি ঘুরে তাকাতেই তখনই চারিদিকে আলোয় আলোকিত হয়ে গেলো। আমার চোখ দুটি ধাঁধিয়ে গেলো।আমি খুবই বিস্মিত হলাম! একটু পরে লক্ষ করলাম আলোর রশ্মি পরে আমার শরীর ধবধবে সাধা হয়ে যাচ্ছে এবং আমি নিমিষেই রাজকুমারীর রূপ ধারন করলাম। হঠাৎ আলোটা নিভে গেলো। চারিদিকে আগের মতো হয়ে গেলো। আমি বাড়ির দিকে দৌড়োতে শুরু করলাম। রাস্তার ধারে কাটায় পা বিঁধে গেলো, পা দিয়ে টনটন রক্ত পরছে। তাই দৌড়ের ঘতিটা ও কমাতে হলো।মাঝপথে মনে হলো কেও আমার পিছু নিচ্ছে, কারো পায়ের ফস – ফস শব্দ পাচ্ছি। পিছন ফিরে তাঁকাতে দেখি একদল জলজান্ত কুকুর তেঁরে আসছে। তারা ঘেউ ঘেউ ডাকিতে লাগলো।দৌড়ের মধ্যে কখন যে বাড়ির আঙ্গিনায় পৌছে গেলাম বুঝতে পারলাম না। বাড়ি এসে দরজার কড়া নাড়তে লাগলাম ।
খানিকক্ষণ পড়ে মা একহাতে হারিকেন আর এক হাতে লাঠি নিয়ে দরজা খুললো। হারিকেন টা একটু নিবু নিবু করছিলো। আমাকে দেখে মা ভয় পেয়ে চিৎকার করে উঠলো। মায়ের চিৎকার শুনে বাবা এসে পড়লো। তারা আমাকে চিনিতে পারলো না। তারা আমাকে বহুরূপী বলে সম্ভোদন করতে লাগিলো। তখন সব সব ঘটনা খুলে বললাম। তখন মা বাবার মুখে এক অক্লান্ত হাসি ফুটে উঠলো। তারা বলিতে লাগিলো ঈশ্বর মনে হয় আমাদের কথা শুনেছেন এতোদিনে। আমার প্রতি আমার বাবার যে ঘৃনাটা ছিলো সেটা মুছে গিয় খাক হয়ে গিয়েছে। আমারে জরিয়ে দরে কাদঁতে লাগলো দুজনে। আমি তাদের ভালোবাসা ও আদরে চোখের জল ধরে রাখতে পারলাম না।যেনো সবকিছু আমার কাছে সপ্নের মতো লাগছে। কিন্তু বাবার গলায় শুনতে পেলাম আমাকে ভালো ঘরে বিয়ে দেওয়া যাবে। তারা আমার বিয়ের জন্য ভালো পাত্রের সন্ধান পাঠাবে ঘটকের কাছে। তখন আমি লজ্জা পেয়ে ঘরে চলে আসলাম। কিন্তু একটি কথা আমাকে ভাবুক করে তুলছে প্রতি ক্ষনে ক্ষনে আসলে ওই চোখ ধাঁধানো আলোটা কি ছিলো? আর আমার নাম ধরে কেইবা এভাবে ডাকলো! কিন্তু এসব নিয়ে যতো ভাবছি ভাবনার অতল গহ্বরে ততো ডুবে যাচ্ছি। এসব নিয়ে ভাবতে ভাবতে কখন যে গভীর ঘুমে আছন্ন হয়ে পড়লাম বুঝতেই পারিনি। সকাল হলো পাখির ডাকেই ঘুম ভাঙলো। ফুলের সুবাস ছড়াচ্ছে সারা বাড়িতে। সূর্য টা মনে হয় আজকে একটু তারাতারিই ঘুম থেকে উঠেছে।আর আমাকে জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে বলছে শুভ সকাল। কিন্তু হঠাৎ আমার নজরে পরলো একটি আশ্চর্য ঘটনা। কে যেনো আমার পায়ের কাছেই খাটের কোনো বকুল ও চামিলী ফুল আর একটি কাগজে একখানা চিঠি লিখে রেখে গেছে। সেখানে লেখা ছিলো :
তোমার রূপে আমি মুগ্ধ, আমার প্রতিটি অনুভবে এখন শুধু তুমি। তুমি হাসলেই যেনো আকাশ থেকে অঝড়ে বৃষ্টি ঝরতে থাকে। তোমাকে যতো দেখি তৃষ্ণা যেনো মিটেনা। তোমার খোঁপার চামিলী ও বকুল ফুলগুলোর গন্ধে আমাকে কাছে টেনে নেয়। আমি তোমার মনের রাজ্য রাজকুমারী হতে চাই।
ইতি,
মেঘ রাজকুমার।
