কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত!কে না যেতে চায় সেখানে!সমুদ্রের নীল জলে কে ই না ভেজাতে চায় দুটি পা!সমুদ্রের কথা মনে হলেই মনে পড়ে যায়,দারুচিনি দ্বীপের সেই লাইন,”যাব যাব যাব যাব যাব…সাগরের নীল জলে ডিগবাজি খাব,আমরা সাগরের ভৃত্য।” কত পরিকল্পনা কত প্রস্তুতি!!কত কত দিনের সব সাধনা!তবে আমি এ দিক থেকে ভাগ্যবান বলা যেতে পারে,কারণ আমি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে প্রথম পা ভেজানোর সুযোগ পেয়েছিলাম কলেজে থাকতে।কলেজ থেকে আমাদের সাত দিনের এক্সকারশন বা আনন্দভ্রমণ ছিল কক্সবাজারে।সাধারণত যা হয়,পরিবার নিয়ে কক্সবাজার ভ্রমণ করা হয়,কিন্তু ছাপান্ন জন বন্ধুকে নিয়ে ভ্রমণ তাও সাতদিনের জন্য অসম্ভব ভালো লাগা কাজ করে।
দিনটি ছিল ২০১৭ সালের ১২ ই নভেম্বর।সকাল নয়টার দিকে কলেজ বাসে রওনা দিয়েছিলাম আমরা।যেহেতু জয়পুরহাট থেকে রওনা দিয়েছিলাম,তাই অনেক সময়ের ব্যাপার ছিল।ষোল ঘন্টার জার্নি।বাসের মধ্যে সবার কম্বল বালিশ ছিল,যেহেতু শীতকাল ছিল। আর সবার জিনিসপত্রে বাসটা বোধহয় একটি বস্তিতে পরিণত হয়েছিল।বাসে সবার নাচ,গান,চিল্লাচিল্লি সে যেন এক অন্যরকম ব্যাপার ছিল।
অনেক রাতে গিয়ে আমরা যেখানে রাতে থাকবো সেখানে পৌঁছালাম।রাতটা ওখানে কাটিয়ে আবারও কক্সবাজারের দিকে দৌঁড়।চট্টগ্রাম এ পৌঁছে পথে অসংখ্য পাহাড় দেখলাম।বাসের জানালা দিয়ে একপাশে তাকালে অন্যপাশের দৃশ্য যেন মিস হয়ে যাচ্ছিল।অনেকগুলো পাহাড় দেখলাম ঝরণা সহ।এত সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যের ভেতরে মন সবসময় চাচ্ছিল কখন সমুদ্রের সেই ঢেউয়ের ধ্বনি শুনতে পাব!আর যেন দেরি সহ্য হচ্ছিল না।
মাঝখানে আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।হঠাৎ সবার চিৎকারে ঘুম ভেঙে গেল!কিন্তু কেন এত চিৎকার?সমুদ্রের গর্জন শোনা যাচ্ছে।কিন্তু সমুদ্রকে এখনো দেখা যাচ্ছে না বাস থেকে।একজন যে চট্টগ্রামের ছিল,সে বললো,আর দশ মিনিট পরই সমুদ্রকে দেখা ও শোনা দুটোই যাবে।সত্যিই তাই!কি বিশাল সমুদ্র!এখন শুধু তাকে স্পর্শ করার অপেক্ষা।
আমরা যে কমপ্লেক্স এ থাকবো সেখানে প্রতি বছরই আমাদের কলেজের সবাই এক্সকারশন এ আসে।তখনকার সময় আর কোন কলেজ ছিল না সেখানে,শুধু আমরা।ছয়তলা ভবনের একটি তলায় আমাদের আমাদের জায়গা হলো।রান্নাবান্না সব কলেজের লোকেরাই করবে আর কমপ্লেক্স এই হবে সবকিছু।তবে মনটা মুখর হয়ে ছিল কখন সমুদ্রে নামতে পারবো এই আশায়।যে সমুদ্রের গর্জন কখনো শুনিনি,তা যেন আজ প্রতিটি সময় কানে মধুর সংগীতের মতো বেজে চলেছে।সবাই ফ্রেশ হয়ে সারপ্রাইজ টা পেলাম।সমুদ্রে নামা যাবে এখন।বলে নেওয়া ভালো,আমাদের হোটেল টা আসল সমুদ্র সৈকত থেকে কিছুটা দূরে ছিল,কোনো বাইরের লোকজন ছিলোই না সেখানে।কেউ সচরাচর আসেও না সেখানে।সবাই দুই কিলোমিটার দূরে ইনানীবীচ এ যায়।তাই আমরাই ছিলাম এই সৈকতের রাজা।যখন তখন সবাই মিলে নেমে যেতে পারতাম সৈকতে।অনেক অনেক দূর পর্যন্ত গেলাম ভেজার জন্য।
সবচেয়ে মজার ছিল রাতের বেলা।হোটেলের ছাদে।আকাশের দিকে তাকিয়ে অনেকে শুয়ে ছিলাম আমরা অনেকজন।আকাশ যেন জ্বল জ্বল করছিল তারায়।এরমধ্যে ক্লাসমেটরা গান শুরু করলো।দুইদিন সকাল বেলা সূর্যায়াস্ত আর সূর্যোদয় দেখলাম।আসল সমুদ্র সৈকত অর্থাৎ ইনানী তেও বেড়াতে গিয়েছিলাম।নানারকম আচার,শাল,আরও সামুদ্রিক পাথর কিনে এনেছিলাম।সবচেয়ে বড় কথা এ কয়দিন আমাদের খাওয়াদাওয়া ছিল জম্পেশ।রূপচাঁদা,শুটকি,আরও নানা সামুদ্রিক মাছ।
দেখতে দেখতে সাতদিন শেষ হয়ে গেল।আসার দিন চলে এলো।বাসে উঠে শুধু মনে হচ্ছিল,সমুদ্র যেন শেষ না হয়।সমুদ্রের সেই গর্জন যেন মিলিয়ে না যায়।
কিন্তু ফিরে আসার পর সেই গর্জনকে প্রচন্ড মিস করছিলাম।বারবার মনে হচ্ছিলো কি যেন নেই,কি যেন নেই।হয়তো আরও অনেকবার যাওয়া হবে সেখানে,কিন্তু সব ক্লাসমেটের সাথে হয়তো আর হবে না,এমন ভাবে!!!
ভালো
Thanks.
অসাধারণ
Nice
well
nice, keep it up
Good
ok