আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় পাঠকবৃন্দ, আশা করি সবাই ভালো আছেন। সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় আমিও ভালো আছি। কিসের অভাবে মুখে ঘা হয় | করণীয় কি? তা নিয়েই আজকের এই পোস্টে মূলত আলোচনা করা হবে। আশা করি আপনাদের অনেক ভাল লাগবে।
মুখের ঘা কি?
আমাদের মুখে একটি নরম আবরণ থাকে। একে মিউকাস মেমব্রেন বলে। মূলত এই নরম আবরণটি ক্ষতিগ্রস্থ হলে মুখে ঘা দেখা যায়। এটি ছোঁয়াছে নয়। এই ঘা ওতটা মারাত্মক নয় কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি ভয়াবহ রূপ নিয়ে পারে। এমনকি এটি ক্যান্সারের পূর্ব লক্ষণও হতে পারে। তাই কখনই এটিকে অবহেলা করা যাবে না। তো এই পোস্টে আমরা মূলত এই মুখের ঘা কেন হয় ও তার প্রতিকার কি তা নিয়ে আলোচনা করব। তার পূর্বে আমরা মুখের ঘা ঠিক কোথায় হয়, উপসর্গ এসব নিয়ে আলোচনা করব। তো শুরু করা যাক।
মুখের ঘা এর উপসর্গ কি?
ঘা রোগের উপসর্গ কি বা কিভাবে আপনি আগে থেকেই বুঝবেন যে আপনার ঘা হয়েছে?
ঘা রোগের সবচেয়ে সাধারণ কিছু লক্ষণের মধ্যে রয়েছে মুখের ভিতর লাল হয়ে যাওয়া, নরমাল খাবারে অত্যাধিক ঝাল লাগা, ব্যথা করা ও কোনো খাবার খাওয়ার সময় মুখের মধ্যে খুব জ্বালাপোড়া অনুভূতি। এছাড়া গরম খাবার বা পানীয় যেমন চা বা কফি খেলেও জ্বালাপোড়া বা অস্বস্তি বোধ হতে পারে। লাল হয়ে যাওয়া স্থানে চুলকানি হওয়া।
উপরোক্ত লক্ষণগুলো একদম সাধারণ এবং এর জন্য বিশেষ কোনো চিকিৎসা কিংবা ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হয় না।
এছাড়া কিছু বিশেষ লক্ষণ থাকে। এসকল উপসর্গ দেখা দিলে মনে করতে হবে যে রোগটি মারাত্মক আকার ধারণ করার সম্ভাবনা আছে।
বিশেষ উপসর্গের মধ্যে রয়েছে দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া, ফোস্কা পড়া বা পুঁজ বের হওয়া ও ঘা এর স্থান থেকে রক্ত বের হওয়া। ক্ষতস্থান বড় হয়ে যাওয়া। ঘা এর সাথে সাথে জ্বর হওয়া। মুখের গ্রাস ছোট হয়ে যাওয়া।
উপরোক্ত লক্ষণগুলো দেখা দিলে মোটেও অবহেলা করা যাবে না। এবং যদি লক্ষণগুলো অনেকদিন দেখা দেয় সেক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
ঘা রোগ হয় কোথায়?
ঘা রোগ মুখগহ্বরের বিভিন্ন স্থানে হতে পারে। মূলত ঠোঁট বা দাঁতের দেয়ালে কিংবা ঠোঁটের কোণে ঘা হতে পারে। উপরের বা নিচের জিহবায় কিংবা দাঁতের মাড়ির গোড়ায়ও ঘা হতে পারে। ঘা এসকল স্থানের যেকোনো একটি নির্দিষ্ট স্থানেও হতে পারে আবার সব স্থানে একসাথেও হতে পারে। আমাদের দেশের প্রায় ১৫ থেকে ৩০ শতাংশ এ রোগে আক্রান্ত হয়। শিশুদেরও এ রোগ হতে পারে। নারীরা সাধারণত ঘা রোগে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে।
এখন মুখে ঘা কেন হয় ও তার প্রতিকার নিয়ে কথা বলা যাক।
কিসের অভাবে মুখে ঘা হয় ?
মুখে ঘা হওয়ার বেশ কিছু কারণ আছে। নিচে সাধারণত যেসকল কারণে মুখে ঘা তা নিয়ে কথা বলা যাক।
১. সবচেয়ে সাধারণ কারণ হচ্ছে মুখের যত্ন না নেওয়া।
২. নেশা জাতীয় দ্রব্য, মদ্যপান, ধূমপান, পান, সুপারি ইত্যাদি গ্রহণ করলেও মুখে ঘা হওয়া সম্ভব।
৩. পুষ্টির অভাব বিশেষ করে ভিটামিনের অভাবেও মুখে ঘা হয়ে থাকে।
৪. ভুলে বেশি জোরে দাঁত ব্রাশ করলেও মুখের ভিতরের বিভিন্ন নরম স্থানে ব্যথা লাগতে পারে যার ফলে ঘা দেখা দিতে পারে।
৫. ঠাণ্ডা লাগলেও মুখে ঘা হতে পারে।
৬. অতিরিক্ত মানসিক চাপ/স্ট্রেস ও দুশ্চিন্তার জন্যও ঘটতে পারে।
৭. বংশজনিত কারণেও মুখে ঘা হতে পারে।
৮. ছত্রাক বা ভাইরাসের দ্বারাও ঘা হতে পারে।
৯. ক্যান্সার, এইডস বা ডায়বেটিস আছে এমন ব্যক্তিরও মুখে ঘা হতে পারে যেহেতু তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হয়ে থাকে।
১০. পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম না পেলেও ঘা হয়।
১১. অতিরিক্ত গরম বা ঝাল খাবার বা পানীয় গ্রহণ করলেও মুখে ঘা হতে পারে।
১২. হরমোনের ভারসাম্যের তারতাম্য ঘটলে কিংবা থাইরয়েডে সমস্য হলেও মুখে ঘা হয়ে থাকে।
মুখের ঘা এর প্রতিকার কি?
মুখের ঘা প্রতিরোধ বা প্রতিকার করার নানা উপায় রয়েছে। প্রতিরোধ বা প্রতিকার করার জন্য কি করতে হবে বা খেতে হবে তা জানার জন্য প্রথমে ঘা হয়েছে কেন তা বের করতে হবে। আর ঘা হওয়ার বেশিরভাগ কারণই উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। মুখে ঘা হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে পুষ্টি উপাদান বিশেষ করে ভিটামিনের অভাব। আর সে কারণে যদি মুখে ঘা হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে ভিটামিন খেতে হবে। কি কি ভিটামিন খেতে তা নিয়ে পরবর্তীতে আলোচনা করা হবে।
অতিরিক্ত নোনতা বা ঝালযুক্ত খাদ্য পরিহার করতে হবে। অতিরক্ত চা বা কফি পরিহার করতে হবে। মাদকদ্রব্য, মদ, ধূমপান, পান-সুপারি ইত্যাদি খাওয়া ত্যাগ করতে হবে। কোনো কিছু নিয়ে বেশি চাপ বা চিন্তা করা যাবে না। পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে ও প্রতিদিন রাতে গড়ে আট ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করতে হবে। মুখের যত্ন নিতে হবে ও খুব জোরে দাঁত ব্রাশ করা যাবে না। ক্ষতস্থানে বারবার হাত দেওয়া যাবে না। মুখের ঘা অনেক দিন স্থায়ী হলে কিংবা মারাত্মক রূপ ধারণ করলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
মুখে ঘা হলে কি ভিটামিন খাওয়া উচিত?
আগেও বলা হয়েছে মুখের ঘা এর অন্যতম প্রধান কারণ ভিটামিনের অভাব। মুখের ঘা দূর করার জন্য খাদ্যে নিয়মিত ভিটামিন এ, সি, ই ও বি-১২ রাখুন। এ, সি, ই এগুলো সবুজ শাকসবজি কিংবা ফলে পাবেন। আর ভিটামিন বি-১২ এর জন্য খাদ্য তালিকায় দুধ, কাঁচা কলা, টক দই ইত্যাদি রাখুন।
এর পাশাপাশি খাদ্য তালিকায় আয়রন, ফলিক এসিড ইত্যাদি পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ খাদ্য রাখুন। (বি:দ্র: ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ঔষধ সেবন করবেন না।)
পোস্টটি কেমন লাগলো দয়া করে কমেন্টে জানাবেন, যদি ভাল লেগে থাকে তাহলে অবশ্যয় শেয়ার করবেন, পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। এমন সব দারুন দারুন পোস্ট পেতে Grathor এর সাথেই থাকুন এবং গ্রাথোর ফেসবুক পেইজ ও ফেসবুক গ্রুপ এ যুক্ত থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।