কিছুতেই বুঝিতে পারিলাম না। আমার মতো অসুন্দর রূপের মেয়েকে কে চিঠি লিখতে পারে! আর মেঘ রাজকুমার কে? আরো প্রশ্ন মনে জমা হতে লাগিলো, কোথায় গেলে আমার সব প্রশ্নের উওর পাবো। এঠাৎ মনে পরলো আমি তো অসুন্দর নই। তাহলে কেনো নিজেকে অসুন্দর মনে করছি। আমি চিঠিটা বার বার পরিতে লাগলাম, যতোই পড়ছি আমি কোথায় যেনো হারিয়ে যাচ্ছি। ফুলগুলো শুকলেই চিঠির মানুষটাকে কাছেই অনুভব করি। কে এই মেঘ রাজকুমার ? যে আমার চারিদিকে ঘিরে রয়েছে। দিনটা পুরো তার কথা ভেবেই কাটিয়ে দিলাম। এঠাৎ দিন ঘনিয়ে সন্ধা নামিলো। আমার ভাবনা যেনো শেষই হচ্ছে না। তাকে নিয়ে কতোকিছু ভাবছি, ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পরলাম নিজেই বুঝতে পারলাম না।অবশেষে দীর্ঘ রাত পেরিয়ে প্রহর কাটলো, পাখির ডাকেই ঘুম ভাঙলো। এঠাৎ কেমন একটা সুবাস অনুভব করছি। মনটা খুশিতে ভরে উঠলো। খাটের কোনে চোখ পরলো হঠাৎ দেখলাম আরেকটা চিঠি তারাতারি বিছানা থেকে উঠে চিঠিটা পরিতে লাগলাম। লেখা ছিলো’ রুদ্ধছায়া তুমি কি আজকে বিকালে নদীর পারে মেঘ রাজকুমারের জন্য অপেক্ষা করিতে পারবে। তখন আমার আর কোনো কিছুতেই মন বসছিলো না। কখন বিকাল হবে, তার সাথে দেখা করবো। সময় যেনো কিছুতেই পার হচ্ছে না! তারপর হঠাৎ মায়ের কন্ঠে শুনতে পারলাম ভালো একটা বিয়ের সমন্ধ এসেছে, আজকে বিকালে তোকে দেখতে আসবে। মা আমার ঘরেই থাকবি আজকের দিনটা। মনে মনে বলতে লাগলাম; আজকেই দিনেই তাদের আসতে হলো। হে ভগবান! আজকে যেনো তারা না আসে, নাহলে মেঘ রাজকুমারের সাথে আমি দেখা করিতে পারবো না। আমি চিন্তিত হইয়া পরিলাম। কীভাবে আমি তার সাথে দেখা করবো ‘কোনো উপায় ও তো দেখছি না।
তারপর এঠাৎ পাত্র পক্ষ থেকে খবর এলো, আজকে তার বাবা অসুস্থ হয়েছেন তারা আসতে পারবেন না । এই খবর শুনিয়া আমি মহা খুশি। আনন্দে লাফালাফি করতে ইচ্ছে করছে মন। দুপুর গড়িয়ে বিকাল হলো। বিকাল হতেই আমি দেখা করতে চলে গেলো। আর অপেক্ষা করতে মন চাইছিলো না। কথামতো নদীর পারে চলে গেলাম। গিয়ে অনেকক্ষন অপেক্ষা করিতে লাগলাম। কিন্তু মেঘ রাজকুমারের কোনো দেখা নেই। অতপর বিরক্তিকর ভাব চলে আসিলো। বাড়ি আসার জন্য হাটা ধরলাম ‘। হঠাৎ পিছন থেকে কে যেনো রুদ্ধছায়া বলে ডাকলো আমায়। আমি পিছন ঘুরে তাকাকেই দেখি একজন সুদর্শন যুবক যেমন তার রূপ লাবন্য, তেমন তার কন্ঠশ্বর। আমি অবাক দৃষ্টিতে ছলছল চোখ দুটির দিকে তাকিয়ে রইলাম।কিছুতেই তার চোখের দিক থেকে চোখ সরাতে পারছি না। যেনো গত জন্মের পরিচয় ছিলো আমাদের। একে অপরের সঙ্গী ছিলাম আমরা দুজন। প্রথম দেখাতেই আমাদের ভাব হয়ে গেলো। তখন আকাশ কালো হয়ে বৃষ্টি শুরু হয়ে হয়ে গেলো। মেঘ রাজকুমার বলিতে লাগিলো আমি যখন আসি সবাইকে এভাবে বৃষ্টিতে ভিজিয়ে দিই। আমি তাকে বিস্মিত হয়ে প্রশ্ন করিলাম’ কে তুমি মেঘ রাজকুমার? তোমার পরিচয় কি? তখন মেঘ রাজকুমার বলিতে লাগলো। তোমার প্রেশ্নের উওর পরে না হয় দিই। আমি জেদ ধরলাম ‘না এখনই আমার সব প্রেশ্নের উওর চাই। আমার মনে অনেক প্রশ্ন জমা হয়ে রয়েছে। সেগুলোর উওর আমার জানা অতি প্রয়োজন।