নিরক্ষরতা একটি ভয়াবহ সামাজিক অভিশাপ। যারাই এই অভিশাপের শিকার হয়েছেন তারা নিজের যোগ্যতা, ক্ষমতা ও সম্ভাবনাকে কখনোই আবিষ্কার করতে পারেন না। তারা সমাজের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারেন না। এররকম যুগে এসেও যারা শিক্ষাকে গুরুত্ব দেয় না। শিক্ষা গ্রহণ করে না তারা সত্যিই এ সমাজের জন্য বোঝা। তাদেরকে সমাজের দুষ্টু গরু হিসেবে চিহ্নিত করা হয় তাহলে প্রভাতটি তাদের সাথে যায় ” দুষ্টু গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো” এখন আর আগের যুগ নেই যে পঞ্চম শ্রেণি পাশ করেই সরকারি চাকরি পাওয়া যাবে। এখন অনেক প্রতিযোগিতার সময়, অনেক শিক্ষিত হলেও এখানে সহজে টিকে থাকা যায় না। তাই বর্তমান সময়ে শিক্ষার গুরুত্ব অপরিহার্য।
সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে দিন দিন বাংলাদেশের শিক্ষার হার বেড়েই চলছে। ১৯৮১ সালে বাংলাদেশের শিক্ষার হার ছিল ২৯.২% আর এখন ২০১৯ সালে এসে বাংলাদেশের শিক্ষার হার প্রায় ৭৫% যাদের মধ্যে মেয়েদের শিক্ষার হার প্রায় ৭০% আর ছেলেদের প্রায় ৭৬%। অর্থাৎ প্রায় ৪৫% শিক্ষার হার বৃদ্ধি পেয়েছে গত ২০ বছরে, যা সত্যিই আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। আমরা আশাবাদী অতিশীঘ্রই আমাদের দেশের শিক্ষার হার ৯০% এর উপরে উঠে যাবে এবং একদিন আমাদের দেশে শতভাগ শিক্ষিত থাকবে, সেইদিন আমাদের দেশ উন্নত হবে।
বাংলাদেশের সাক্ষরতার হার গত দুই দশকে উল্লেখযোগ্য হারে বাড়লেও আমাদেরকে থেমে থাকলে চলবে না। পারি দিতে হবে বহু পথ। তারই ধারাবাহিতায় বাংলাদেশ সরকার প্রত্যেক গ্রামে একটি করে প্রাইমারী এবং প্রত্যেক উপজেলায় অন্তত একটি উচ্চ বিদ্যালয় নির্মান করেছেন। এর মাধ্যমে দূর হবে নিরক্ষরতা এবং শিক্ষিত যুবকদের আয়ের পথ সুগম হবে। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে প্রত্যেক প্রাইমারি বিদ্যালয়ে ছেলেমেয়েদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করবে সরকার যার কারণে ছাত্রছাত্রীরা আরো আগ্রহী হয়ে বিদ্যালয়ে আসবে। সবাইকে বিদ্যালয় মুখী করাই বাংলাদেশের সরকারের প্রথম লক্ষ্য। কিছু নিয়ম করলে বাংলাদেশের শিক্ষার হার আরো অনেক আংশে বৃদ্ধি পাবে। যেমন : সকলের জন্য প্রাইমারী বিদ্যালয়ের শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা।
শিক্ষার কারণে আমাদের দেশের নানান সামাজিক অপরাধের প্রকটতা কমছে। কমছে বাল্যবিবাহ, কমছে বাচ্চাদের চুরি ছিন্তাই এর ঘটনা। যা একটা সময় বাংলাদেশের আতংকের প্রধান কারণ ছিল। সবাই বিদ্যালয় মুখী হওয়ায় এসব অপরাধ এখন অনেক কমে গেছে।
বাংলাদেশ শিক্ষাকে অনেক গুরুত্ব দিচ্ছে। কেননা শিক্ষা মানুষের একটি সাংবিধানিক অধিকার আর এ অধিকার নিশ্চিত করতে না পারলে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তারা দায়ী থাকবে। নিজের নাম লিখে সই করতে পারাই কেবল সাক্ষরতা নয়। সাক্ষরতা হলো নিজেকে প্রকাশ করা ভিন্ন ভাবে। তাই আমাদের সকলকে ভালো ভাবে শিক্ষিত হতে হবে, যেনো যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারি।