আজ রাহার অফিস বন্ধ। দুপুরের খাবারের পর বালিশে মাথা রেখে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল রাহা। চোখে আবছা দেখে ঘুম ভাঙতেই চশমা খুঁজছিল। অনেক খোঁজার পর চাদরের নীচে চশমাটি পেল।
ওর শোবার ঘরের জানালা দিয়ে দূরে একটি মাঠ দেখা যায়। মাঠের এক প্রান্তে একটি কৃষ্ণচূড়া ফুলের গাছ। গাছে ফুল ফুটেছে। গাছটি দেখতে বেশ লাগছে। মাঠে ছেলেরা খেলছে। এমন সময় নিজের অতীত স্মৃতি মনে পড়ে গেল ওর। রাহার দাদার বাড়ি বিক্রমপুরে। ওর দাদার বাবা জমিদার ছিলেন। বিক্রমপুরে বিশাল জমিদার বাড়ি ছিল ওদের। কলকাতা ও একটি জমিদার বাড়ি ছিল। রাহার দাদা যখন বালক ছিল তখন দাদার মা মারা যায়। সেজন্য দাদাকে তাহার বাবা দাদার নানার বাড়িতে রেখে আসেন। নবাবগঞ্জ থানার একটি গ্রামে।
ওর দাদার নানাও জমিদার ছিলেন। তাই দাদা বেশ যত্নেই বড় হয়ে ওঠেন। নানা-নানির মৃত্যুর পর তিনিই এই সম্পদের মালিক হন। কিন্তু তিনি এই সম্পত্তি বেশিদিন ভোগ করতে পারেননি। দাদার সরলতার সুযোগ নিয়ে গ্রামের কুচক্রি লোকেরা মিথ্যা চক্রান্ত করে সম্পদটি ছিনিয়ে নেয়। দাদা তখন পরিবার নিয়ে হতাশ হয়ে পড়ে।
পরে দাদির পৈতৃক সম্পত্তি হতে পাওয়া বিশাল বড় একটি বাড়িতে রাহা বড় হতে থাকে। বাবা যখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে তখন দাদার মৃত্যু হয়ছিল। রাহার বাবা পড়াশোনা শেষ করে শহরে ব্যবসা করেন। রাহা গ্রামের মিশনারিজ স্কুলে প্রাইমারি পর্যন্ত পড়াশোনা করে। পরে পুরো পরিবার বাবার কাছে শহরে চলে আসে। গ্রামের পরিবেশ ভালো লেগেছিল রাহার। গ্রাম ছেড়ে শহরে যেতে ভীষণ কষ্ট হয়েছিল।
রাহা যখন দশম শ্রেণিতে পড়ে তখন বাবার ব্যবসায় ক্ষতি হয়ে যাওয়ার ফলে অর্থনৈতিক অবস্থা একটু খারাপ হয়ে যায়। বড় ভাই চাকরি করে সংসার চালায়। ভাইয়ের চাকরিতে বার বার সমস্যা হয়। এমতাবস্থায় পড়াশোনা চালিয়ে যেতে কষ্ট হয় ওর। পড়াশোনায় ভীষণ মনযোগী ছিল। শত বাঁধা পেরিয়ে সফলতার সাথে মাস্টার্স দিগ্রী পাস করে। পরিবারে প্রথম মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করে রাহা। ওদের পরিবার ছিল খুবই রক্ষণশীল। হাইস্কুল পেরুলেই মেয়েদের বিয়ে হয়ে যেত। সবাই পড়াশোনার চেয়ে আনন্দ ফূর্তিতে মেতে থাকতে ভালোবাসত।
রাহা মধ্য আয়ের এক সাধারণ ছেলেকে পছন্দ করে বিয়ে করে বলে পরিবারের কেউ ওর সিদ্ধান্তকে মেনে নেয়নি। রাহার মনের এই ক্ষত কোনদিনও ঘুচবে না। রাহার বাবার বাড়িতে যাওয়া নিষেধ। বাবার বাড়ির স্মৃতি মনে হলে রাহা গ্রামে যায়। কিন্তু বাড়িতে প্রবেশ করে না। বাড়ির বাইরের চারপাশে ঘুরে বেড়ায়। প্রতিবেশিরদের সাথে দেখা করে। বন্ধুদের সাথে দেখা করে পরে নিজের বাড়িতে দুঃখ ভরা মন নিয়ে ফিরে আসে।