ডিপ্রেশন এক ধরণের মানসিক রোগ। ডিপ্রেশন বা হতাশা কথাটার মধ্যেই লুকিয়ে আছে ডিপ্রেশনের ভাবার্থ। এই ডিপ্রেশন সর্দি-কাশির মতো এক এক করে প্রায় সব মানুষকে আক্রান্ত করে ফেলছে। ফলে রোগ ও রোগাক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
ডিপ্রেশন থেকে ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, অনিদ্রা, ব্লাড প্রেশার, ক্যানসারসহ বহু জটিল রোগ দেখা দিচ্ছে। তার সঙ্গে আত্মহত্যার প্রবনতাও বেড়ে যাচ্ছে। ডিপ্রেশন থেকে যেমন মারাত্মক ধরনের অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে, তেমন অনেক অনৈতিক কাজও করা হচ্ছে। আরেকটা জিনিস বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য তা হলো, নেশার যে এতো রমরমা অবস্থা তার কারণও হলো এই ডিপ্রেশন। ডিপ্রেশনে আক্রান্ত কিনা বুঝতে হলে বেশি কিছুর দরকার নেই। শুধু নিম্নের কয়েকটি বিষয়ের উপর লক্ষ্য রাখলেই দেখা যাবে যে ডিপ্রেশনে আক্রান্ত কিনা-
ডিপ্রেশনের লক্ষণঃ
১. কখনো হাসি-খুশি আবার কখনো উদাসী। আজ অনেক আনন্দে আছে কাল মানসিক যন্ত্রণায় গুমরে মরছে।
২. জীবনটাকে ভালো ভাবে উপলব্ধি করতে পারে না। কখনো ভাবে এই তো বেশ ভালোই আছি আবার কখনো ভাবে যে এই জীবন জীবন নয়।
৩. জীবনের প্রতি উদাসীনতা। মনে হয়, অনেক কিছু করার ছিলো,পাওয়ার ছিলো কিন্তু কিছু হলো না। তাই এই জীবনটা এতো অর্থহীণ।
৪. কেউ কিছু বলুক, যদি ভালো বলে না তো ঠিক আছে। কিন্তু বিরূপ সমালোচনা করলে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে।
৫. অন্ধকারকে ভয়,কোন আগুনের ভয় বা অজানা আতঙ্ক। অহেতুক চিন্তা ও উত্তেজনা। একটুতেই ঘাবড়ে যাওয়া আবার একটুতেি ভেঙে পড়া।
৬. কাজ করার ইচ্ছে হয় না। উৎসাহের অভাবে অল্প বয়সেই ক্লান্তি অনুভব করা। অলসতা যেনো সব কিছু গ্রাস করে ফেলছে। এমনকি খেলাধূলা বা পড়াশোনার মধ্যেও যদি উৎসাহের অভাব হয় তাহলে বুঝতে হবে ডিপ্রেশন হয়ে আছে।
৭. ঘুমানো। কখনো কম ঘুমায় আবার কখনো সব সময় শুয়ে থাকতে অনেক ভালোবাসে।
৮. হরমোন চেঞ্জ। হরমোনের পরিবর্তন হতে থাকলে ডিপ্রেশন আসে।
৯. ভালোবাসা বা প্রেম। ভালোবাসায় ব্যর্থতা আসলে,প্রেম সফল না হলেই ডিপ্রেশন হয়ে যাওয়া।
১০. ইমোশনের কারণেও ডিপ্রেশন হয়ে থাকে। ইমোশনাল হওয়া ভালো কিন্তু অতি ইমোশনাল হওয়া ভালো না। ইমোশনাল ব্যক্তি বারবার অন্যকে আকর্ষিত করতে চেষ্টা করে।
