গত শনিবার সকাল ৮টা২০ মিনিটে মারা যান আবদুল কাদের ওরফে বদি অথবা দীর্ঘদিন ধরে ইত্যাদিতে অভিনয় করা মামা-ভাগ্নের মামা। এই মহামারিতে অনেক বিখ্যাত গুণীজনেরা চিরবিদায় নিয়েছেন। সেই তালিকায় যুক্ত হলো আরেকটি নাম! বনানী কবরস্থানে তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত হন। টিভির পর্দায় আর দেখা যাবে না তাকে। হাস্যরসের মধ্য দিয়ে দর্শকহৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি।
কষ্টকর হলেও সত্যি যে, রটে যাওয়া গুজবটাই শেষপর্যন্ত সত্যি হয়েছে। এর আগে চিকিৎসারত অবস্থায় থাকাকালীন তার মৃত্যুর গুজব রটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। পরবরতীতে তার পরিবারের পক্ষ থেকে বিষয়টিকে গুজব বলে নিশ্চিত করা হয়। কিন্তু তার হাতে সময় বেশি ছিলো না। কে জানতো সেই মিথ্যে খবরই সত্যিতে বদলে যাবে? দীর্ঘদিন ক্যান্সারের সাথে লড়াই করার পর অবশেষে হার মানলেন তিনি!
অনেক চরিত্র তিনি করেছেন। ছোট- বড় নানা কাজের সাথে তিনি যুক্ত ছিলেন। কিন্তু সবচেয়ে বেশি পরিচিত ছিলেন বাকের ভাই নাটকে বদি চরিত্রের কারণে। বদি চরিত্রে অভিনয়ের কারণে দর্শকমহলে তিনি তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করেন। হুমায়ুন আহমেদের বাকের ভাই নাটকে বাকের ভাই চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন আসাদুজ্জামান নূর। সেইসময় আবদুল কাদেরের বাসায় ঢিল পর্যন্ত ছোড়া হয়েছিলো বাকের ভাইয়ের ফাঁসি আটকাতে। এরপর একটি ইন্টারভিউতে তিনি বলেছেন- বাকের ভাইয়ের ফাঁসি হোক, এটা তিনিও চাননি। এরপর ইদানিং পর্দায় তার উপস্থিতি তেমন একটা দেখা যেতো না। শারীরিক জটিলতার কারণে টেলিভিশন, ক্যামেরা, লাইট, অ্যাকশনের জগতে তার আনাগোনা কমে গিয়েছিলো।
গল্প তো গল্পের মতো এগিয়ে গেছে। সবাই ভেবেছিলো হয়তো আবদুল কাদের সুস্থ হয়ে ফিরে আসবেন। আবার ইত্যাদিতে তাকে দেখা যাবে ভাগ্নেকে শুধরে দিতে। কিন্তু সেটা আর হলো না! নব্বই দশকের দর্শকেরা বদিকে মনে রাখবে। এখনকার প্রজন্ম আগের সেই নাটক দেখে অভিভূত হবে। চলে যাওয়াটা আসলে প্রকৃতির নিয়ম। সব গল্পই শেষ হয় তেমনি জীবনের গল্পটাও এক জায়গাতে এসে থেমে যায়। আর এগোয় না। এগোতে পারে না।
আর কোনো নতুন চরিত্রে দেখা যাবে না আবদুল কাদেরকে। বাকের ভাই, বদির মতো চরিত্র বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয়বার আর ফিরবে না। ইত্যাদিতে মামাকে আর দেখা যাবে না ভাগ্নেকে সদুপদেশ দিতে। ভাগ্নের কাজে বিরক্ত হয়ে আর অভিযোগ জানাবেন না মামা। করোনার কারণে এ বছর ইদেও ইত্যাদি প্রচারিত হয়নি। এরপর সব ধকল কাটিয়ে যখন ইত্যাদি আবার প্রচারিত হবে, শূন্য থাকবে মামার জায়গাটা! হাসির মধ্য দিয়েও শেখার আছে আর কোনো সিদ্ধান্ত নেবার আগে সবদিক বিবেচনা করা উচিত, এই বিষয়টা মামা ভাগ্নেকে সবসময় বলতেন।
আবদুল কাদের না ফেরার দেশে চলে গেলেন। তবুও মানুষ তাকে মনে রাখবে তার কাজের জন্য। আজীবন দর্শক হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন জনপ্রিয় অভিনেতা আবদুল কাদের!