Cheap price backlink from grathor: info@grathor.com

জীবনের ১ম মিছিলে পুলিশের তাড়া!

আমি আমার জীবনে ১ম বার মিছিলে গিয়েছিলাম সপ্তম শ্রেণিতে পড়াকালীন সময়ে। কিসের মিছিল জানো?
সে সময় ঢাকায় একটা ছাত্র গাড়ি চাপা পড়ে মারা গিয়েছিল। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন শহরে ছাত্ররা মিছিল বের করেছিল। আমাদের ঠাকুরগাঁওয়ে ছাত্রদের কোনো মিছিল বের হলে, সবার ১মে আমাদের স্কুল বের করতো। আমাদের স্কুলের নাম ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়।

যে সময়ে মিছিল বের হয়েছিল, সে সময় আমি আর আমার এক বন্ধু ভয়ে সেই মিছিলে যেতে চাই নি। কারণ, আমরা এই মিছিল, মারামারি এগুলোতে ভয় পেতাম। অবশ্য আমি একাই ভয় পেতাম। আমার বন্ধু সাম্য ভয় পেত না। তবে সে এগুলো থেকে দূরে দূরে থাকতে চাইতো। কারণ, তার এসব ভালো লাগতো না।

তো যেদিন এই মিছিল ১ম বের হয়, ওইদিন আমি আর সাম্য মিছিলে গিয়েছিলাম কিনা জানা নেই। তবে ২য় দিন, আমাদের কয়েকজন বন্ধুর উৎসাহে ওই মিছিলে যোগদান করার জন্য সাহস পাই। সাম্য ভয় না পেলেও সে আমাকে জিজ্ঞাসা করলো আমি যাবো কিনা। আমি আসলে এসব ব্যাপারে খুব ভীতু ছিলাম। কিন্তু, এতগুলো বন্ধুর সামনে আমার ভয়ের কথাটা বললে, তারা আমাকে পরে ভীতু বলে খ্যাপাবে। তাই আমি মিছিলে যাওয়ার জন্য রাজি হলাম।

মিছিলে যাব বলে তো ঠিক করলাম। কিন্তু আমার মনে অনেক বেশী চিন্তা-ভাবনা ঢেউয়ের মতো উঠতে নামতে লাগলো। কারণ, আমি আগে কখনোই এসব মিছিলে যাই নি। মিছিলে যাওয়া তো দূরের কথা, মিছিলের পাশ দিয়ে গেলেই কেমন জানি ভয় ভয় লাগতো।

এই ভয়টা এজন্য আমার প্রায় হয়। কারণ, একবার আমি অটোতে করে একটা জায়গায় যাচ্ছিলাম। পথে মিছিলের লোকজন ওই অটোর ওপর চড়াও হয়েছিল। অটোটার ওরা বারোটা বাজাতে শুরু করে। আমার মধ্যে সে যে একটা ভয় ঢুকল, পরে মিছিল দেখলেই আমার ওই ঘটনার কথা মনে পড়ে যায়। সে যাত্রায় অবশ্য একজন বয়স্ক মহিলার ওসিলায় পৈতৃক প্রাণটা নিয়ে ঘরে ফিরেছিলাম। ওই মহিলা ওই অটোতেই ছিল। তার অনুরোধে মিছিলের লোকজন অটোটাকে ছেড়ে দেয়।

আজকেও তাই ওই ঘটনার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। আর তাই এত ভয় লাগছে। তবুও, ভীতু নামটা না নেওয়ার জন্য মিছিলের জন্য তৈরি হয়ে গেলাম।
আমাদের স্কুলের গেট থেকে মিছিল বের হলো। সামনের সাড়ি (“সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে সরকারের পদক্ষেপ কি” নাকি “সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে জনগণের সচেতনতা” কি লেখা দিয়ে যে ব্যানার তৈরি করেছিল তা মনে নেই।) একটা বড় ব্যানার নিয়ে এগুচ্ছিল। আমি আর সাম্য মিছিলের মাঝামাঝিতে আছি।

আমি একটু ছোট ছিলাম, তাই এক বড় ভাই আমার হাতে একটা লাঠিওয়ালা সাইনবোর্ড ধরিয়ে দিল। আমি লাঠিটা ধরে এগুতে থাকি। আমার মতো ১০-১২ জনের হাতে এরকম লাঠি আর লাঠির মাথায় সাইনবোর্ড ছিল। আমার হাতে থাকা লাঠির সাইনবোর্ডটিতে লেখা ছিল, “আর নয় সড়ক দুর্ঘটনা”। অন্যদেরগুলোতে কি যে লেখা ছিল, তা আমার মনে নেই। তো মিছিল শান্তি-পূর্ণভাবেই সামনে এগুচ্ছিল। মিছিল চৌরাস্তায় গিয়ে পৌঁছালো।

হঠাৎ, সামনের বড় ভাইয়েরা চৌরাস্তার পুলিশদের সাথে নাকি গাড়ির ড্রাইভারদের সাথে কি যে করলো, তার পর পরই দেখি মিছিল যুদ্ধের ময়দানে পরিণত হয়ে গেছে। পুলিশরা কি কারণে যেন ক্ষেপে গেলো। আর আমাদের মিছিলকে ছত্র-ভঙ্গ করতে লাগলো।
কিছু ছাত্র বলাবলি করতে লাগলো, সামনে পুলিশেরা আমাদের বড় ভাইদের নাকি মারতেছে। এটা সত্যি নাকি মিথ্যা তা বিচার করার পরিস্থিতি বা পরিবেশ কোনটাই তখন ছিল না। আমি খুব ভয় পেয়ে গেলাম।

এসময় কে যেন পিছন থেকে এসে আমার হাতে থাকা লাটিটা কেড়ে নিয়ে সামনে মারামারি করতে গেলো। আমি এবার আরও বেশী ভয় পেয়ে গেলাম। মিছিলের সবাই পালাতে লাগলো আপন প্রাণ নিয়ে। আমি আর সাম্য জর্জ কোর্টের ওখানে দৌড়ে পালিয়ে গেলাম। সাম্যর বাবার সঙ্গে সেখানে দেখা। সাম্যর বাবা একজন উকিল।

আমাদের দেখেই সাম্যর বাবা বলল, “তোমরা ভয় করিও না। পুলিশ কিছুই করবে না। তোমরা আশ্রমপাড়ার রাস্তা দিয়ে শিশু পার্ক দিয়ে চলে যাও। এখানে বেশিক্ষন থাকিও না।” আর সাম্যকে বলল, “এসব মিছিলে চোখ-কান খোলা রেখে আসতে হয়। তুই তোর বন্ধুকে নিয়ে মিছিলে এসেছিস! তোর কত বয়স? এখনো তো দিনকাল বাকি!”

সাম্য আর আমি তাড়াতাড়ি ওই রাস্তা দিয়ে শিশু পার্কের ওখানে গিয়ে পৌঁছালাম। এরপর সাম্য তার বাড়ির রাস্তায়, আর আমি আমার বাড়ির রাস্তায় চলে এলাম।

আমার জীবনের ১ম মিছিলেই আমি পুলিশের তাড়া খেয়েছি। এখন বড় হয়েছি। ওই ভয়টা এখন আর নেই। মাঝে মাঝে ওই ঘটনার কথা মনে পড়লে হাসি পায়। হাসিটা তখন চাপায় রাখতে পারি না। মনের অজান্তেই হেসে দিই!

Related Posts

14 Comments

Leave a Reply

Press OK to receive new updates from Firstsheba OK No