আমাদের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার নামই হলো স্বাস্থ্য। সু-স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। শরীর ও মন ভালো না থাকলে পৃথিবীর কোন রঙমঞ্চই আমাদের ভালো লাগে না। তাহলে বোঝা গেল শরীর ও মনের সুস্থতা নিশ্চিত করা সর্বাগ্রে করণীয় একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এজন্যই আমরা বলে থাকি সুস্থতা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে সবচেয়ে বড় নেয়ামত। শুধুমাত্র ধন- সম্পদ, টাকা-পয়সা, পতি-পত্তি, ধন-ঐশ্বর্য থাকলেই মানুষ ধনী হতে পারে না। পৃথিবীতে যে ব্যক্তিটি রোগমুক্ত ও সুসাস্থের অধিকারী হয় সেই ব্যক্তিই সবচেয়ে বড় ধনী।
বিভিন্ন প্রাণীর মতো মানুষও খাদ্য গ্রহণ করে। আর এই খাদ্য আসে উদ্ভিদ ও প্রাণী থেকে। অর্থাৎ খাদ্যের উৎস দুইটি যথা- উদ্ভিজ্জ্য উৎস ও প্রাণীজ উৎস। এই উভয় উৎস থেকে আমরা খাদ্যের গুরুত্বপূর্ণ ও অত্যাবশ্যকীয় কিছু উপাদান পেয়ে থাকি যেটি পুষ্টি উপাদান নামে পরিচিত। খাদ্যের মোট পুষ্টি উপাদান ৬ টি যথাক্রমে -শর্করা, আমিষ, চর্বি, ভিটামিন, খনিজ লবণ ও পানি।যদিও উক্ত পুষ্টি উপাদান গুলোর মধ্য থেকে পানি সরাসরি পুষ্টি উপাদান নয়। তবে আমাদের দেহে খাদ্য হজম ও শোষণের জন্য পানি প্রয়োজন হয়। আমাদের দেহ অত্যাবশ্যকীয় এই পুষ্টি উপাদানগুলো শোষণ করেই সুস্থ থাকে।
আমরা একটু সদিচ্ছা ও সচেতনতা বৃদ্ধি করে খাদ্য তালিকায় উক্ত পুষ্টি উপাদান গুলো একটু হিসাব করে রাখলে আমরা শারীরিক এবং মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে পারি। তবে শর্ত থাকে যে উক্ত পুষ্টি উপাদানগুলো অবশ্যই পরিমিত মাত্রায় আমাদের খাদ্য তালিকায় থাকতে হবে। যে সমস্ত খাদ্যে আমাদের দেহের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান পরিমাণমতো থাকে তাকে সুষম খাদ্য বলে। অর্থাৎ আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় অবশ্যই সুষম খাদ্য রাখতে হবে। সুষম খাদ্য আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তাহলে আমরা বুঝলাম আমরা খাদ্য পাই উদ্ভিজ্জ্য এবং প্রাণীজ উৎস থেকে।
খাদ্যের উৎস ভিন্ন হলেও আমাদেরকে সুস্থ থাকতে হলে উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে বেশি পরিমাণে খাবার গ্রহণ করতে হবে। উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে যে সমস্ত খাবার আমরা গ্রহণ করি সেই খাবারগুলো আমাদের পাকস্থলী তে সহজে হজম হয়। কারণ পাকস্থলীতে উপস্থিত পরিপাককারী এনজাইম, উৎসোচক ও পাচক রস খুব সহজেই গ্রহণকৃত খাবার গুলো ভেঙে সরল উপাদানে পরিণত করতে পারে। পক্ষান্তরে প্রাানীজ উৎস থেকে গ্রহণকৃত খাবারগুলো ভাঙতে বা সরল উপাদানে পরিণত করতে সংশ্লিষ্ট পরিপাককারী উপাদানগুলোর অনেক বেশি সময় লাগে।
