তোমরা যারা নবম-দশম শ্রেণির বিজ্ঞানের ছাত্র তাদের কাছে আজকের আলোচনা কিছুটা হলেও কাজে দেবে। আজকে তোমাদের জীববিজ্ঞান বইয়ের ১ম অধ্যায়ের ১ম পরিচ্ছেদের জীববিজ্ঞানের ধারণা নিয়ে আলোচনা করব। তোমরা তোমাদের জীববিজ্ঞান বই খুললেই ৩ পৃষ্ঠাতে এই বিষয়টি খুঁজে পাবে। তো চল দেড়ি না করে শুরু করা যাক।
আসলে জীববিজ্ঞান নামটির মধ্যেই একটা জীব নামক কোনো কিছুর অস্তিত্ব পাওয়া যায়। আমাদেরকে যদি কেউ প্রশ্ন করে, আমরা জীব না জড়? একটা বাচ্চাও বলে দিতে পারবে আমরা জীব। তো এই যে আমরা জীব, তা আমরা কি করে বুঝলাম? এটা তো সহজ ব্যাপার। যার জীবন আছে, সেই জীব। আমাদের জীবন আছে, তাই আমরা জীব।
এই সাধারণ জিনিসটা নিয়ে তাহলে মাথা ঘামানোর কি দরকার ছিল? কেন এটা একটা বিজ্ঞানের শাখায় রূপান্তর করা হলো? কেনই বা তোমাদের নবম-দশম শ্রেণির বই হিসেবে এই জীববিজ্ঞানের বইটাকে রাখল? এমন প্রশ্ন শুনলে অনেকের মাথায় হাত চলে যাবে। আর মনের অজান্তেই সে মাথা চুলকাবে।
তোমাদের কিন্তু মাথা চুলকানোর কোনো দরকার নেই। আমি সুন্দরভাবে তোমাদেরকে বলে দিচ্ছি, এই জীববিজ্ঞান আসলে কি জিনিস?
জীববিজ্ঞানের ইংরেজি প্রতিশব্দ হচ্ছে Biology. এই নামটি এসেছে ২টি গ্রিক শব্দ থেকে। একটি হচ্ছে bios আর অন্যটি হচ্ছে logos। ১ম শব্দটির অর্থ হচ্ছে জীবন। আর ২য়টির অর্থ পাঠ। তাহলে সামগ্রিকভাবে জীববিজ্ঞান শব্দটির অর্থ হচ্ছে জীবন পাঠ। অর্থাৎ, বিজ্ঞানের যে শাখায় জীবনের অস্তিত্ব, চলমান প্রবাহ নিয়ে আলোচনা করা হয়, তাই জীববিজ্ঞান।
এতো গেলো জীববিজ্ঞানের সংজ্ঞা। এই জীববিজ্ঞান কোত্থেকে কেন এলো, তা তো জানা হলো না। আসলে জীববিজ্ঞান হচ্ছে বিজ্ঞানের একটা প্রাচীন শাখা। প্রাচীনকাল থেকেই এর চর্চা হয়ে আসছে। ফলে এটা ভাবলে ভুল হবে যে, এই জীববিজ্ঞান বিজ্ঞানের নতুন শাখা।
কিন্তু এই জীববিজ্ঞান সম্পর্কে আমাদের কেন জ্ঞানার্জন করতে হয়? আমরা তো সবই জানি। যাদের জীবন আছে, তারাই জীব। তাহলে আলাদা করে কেন এই জীববিজ্ঞানকে শাখা হিসেবে পড়তে হচ্ছে?
একটা জিনিস ভেবে দেখ। আমাদের এই পৃথিবীতে এমন অনেক জিনিস আছে, যা জড় না জীব তা আমরা কখনোই জীববিজ্ঞানের জ্ঞান ছাড়া বলতে পারব না। আবার এমন অনেক জীবও আছে যারা প্রাণী নাকি উদ্ভিদ তাও বলতে পারব না, যদি না আমাদের এই জীববিজ্ঞান সম্পর্কে জ্ঞান থাকে।
তাছাড়া, এই পৃথিবীতে জীবগুলো কি করে উৎপত্তি লাভ করে? কি করে তারা বংশ সৃষ্টি করে? কি করে পরিবেশে তারা খাদ্য জোগাড় করে? কি করে প্রতিকূল পরিবেশে তারা লড়াই করে বেঁচে থাকে? কি করে তারা শক্তি পায়? ইত্যাদি ভিন্ন ভিন্ন প্রশ্নের উত্তর তুমি কীভাবে দিবে? জীববিজ্ঞানের জ্ঞান ছাড়া তুমি কি এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে?
