জীবনের শুরু আনন্দ দিয়ে জীবনের শেষ কান্না দিয়ে জীবনে মাঝের সময়টুকু কি করলাম??
প্রিয় পাঠকবৃন্দ এই হিসাব-নিকাশ কি আমরা কখনো করি?? যারা করি তারা নিতান্তই বুদ্ধিমান আর যারা জীবনটাকে একটা গতিমান যানবাহন হিসেবে পরিচালনা করেন তাদের এই যানবাহন যেকোনো সময়ে দুর্ঘটনায় কবলিত হয় সম্ভাবনা থেকে যায়। পৃথিবীর সব কিছু একটা সুনিয়ন্ত্রিত বাধ্যবাধকতায় পরিচালিত হয় কিন্তু আমার জীবন?? আমি কি কখনো ভেবে দেখেছি কোন নীতিতে নিজের জীবনকে আমি পরিচালনা করছি??
কিসের জন্য পৃথিবীতে আসা আমার?? আমি কোথায় ছিলাম কেন এ পৃথিবীতে আসলাম?? পৃথিবী থেকে আমি কোথায় চলে যাব?? কখনো কি ভেবে দেখেছি আমি?? এমন প্রশ্ন নিজেকে বার বার করুন এক সময় না এক সময় সঠিক উত্তর পেয়ে যাবেন।
একদিন ছিল যে আমার অস্তিত্ব এই পৃথিবীতে ছিল না এখন অস্তিত্ব আছে আবার এমন একদিন আসবে এই পৃথিবী থেকে আমার অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। রয়ে যাবে কিছু সৃতি। আবার সেই অধিকাংশ স্মৃতিও পৃথিবীর নিষ্ঠুরতায় হয়তোবা মানুষের হৃদয়ে নাও থাকতে পারে। তবে আপনার কৃতকর্ম এই পৃথিবীতে চিরজীবন রয়ে যাবে যেটা কারোর কাছে অনুসরণযোগ্য কৃতকর্ম হিসেবে চিরজীবন লালিত হবে।
এজন্যই জ্ঞানী পন্ডিত রা বলে থাকেন “এমন জীবন করিও গঠন মরিলে হাসিবে তুমি কাদিবে ভুবন”। পক্ষান্তরে ” এমন জীবন করিও না গঠন মরিলে কাদিবে তুমি হাসিবে ভুবন” বাস্তবতার বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে ঠিকই আমরা এই পৃথিবী থেকে বিদায় নেব তবে বিদায় নেবে না কৃতকর্ম। আমার এই কৃতকর্ম এই পৃথিবীকে হয় ইতিবাচক সৃতি উপহার দেবে নতুবা নেতিবাচক তিক্ত সৃতি নিজেকে চিরজীবনই অভিশংসন করবে।
আমার দ্বারা কোন ব্যক্তি বা সমাজ উপকৃত হলে উক্ত ব্যক্তি বা সমাজ তা মনে রাখবে আবার ক্ষতি হলেও ব্যক্তি বা সমাজ ঘৃন্যভরে মনে রাখবে, স্বরণ করবে।
আদর্শিক কাজ, কল্যাণকর কাজ নিজেকে মানুষের অন্তরে চিরকালই বাচিয়ে রাখে। মরলেও চিরস্বরণীয় হওয়া যায়। এই পৃথিবী আমাকে যা শিখিয়েছে তার ইতিবাচক বাস্তব প্রতিফলন জীবনে প্রয়োগ করুন দেখবেন নিজের কর্ম সুকর্মে পরিণত হয়ে গেছে।
সুশিক্ষার সঠিক প্রয়োগ, স্বীয় বিবেকের সঠিক অনুশীলন আপনাকে অন্ধকার জগত থেকে আলোর দিকে ধাবিত করবে। বারবার নিজের অজ্ঞতা ও সীমাবদ্ধতাকে আবিষ্কার করবে এবং সঠিক পথের সন্ধান দিবে। মহান স্রষ্টার দাসত্ব করুন দেখবেন নিজের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন চলে এসেছে, জীবনটা আলোর পথে চলে এসেছে। অর্থাৎ আপনি আলোকিত মানুষ হলেই পরে জাতিকে আলোর পথ দেখাতে সক্ষম হবেন। নিজে আগে অন্ধকার থেকে বের হতে হবে। তাহলে ব্যক্তিগত জীবন আলোকিত হবে জাতীয় জীবনেও তার প্রভাব পড়বে।
ক্ষনিকের এই দুনিয়ায় আমরা ইচ্ছা করলেও কেউ থাকতে পারবো না তবে ইচ্ছা করলে হিতকর ভালো কিছু করে যেতে পারি যেটা চিরজীবনই এই পৃথিবীতে থেকে যাবে।
অকল্যাণ থেকে নিজেকে ও অপরকে বাঁচিয়ে রাখা ও কল্যান প্রতিষ্ঠা করার জন্যই মহান স্রষ্টা এই পৃথিবীতে আপনাকে পাঠিয়েছেন। শুধু উদরপূর্তির জন্য নয়, উদারতা প্রদর্শনের জন্যও আপনাকে পাঠানো হয়েছে। শুধু স্বীয় স্বার্থ উদ্ধারের জন্য নয়, অপরের স্বার্থটাকেও উদ্ধার ও বাস্তবায়ন করার জন্যও আপনাকে পাঠানো হয়েছে।
স্বীয় স্বার্থ উদ্ধার করার কাজ জন্তু-জানোয়ারের, মানুষের নয়। নিজের জন্য যেটা ভালো মনে করো অপরের জন্যও সেটা ভালো মনে করতে হবে। তাহলেই আপনার প্রকৃত মনুষ্যত্বের প্রতিফলন ঘটবে।
নিজের আমিত্ব কে অপররের কাছে বিলীন করতে না পারলে কখনো স্বরণীয় ও নিরাহংকারী মানুষ হওয়া যায় না। নিজের বড়ত্ব নিজের কাছে রাখলে বড় হওয়া যায় না বরং নিজের বড়ত্ব অপরের অন্তরে থাকলেই আপনি বড় হবেন। নিজের কাজের জন্য আপনি কেন অহংকার করবেন? বরং আপনাকে নিয়ে অন্যরা অহংকার করবেন। নিজের কাজে নিজে প্রশংসা করে অহংকার করলে আপনি অহংকারী হিসেবে বিবেচিত হবেন পক্ষান্তরে আপনার কাজে অন্যরা প্রশংসা করলে সর্বমহলে আপনি প্রশংসনীয় হবেন।
কোনটি উত্তম ভেবেছেন কি কখনও??
তাই শুধু নিজের জন্য নয়, মানুষের জন্য কাজ করুন দেখবেন মানুষের মনে আপনি স্থান করে নিতে পেরেছেন।
মরিলেও শান্তি পাবেন। এটাই সুদৃঢ় প্রত্যয় হোক
“”মানুষ মানুষের জন্য””
( ইদ্রিস আলী )