১ মাস আগেই ঈশানের পাশের ফ্ল্যাটে একটি নতুন পরিবার উঠেছে। ৪ জন ছেলে ও একটি মেয়ে।ছেলেগুলো যে মেয়েটির ভাই সেটা বোধহয় বিল্ডিঙয়ের কেউই জানতো না। এমনকি স্বয়ং ঈশানও না। কাজেই বিল্ডিঙয়ের অন্যান্য মহিলাদের কানাঘুষার সাথে কিছুটা সন্দেহ ঈশানের মধ্যেও ঢুকেছিলো। বিল্ডিঙয়ের বিশিষ্ট চোগলখর মহিলাদের নতুন ভাড়াটিয়া মেয়েটিকে ‘দুশ্চরিত্রা’ সম্বোধন করাটা কেন জানি ঈশানের আঁতে লেগেছিলো।
বিল্ডিঙয়ের কিছু মুখোশধারি গণ্যমান্য ব্যক্তিরা বাড়িওয়ালার কাছে অভিযোগ দায়ের করতে গিয়েছিলো।তখনই জানতে পারে,মেয়েটির সাথে বাকি ছেলেগুলোর সম্পর্ক ভাই-বোনের। বাড়িওয়ালা ছাড়া আর কেউ জানতো না ব্যাপারটা। অবশ্য যৎসামান্য ব্যাপারটা যেন এতজনের ঘুম হারাম করে দিবে,সেটা বাড়িওয়ালা নিজেও টের পাননি। সেদিন থেকেই ঈশানের মনে সেই ভাড়াটিয়া মেয়েটির জন্য মায়া জন্মাতে শুরু করে।
তবে,যতই দিন যেতে থাকে, ঈশান বুঝতে পারে, এই মেয়েটির জন্য মায়া সহানুভূতির মায়া নয়। এই মায়া স্রষ্টা প্রদত্ত সৃষ্ট সবচেয়ে সুন্দরতম অনুভূতিরই আরেক নাম।
মেয়েটির নাম ছিলো অধরা। সেতার ৪জন ভাইদের সাথে যে খুব শান্তিতে ছিলো সেটা বললে বিরাট ভুল হয়ে যাবে। বাইরে থেকে অধরাকে যতটা হাসিখুশি দেখাতো,ভেতরে ভেতরে সে ঠিক ততটাই দুঃখের অনলে,অশান্তির অনলে জ্বলে পুড়তো। প্রায়ই ঈশান মেয়েটির চিৎকার আর কান্নার শব্দ শুনতে পেতো। অধরার রগচটা ভাইয়েরা কারণ ছাড়াই ওর গায়ে হাত তুলতো।বাড়িওয়ালার কাছে ঈশান জেনেছে, ছেলেগুলো ৬ মাসের অগ্রিম ভাড়া দিয়ে ফ্ল্যাটে উঠেছে। টাকার মাতাল করা ঘ্রানে বাড়িওয়ালা সব জেনেও চুপ থাকতো। কেউ অভিযোগ করতে এলে বলতো,
“নিজেদের সমস্যা নিজেরা দেখুক। আমার তাতে কি!”
ঈশান আগে থেকেই জানতো,এই ছেলেগুলো সুবিধের না। একবার অধরার ভাইদের দুজন ভয়ংকর মদ্যপ অবস্থায় বাসায় ফিরে এতটাই প্রহার করেছিলো যে, ১ মাস পর্যন্ত দগদগে ঘা সবার দৃষ্টি আকর্ষন করেছিলো।
অধরা নামের সেই মেয়েটির সাথে পরিচিত হবার সৌভাগ্য ঈশান পায়নি।তবু ঈশান অপেক্ষা করেছে সেই দিনের,যখন সে দৃঢ় মনোবল নিয়ে অধরার ভাইদের অধরাকে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাবে।
সেদিন তো ঈশান একদম দৃঢ়তার সাথে অধরার সাথে দেখা করবে বলে মনঃস্থির করেছিলো।
ঈশান বুঝতে পারছিলো,যদি প্রস্তুতি নেয়ার জন্য একটু দেরিও সে করে,তাহলে আর কোনো কথাই বলা হবে না ওকে।তাই তো নিজের অজান্তে জন্ম নেয়া দৃঢ়তার সাথে অধরার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলো সে। কিন্তু…………।
দুপুরবেলা অফিস থেকে তাড়াতাড়ি ফিরে বাসার কাছে আসতেই পুলিশের গাড়ি দেখে ঈশানের খটকা লাগে।বাড়িওয়ালা পুলিশের সাথে কি যেন কথা বলছেন। পুলিশ চলে যাবার পর ঈশান বাড়িওয়ালাকে কি হয়েছে তা জানতে চাইতেই বাড়িওয়ালা জানালেন,অধরা নামের মেয়েটি ফ্যানের সাথে ওড়না পেঁচিয়ে আত্নহত্যা করেছে। খুব সম্ভবত ভাইদের অত্যাচার নিতে পারেনি সে।
কথাটা শোনার পর ঈশান উল্টোপথে হাঁটা শুরু করল।ঈশান চোখের কোনে অসতর্কতায় বেরিয়ে আসা নোনা অশ্রুকে বাধা দিলো না।