এর মানে এই নয় যে প্রাণিজ উৎস থেকে খাদ্য গ্রহণ করা যাবে না, অবশ্যই গ্রহণ করা যাবে এবং সেটা পরিমিত মাত্রায় গ্রহণ করতে হবে। তবে আমাদের খাদ্য তালিকায় উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে খাদ্যের পরিমাণ বেশি রাখতে হবে। খাদ্য তালিকায় নিয়মিত শাকসবজি, ফলমূল ইত্যাদি সঠিক পরিমাণে রাখতে হবে। এর ফলে আমাদের শরীর ও মন সুস্থ থাকবে, আমাদের দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে অর্থাৎ আমরা বিভিন্ন রোগ জীবাণু থেকে বেঁচে থাকতে পারবো।
আমরা অনেক সময় প্রাণিজ উৎস থেকে প্রাপ্ত তৈলাক্ত খাবার গুলো যেমন মাছ, মাংস বা চর্বি অপরিমিত মাত্রায় অনেক বেশি খেয়ে থাকি। কিন্তু কখনও মনে করি না যে এটা আমাদের শরীরের জন্য কতটা ক্ষতিকর। অতিরিক্ত পরিমাণে তৈলাক্ত বা চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া আমাদের হার্টের আর্টারিতে চর্বি জমে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ। তাছাড়া হাইপারেটনশন, ব্রেন স্ট্রোক, হাই কোলেস্টেরল লেভেল, ডায়াবেটিস ইত্যাদিরও কারণ বটে ।
এজন্য প্রাণিজ উৎস থেকে খাদ্য গ্রহণ করার ক্ষেত্রে অবশ্যই সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। একটা কথা সব সময় আমাদের মনে রাখতে হবে যে, প্রাণিজ উৎস থেকে যে সমস্ত পুষ্টি উপাদান আমরা পাই উদ্ভিজ্জ উৎস থেকেও সেই সমস্ত পুষ্টি উপাদান কিন্তু পেতে পারি। উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে গ্রহণকৃত পুষ্টি উপাদানের মাধ্যমে আমাদের শরীরকে অবশ্যই সুস্থ রাখতে পারি। তাহলে নিজেদেরকে সুস্থ রাখতে হলে প্রাণিজ উৎস থেকে অবশ্যই পরিমিত মাত্রায় এবং উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে বেশি পরিমাণে খাদ্য আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে। তবে খাদ্যতালিকা নির্ধারণের ক্ষেত্রে বয়স, ওজন এবং উচ্চতার দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। উল্লেখ্য যে শিশুদের বাড়তি ওজনের জন্য এবং দৈহিক বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে হলে প্রাণিজ উৎস থেকে খাদ্যের পরিমাণ কিছুটা বেশি দিতে হবে। আবার অনেক সময় পরিশ্রম এর ধরন অনুযায়ী খাদ্য তালিকায় খাদ্যের পরিমাণ এর তারতম্য হতে পারে। সর্বোপরি একটি সঠিক খাদ্য তালিকা আপনার অনেক রোগ থকে বাঁচিয়ে রাখবে।
পরিমাণমতো খাদ্য গ্রহণ করুন এবং সুস্থ থাকুন। আমরা যদি পরিমাণমতো সঠিক ডায়েট চার্ট ফলো করে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের খাবার গ্রহণ করি তাহলে অবশ্যই আমরা সুস্থ থাকবো এবং সে ক্ষেত্রে আমাদের ড্রাগ ব্যবহারের প্রয়োজনই হবে না কারণ আমরা তো অসুস্থই হবোনা। এজন্য ড্রাগ বা ঔষধ কে না বলুন কারণ অনেক সময় ড্রাগ বা ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিজের জীবনকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।
সঠিক খাদ্য অভ্যাস গড়ে তুলুন, নিজে সুস্থ থাকুন, অপরকেও সুস্থ রাখতে সহযোগিতা করুন।
( লিখেছেন
পুষ্টিবিদ মোঃ ইদ্রিস আলী
বিএসসি অনার্স,এমএসসি – খাদ্য ও প্রযুক্তি বিভাগ,
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়)