খেলোয়াড় কেনায় অবাধে পেট্রো ডলার খরচ করছিল ম্যনচেস্টার সিটি।শুধু রক্ষণের খেলোয়াড় কেনার পেছনেই ২০১৮ সালে ম্যানসিটি কর্তৃপক্ষ খরচ করেছিল ২৮৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি,স্রেফ ট্রান্সফার ফি বাবদ,খেলোয়াড়ের বেতন,এজেন্ট কমিশন বাদে! ম্যানসিটির মতো ক্লাবগুলো এভাবে দেদার টাকা ছড়িয়ে ফুটবলারদের দলবদলের বাজার অস্থির করে দেওয়ার বিরুদ্ধে ইউরোপের প্রথাগত ক্লাবগুলোর প্রধানরা সব সময়ই ছিলেন সরব।উয়েফার সাবেক সভাপতি মিশেল প্লাতিনি এটিকে বলেছিলেন ‘ফিন্যান্সিয়াল ডোপিং’।এই বৈষম্য রুখতেই উয়েফা স্বাধীন একটি অার্থিক কমিশন রেখেছে,যাদের কাজ হচ্ছে ক্লাবের আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য নজরে রাখা ও নিয়ন্ত্রণে আনা।সেই সংস্হা সিএফসিবি আগামী দুই বছের জন্য চ্যাম্পিয়ন্স লীগ থেকে নিষিদ্ধ করেছে ম্যানসিটি ফুটবল দলকে,সেই সঙ্গে জরিমানা হয়েছে ৩০ মিলিয়ন ইউরো।তাদের বিরুদ্ধে স্পন্সরশীপ থেকে আয় বাড়িয়ে দেখানোসহ উয়েফাকে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।২০১২ থেকে ২০১৬ সালের অার্থিক প্রতিবেদনে গরমিল করার অপরাধে এই শাস্তি।
ঘটনার সূত্রপাত ২০১৮ সালের নভেম্বরে।জার্মান ম্যগাজিন ‘ডের স্পিগেল’ গোপন নথি থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে দাবি করে ম্যানসিটি কর্তৃপক্ষ উয়েফার স্বাধীন অার্থিক কমিশনকে ভুল তথ্য প্রদান করার মাধ্যমে বিভ্রান্ত করে আসছিল।তারা স্পন্সরশীপের অংকগুলোকে বাড়িয়ে দেখাচ্ছিল,যেখানে তারা আসলে সরাসরি অর্থ পাচ্ছিল আবুধাবির শেখ মনসুরের কাছ থেকে।এ ব্যাপারে উয়েফা তদন্ত শুরু করে ২০১৯ সালের মার্চে।এরপর নানা আইনি প্রক্রিয়া ও টানাপড়েন শেষে ভালোবাসা দিবসেই চূড়ান্ত রায় হিসেবে এই শাস্তি দেয় উয়েফা।
অর্থাৎ ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ মৌসুমে ইউরোপসেরা হওয়ার প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবে ‘সিটিজেন’রা,যে ট্রফি এখনো অধরা ম্যানসিটির।তবে ক্লাবটির মহিলা দল এ শাস্তির আওতার বাইরে থাকবে।২০১৪ সালেও একই ধরনের অপরাধের কারণে ৪৯ মিলিয়ন পাউন্ড জরিমানা হয়েছিল ক্লাবটির।এখানেই শাস্তির শেষ নয়।উয়েফা লাইসেন্সিং ও প্রিমিয়ার লিগের নিয়ম-কানুনের আওতায় একই অপরাধে প্রিমিয়ার লিগের পয়েন্টও কাটা হতে পারে ম্যানসিটির।এই রায়কে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও পক্ষপাতদুষ্ট বলছে ম্যানসিটি।ক্লাব কর্তৃপক্ষ এই রায়ের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আদালতে আপিল করবে বলে জানিয়েছে।
ম্যানসিটির এ দন্ডাদেশকে ঘিরে কোচ পেপ গার্দিওলার ভবিষ্যৎকে নিয়ে তৈরি হয়েছে আশণ্কা।২০২১ সালে ম্যানসিটির সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ ফুরাচ্ছে গার্দিওলার,এই স্প্যানিশ কোচ সব সময় বলে এসেছেন চুক্তির মেয়াদ পূর্ণ করার সময় পর্যন্ত তিনি ম্যানসিটিতেই থাকবেন।কিন্তু এ শাস্তির কারণে শেষ পর্যন্ত যদি ম্যানসিটিকে বাদ পড়েই যেতে হয় চ্যাম্পিয়ন্স লীগ থেকে,তাহলে হয়তো নতুন করেই ভাববেন গার্দিওলা।এমনকি অনেক ফুটবলারও হয়তো মৌসুম শেষে খুজবেন নতুন ঠিকানা।ফলে ক্লাবটি যে বড় দুর্দশায় পড়তে যাচ্ছে,এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।