১১.ক্রোধ। যে ধরনের চিন্তা চলবে তা যদি নেতিবাচক বা ব্যর্থ হয় তাহলে ক্রোধ মনের মধ্যে জন্ম নেয়। এড্রোনিল গ্রন্থি, নিউরোনসের যেমন ক্ষতি হতে পারে,তেমনি ভূল ও হতে পারে। যা পরবর্তীতে ডিপ্রেশনে পরিণত হতে পারে। ক্রোধ শুধু ক্রোধ নয়। এটা যেমন নিজেকে জ্বালায় তেমন অন্যকেও জ্বালায়। ফলে,ক্রোধ হলে নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হয়।এর কারণে ডিপ্রেশনেরও শিকার হতে হয়।
১২. আত্মহত্যা হলো মানসিক রোগ যা ডিপ্রেশন থেকে জন্ম নেয়। ডিপ্রেশনের শেষ অবস্থায় পৌঁছালেই আত্মহত্যার পথ অনেকেই বেছে নিতে চায়। ডিপ্রেশনে থাকতে কোন বয়স লাগে না। সবাই যে কোন সময় যে কোন কারনে ডিপ্রেশন হতে পারে।
তবে ডিপ্রেশনের জন্য আমরাই দায়ী। সব কথার শেষ কথা হলো, ডিপ্রেশন যেহেতু মানসিক রোগ, তাই ওই রোগের আক্রমণকে অনুভব করে, নিজেই নিজের শিক্ষক হতে পারলে বহুলাংশে উপকৃত হওয়া যায়।
ডিপ্রেশন থেকে রক্ষা পাওয়ার করণীয়-
১. লক্ষ্য রাখার দরকার যাতে সবসময় নৈতিকতার মাঝে আনন্দে থাকা যায়।
২. চিন্তার পরিবর্তন অনেক দরকার। অহেতুক চিন্তা, ব্যর্থ চিন্তা, নেতিবাচক চিন্তা, ভয়ের চিন্তা ইত্যাদি থেকে মুক্ত থাকার ব্যবস্থা নিতে হবে। তার জন্য অন্যকে নয়, নিজেকে বদলাতে চেষ্টা করতে হবে।
৩. সুখ-দুঃখ টাকার এপিঠ ওপিঠ। তাই দুটোকেই মেনে নিতে হবে।
৪. মন তো আমার দাস। তাই মনকে দমন নয় বরং সুমনে পরিবর্তন করা লাগবে।
৫. কেউ আমাকে বিরক্ত করলে আমি কেনো বিরক্ত হবো? কারণ মন দূর্বল তাই। সে কারণে মনকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলা দরকার।
৬. তরুণ তরুণীরা মাথাকে যতো বেশি ব্যবহার করবে ততো ভালো থাকবে।
৭. যতো সিম্পল হওয়া যাবে ততোই ডিপ্রেশন মুক্ত থাকা যাবে।
৮. যেখানে খুশি হারিয়ে যাক। সেখান থেকে খুশির পথ খুঁজে নিতে হয়।
৯. নৈতিকতা ও মূল্যবোধকে সাথে নিয়ে চললে ডিপ্রেশনকে এড়িয়ে চলা সম্ভব।
১০. আমি যা আমি তাই, মেনে নিতে হয়। লক্ষ্য মহৎ হলে সফলতা আসবেই।
১১. ভূলে যাও, ক্ষমা করো এই দুটো শব্দ ডিপ্রেশন মুক্ত জীবনের চাবিকাঠি।
১২. হীনতাকে কখনো সহযোগিতা করা উচিত না।
১৩. শুভ ভাবনার এনার্জি বিকিরণ করা দরকার।
১৪.টিভি, ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন ডিপ্রেশন সৃষ্টি করে। তাই নিজের বুদ্ধি দিয়ে এসবের ব্যবহার করা উচিত।
১৫. সব বোঝা আল্লাহকে সমর্পণ করে দিয়ে মুক্ত মনে থাকতে পারলে ডিপ্রেশন এসে ধরা দিবে না।
ঔষধ, যোগাসন, মেডিটেশন করা প্রয়োজন। এতে করে আবার সুস্থ জীবনে ফিরে আসা সম্ভব।