মেঘ রাজকুমার বললো আচ্ছা বেশ তাহলে বলছি, শোনো তুমি আগের জন্মে মেঘ লোকের রানি ছিলে, আমি মেঘ লোকের রাজা ছিলাম।আমি ছিলাম নিষ্ঠুর ও স্বাথপর প্রকৃতির।আমার মনে অনেক হিংসা এবং ঈশা ছিলো কালো রূপের মানুষকে নিয়ে। মেঘলোকে কোনো কালো মানুষের স্থান ছিলো না। যদি কার গর্ভ থেকে কালো বর্ণের সন্তান হতো। তাহলে ওই সন্তান কে সিংহের খাচায় ফেলে দিতাম এবং সেই মাতাকে বনবাসে পাঠাতাম। কিন্তু তুৃমি ছিলে এর উল্টো তুমি কালো, গরীব,জাতপাত নিয়ে কখনে ভেদাভেদ করতে না।আমার আশা ছিলো আমার সন্তান হলে আমার মতোই হবে। দীর্ঘ অনেক বছর পরে তুমি একদিন আমাকে এই আনন্দের সংবাদ দিলে আমি পিতা ডাক শুনতে চলেছি। এই খবর সারা মেঘ লোকে ছড়িয়ে গেলো। মেঘলোকে উৎসব শুরু হয়ে গেলো। কিন্তু এই খবর শুনে একটি পাগড়িওয়ালা কালো ভিক্ষুক রাজপ্রসাদে গেলো ভালো মন্দ কিছু খাওয়ার জন্য।কিন্তু ভাগ্যর নির্মম পরিহাস। সে কালো ও ভিক্ষারি হওয়াতে আমার প্রহরীরা তাকে মেঘলোকে প্রবেশ করতে দিলো না। সে কালো হয়ে রাজপ্রসাদে প্রবেশ করার দুঃসাহস দেখিয়েছে বলে ক্ষুধার্ত ভিক্ষুকে একশত চাবুক ঘা তাকে মারা হলো। তখন ক্ষুধার্ত ভিক্ষুক অভিশাপ দিলেন ‘এই গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া সন্তান কালো হবে।
যেই এই সন্তান পৃথিবীতে আসবে তখন থেকে মেঘ রাজকুমার কাক হয়ে পৃথিবী লোকে বাস করবেন এবং মেঘ লোকের সব মানুষ তখন থেকে কুৎসিত কালো হয়ে থাকবে।তখন আমি এই নিষ্ঠুর মানুষটা ভাবলাম এই সন্তান জন্ম নেওয়ার আগে তাকে মেরে ফেলতে হবে। নাহলে আমাকে পৃথিবীলোকে কুৎসিত কাক হয়ে বাস করতে হবে। তখন এই কথা তোমাকে জানালাম। কিন্তু তুমি কিছুতেই এই সন্তানের কোনো ক্ষতি হতে দিবে না। এবং যেভাবেই হউক সন্তাকে রক্ষা করিবে’। আমি তখন রেগে গেলাম, আমি তোমাকে অনেক বুঝালাম। কিন্তু তুমি কোনো কথাই শুনতে চাইলে না। তখন নিষ্ঠুর মেঘ রাজকুমার একটা ফন্দি আটলেন’। তিনি অভিশাপের ভয়ে নিজের স্ত্রী কে মারতে দ্বিধাবোধ করলেন না। তিনি রানির খাবারের সাথে বিষ মিশিয়ে দেন। যেই রানি খাবার খাবেন তিনি ও তার সন্তান সহ দুজনেই মারা যাবেন। কিন্তু ভুলবশত ওই খাবার একটি বিড়াল খেয়ে ফেলে। বিড়াল টি তখন মারা যায় এবং তুমি মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে যাও। মেঘ রাজকুমার বিভিন্ন ভাবে মারার ফন্দি আটলেন, কেনোটাতেই কোনোভাবে কাজ হয়নি। একদিন হঠাৎ রানির পেটে বেথা উঠলো। তিনি বুঝতে পারলেন তার সন্তান প্রসব হবে। কিন্তু রাজমহলে কোনো ভাবেই সন্তান জন্ম দেওয়া যাবে না। রাজা জানতে পারলে তার সন্তাকে মেরে ফেলবে। তখন রানির একজন প্রিয় বান্ধুবী ছিলেন। তিনি রানিকে সাহায্য করেন এবং একটি উচুৃ্ঁ পাহারে নিয়ে যান। কিন্তু রাজমহল থেকে বেরোনোর সময় একজন প্রহরী তাদের দুজন কে দেখে ফেলে। সে রাজাকে দূত গিয়ে এই খবরটি দিয়ে দেন। এই মেঘ রাজকুমার সৈন্য- সামন্ত নিয়ে রানিকে খোজার জন্য রওনা হন। চারিদিকে খুজতে শুরু করেন সৈন্য সামন্তরা।