কখনোই না। জীববিজ্ঞান জীবের সমস্ত কার্যকলাপের জ্ঞান তোমাকে সর্বাত্মক দেওয়ার চেষ্টা করবে। যেটুকু জ্ঞান দিতে পারবে না, তা জীববিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতা নয়। আমাদেরই সীমাবদ্ধতা। আমরাই এখনো অনেক জিনিস জীববিজ্ঞানে প্রবেশ করাতে পারি নি। বাদ দিই সেসব অক্ষমতার কথা।
আমরা যারা জীব-বৈচিত্র পড়তে ভালোবাসি। যারা নতুন নতুন জীব সম্পর্কে জানতে চাই, তাদের কাছে জীববিজ্ঞান একটা আশীর্বাদস্বরূপ। আবার এই পৃথিবীতে যত জীব আছে, তাদেরকে একটি শ্রেণিবদ্ধ করে সবার সামনে তুলে ধরা চাট্টি-খানি কথা নয়। কিন্তু, জীববিজ্ঞানের একটি ভৌত শাখা, নাম ট্যাক্সোনমি বা শ্রেণীবিন্যাসবিদ্যা, এই কাজটিকে সহজ করে দিয়েছে। আজ পর্যন্ত প্রায় ৪ লক্ষ উদ্ভিদের নামকরণ ও বর্ণনা লিপিবদ্ধ করেছে এই শাখা। আর প্রাণীর প্রায় ১৩ লক্ষ প্রজাতির নামকরণ ও বর্ণনা লিখে তাদের শ্রেণিবিন্যাস করেছে এই শাখা।
তাই এখন যদি কেউ কোনো প্রাণীর বৈশিষ্ট সম্পর্কে কেউ জানতে আগ্রহী হয়, তবে তাকে ট্যাক্সনমি শাখার সাহায্য নিতেই হবে। আর এই শাখাটি তো জীববিজ্ঞানরই একটি ভৌত শাখা। তাই জীব সম্পর্কে যেকোনো কিছু জানতে হলে অবশ্যই তাকে জীববিজ্ঞান পড়তে হবেই। একজন বিজ্ঞানের ছাত্রের তো এটা সম্পর্কে জ্ঞান থাকতেই হবে।
আবার চিকিৎসা ক্ষেত্রে কিংবা কৃষি ক্ষেত্রে এই জীববিজ্ঞানের জ্ঞান তো অবশ্যই লাগবে। কারণ, চিকিৎসা তো আর জড় পদার্থের করা হবে না, জীবের চিকিৎসা করা হবে। কৃষিতেও তো জড় কিছু ফলানো হয় না। জীবেরই চাষ করা হয়। তাই জীববিজ্ঞান উন্নত বিশ্বের জন্য একটি অপরিহার্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আর তাই আমাদের দেশের ছাত্র-ছাত্রীদেরকে এই শাখা থেকে দূরে রাখলে, তারা কখনোই একজন পরিপূর্ণ বিজ্ঞানের ছাত্র হতে পারবে না। দেশের চিকিৎসা কিংবা কৃষি ক্ষেত্রে উন্নতি হবে না। তাই নবম-দশম শ্রেণি থেকেই এই বিষয়ের চর্চা করানো দরকার।
আর এজন্যই জীববিজ্ঞান তোমাদের নবম-দশম শ্রেণির বইয়ের অন্তর্ভুক্ত।
তাহলে বন্ধুরা, তোমরা নিশ্চয়ই জীববিজ্ঞান সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা লাভ করেছ। তোমাদের উপকার হলেই আমি আমার এই লেখাটিকে সার্থক বলে মনে করব।
তোমাদের কেমন লাগলো, তা অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে।