তানিয়া রান্নাঘরে গিয়ে নিজের জন্য এক প্লেটে আরেক প্লেটে নয়নের জন্য ভাত বেড়ে নিল। তাপর একটি বাটিতে দুইজনের জন্য কিছুটা তরকারি ঢেলে নিল। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর নয়ন খেতে আসল। তানিয়া নয়নের পাতে তরকারি উঠিয়ে দিতে দিতে বলল- তোমারে কইলাম তুমিও যাও। যাইয়া সন্ধ্যা বেলা আইয়া পড়তা।
– হ, তর কতায় হওরের(শ্বশুর) বাড়ি বইয়া থাহি আর এদিগি ক্ষেত খামার নষ্ট অওক। আমার এহনি ক্ষেতে যাওন দরকার, খাওয়া দাওয়া কইরা ক্ষেতে পানি তুলমু যায়া। এই কথা বলে খাওয়া শুরু করল নয়ন। তার দেখাদেখি তানিয়াও ক্ষেতে আরম্ভ করল।
– তুমি তাইলে কবে যাবা? তানিয়া জিজ্ঞেস করলো নয়নকে।
– তুই যা, আমি দুইদিন (কয়েকদিন) পর যাইয়া দুই একদিন থাইক্কা তরে নিয়াই রো।
– তাইলে হাইনজাবালা (সন্ধ্যায়) মুরগীগুলা খোয়াড়ে তুইল্লা রাইখো। আর ছাগলডা আইলে একটু পানি খাওইয়া ঘরে বাইন্ধা রাইখো। তোমার নাইগ্গা দুফুরের ভাত রাইন্ধ্যা রাখছি। তুমার বইনেরে কইয়া দিছি রাইতে যেন তোমার নাইগ্গা ভাত রাইন্ধা দেয়। দুফুর বেলা আইয়া মনে কইরা ভাত খায়া নিও। .. এসব আলাপ করতে করতে দুজনেই খাওয়া দাওয়া শেষ করল।
– তর আতো কি টেহা আছে? নয়ন জিজ্ঞেস করল তানিয়াকে।
– না, উত্তর দিল তানিয়া
– তাইলে যাবি কিবে? আইট্টা আইট্টা? ওইদিন তরকাছে নয়শ টেহা রাখছিলাম না?
– হ
– অনথাইক্কা তিনশ টেহা নিয়া যা। বাড়ির পুলাফানের লাইগ্গা কিছু কিন্না নিয়া যাইস।
– আইচ্ছা।
– তাইলে তুই অহন যা, যাইয়া উটলে (পৌছলে) ফোন দেইস।
– ঠিক আছে, আমি তাইলে গেলাম। ক্ষেত থাইক্কা ফিরা আয়া, তারাতারি ভাত খাইয়া হাইরো। – এই বলে তানিয়া ব্যাগ হাতে নিয়ে রওয়ানা দিল। ওদিকে নয়ন উঠান থেকে কোদালটি কাঁধে নিয়ে ছুটলো মাঠের দিকে।
নয়ন: হায় আল্লা! ক্ষেত ত এহেবারে ফাইট্টা চৌচির অয়া গেছে দেহা যায়। তার কথা শুনে পাশের বাড়ির ময়নার বাপ বলে উঠলো-
– ক্ষেত ফাটতো না? তরে পশুদিন (পরশুদিন) কইলাম তর ক্ষেতে পানি দিওন লাগবো। আর আইজ দুইদিন অয়া গেছে ক্ষেতে আবার (আসার) তর খবর নাই। ফাটবোই ত।
– কাহা (চাচা) আর কইওনা! দুইদিন করিম চাচার কামলা দিছিলাম। আর এর মধ্যে ক্ষেতের এই অবস্থা। তোমার ক্ষেতে ত জালা (ধানের চারা) অনেক ভালা অইছে।
ময়নার বাপ : তরটাও ভালা অইত। যদি সময়মত পানি দিয়া দিতি। আর এহনো অত খারাপ অয় নাই। ঠিকমত দুইদিন পানি দে। দেখবি তর জালাবিরছাও (ধানের চারার ক্ষেত) সুন্দর অয়া যাবো।
– ঠিক আছে কাহা, দেহি কামালের মেশিনডা ঠিক আছে কি-না। ক্ষেতে তাড়াতাড়ি পানি দেওয়ার ব্যবস্থা করি। এই বলে নয়ন কামালদের মেশিন ঘরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিল। (চলবে)