এক মাতা সন্তাকে বাচাঁনোর জন্য আপ্রান লড়ে যাচ্ছেন। শেষ পযন্ত রানি একটি উঁচু পাহাড়ে আশ্রয় নেন। মেঘ রাজকুমার খুজতে খুজতে সেখানে চলে গেলেন। আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিলো তখন। মেঘ রাজকুমারে কাছে রানি নত হয়ে প্রান ভিক্ষা চাইছে সন্তানের জন্য। তখন নিষ্ঠুর, স্বার্থপরহীন মেঘ রাজকুমারের রিদয় ছিলো পাথরের মতো, তার কিছুতেই মন গললো না। সে রানিকে পাহার থেকে ঠেলে ফেলে দেন। রানি নিচে পরে গেলেন। তখন সন্তান প্রসব হলো, সন্তান ভগবানের আশীর্বাদে বেচে যায়। তখন এই মেঘ রাজকুমারের শেষ রক্ষা হলো না। তখন ওই ভিক্ষারির অভিশাপে ‘মেঘলোকের সমস্ত মানুষ কালো রূপ ধারন করে। মেঘ রাজকুমার কাক হয়ে পৃথিবী লোকে অনাহারে ঘুরছে। কোনো খাবার দাবার পাচ্ছে না। যেখানেই যায় সেখানে কুৎসিত কাক বলে ঝাটা দিয়ে মেরে তারিয়ে দেয়। তখন মেঘ রাজকুমার বুঝতে পারেন কালো বর্নের মানুষরাই আসল মানুষ। এদের কখনো ঘৃনা করা উচিত নয়। রাজা তার ভুল বুঝতে পারে। তখন মুক্তি লাভের জন্য এক মুনিঋষির আশ্রমে যান।
সেই ঋষিকে সব কথা খুলে বলেন কাক। ঋষি জানালেন তুর স্ত্রী পূর্নজন্ম লাভ করবে। সে কালো বর্নের হয়ে জন্মগ্রহণ করবে, যদি সে মেঘের বৃষ্টিতে ভিজে সৌন্দর্যের জন্য ভগবানের কাছে প্রাথনা করে তবেই তোর মুক্তিলাভ হবে এবং তুই আগের রূপে ফিরে আসবি। তখন থেকে আমি অপেক্ষা করতাম। কবে কেউ ভগবানের কাছে বৃষ্টিতে ভিজে আমার জন্য প্রার্থনা করবে। আর আমার মুক্তিলাভ হবে। কিন্তু তুমিই সেই, যে বৃষ্টিতে ভিজে প্রাথনা করেছো। আর আমি আমার রূপে ফিরে আসতে পেরেছি।তখন রুদ্ধছায়ার কাছে তার করা অন্যায়ের জন্য ক্ষমা চাইতে লাগিলো। কিন্তু রুদ্ধছায়া গর্জন করে বলে উঠলো ; আমি তোমাকে কখনোই ক্ষমা করবো না। আর এই চিঠির মানুষটাকে আমি কি করে ভালোবাসলাম। আমার ছেলের সাথে করা অন্যয়ের জন্য কখনোই তুমাকে ক্ষমা করবো না।রুদ্ধছায়া চোখে মুখে ঘৃনার ছাপ ফুটে রয়েছে। তখন ওই ঋষি ওখানে উপস্থিত হলেন’। তিনি বললেন মেঘ রাজকুমার নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে। তাকে তুমি ক্ষমা করে দেও। এখন মেঘলোকে তোমাকে খুব প্রয়োজন, তুমি ফিরে গেলেই মেঘলোকের সবাই অভিশাপ থেকে মুক্ত হবে। আর তোমার সন্তান বেচেঁ আছে। তোমার প্রিয় বান্ধুবী তোমার সন্তান কে লালন পালন করেছে। তখন রানী মেঘলোকে ফিরতে রাজি হলেন। বাবা মার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে মেঘলোকের দিকে পারি জমালেন রুদ্ধছায়া এবং মেঘ রাজকুমার। এখানেই রুদ্ধছায়া ও মেঘ রাজকুমারের গল্পের সমাপ্তি ঘটলো।