মোগল সম্রাট শাহ জাহানের একটি অমর সৃষ্টি। এটি ভারতের আগ্রায় অবস্থিত। বিশ্বজুড়ে, তাজমহল প্রেমের এক অনন্য প্রতীক। শাহজাহানের তৃতীয় স্ত্রী ছিলেন আরজুমান্দ বানু বেগম মমতাজ। মমতাজ তাঁর ১৪ তম সন্তানের জন্মের সময় ৩৯ বছর বয়সে ১৬৩১ সালে মারা যান। সম্রাট শাহ জাহান তাঁর প্রিয় স্ত্রীর স্মৃতি রক্ষার জন্য তাঁর সমাধির চারপাশে তাজমহল তৈরি করেছিলেন। তাজমহল ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট এবং বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের একটি।
১৬৩১ সালের ৭ ই জুন, মমতাজ তার শেষ ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন এবং তাঁর মৃত্যু হয়। তিনি নবজাতকের কন্যা আরা বেগমকে রেখে যান। কথিত আছে যে সম্রাট তার স্ত্রীর রাজ দরবারে দু’বছর শোক করেছিলেন। শাহজাহান শোকে এতটাই মগ্ন হয়ে পড়েছিলেন যে কয়েক মাসের মধ্যেই তাঁর দাড়ি এবং চুল ধবধবে সাদা হয়ে যায়।১৯ বছরকাল সুখে-দুঃখে স্বামী সম্রাট শাহজাহানের ঘর সংসার করেছেন মমতাজ।
তাজমহলের প্রধান ডিজাইনাররা হলেন ওস্তাদ আহমেদ লাহুরী, আবদুল করিম মামুর খান এবং মাকরামত খান যারা ছিলেন সেই সময়ের সবচেয়ে নিখুঁত, দক্ষ, উচ্চ স্তরের ইঞ্জিনিয়ার এবং ডিজাইনার। তাজমহলের বিখ্যাত ক্যালিগ্রাফিও করেছিলেন তৎকালীন ক্যালিগ্রাফার আবদুল হক, যিনি প্রশংসনীয় ক্যালিগ্রাফি সম্রাটকে নিজেই মুগ্ধ করেছিলেন এবং তাঁকে ‘আমানত খান’ উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন।
মমতাজের মৃত্যুর পরপরই তাজমহলের নির্মাণ কাজে হাত দেয়া হয় নাই। মৃত্যুর পর তাঁর দেহ আগ্রার একটা জায়গায় রাখা হয়। সেখানে সযত্নে বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে দীর্ঘ ৯ মাস রাখবার পর এখন যেখানে তাজমহল নির্মাণ করা হয়েছে, সেখানে আনা হয়।
জয়পুরের মাকরানা এবং রায়ওয়ালা থেকে প্রচুর সাদা মার্বেল আনা হয়েছিল। লাল বেলেপাথরটি আনা হয়েছিল ফতেহপুর সিক্রি থেকে। এছাড়াও বাগদাদ, ইয়েমেন, গ্র্যান্ড তিব্বত, সিংহালা, কানাডা, দক্ষিণ ভারত, মিশরের নীল নদ, গঙ্গা, গোয়ালিয়র, পারস্য, কুমাও, মহারাষ্ট্র, জেহরি, মাকরান, খামাচ, মাউন্ট বিন্দিয়াচল, জব্বলপুর, রাজস্থান, হিমাচল দ্বীপ – তাঁর দৃষ্টি থেকে কিছুই বাদ পড়েনি। সর্বসাকুল্যে ১৭হাজার মন পাথর সংগৃহীত হয়েছিল।
পুরো তাজমহল ১৮০ ফুট উঁচু যার প্রধান গম্বুজটি ২১৩ ফুট উঁচু এবং ৬০ ফুট চওড়া এবং এর চারপাশে চারটি মিনার আছে যার প্রতিটির উচ্চতা ১৬২.৫ ফুট। পুরো কমপ্লেক্সটির আকার ১৯০২ বাই ১০০২ ফুট। শুধু তাজমহলটি ১৮৬ বাই ১৮৬ ফুট মার্বেল পাথরের ওপর নির্মিত। এর প্রধান প্রবেশদ্বার ১৫১ বাই ১১৭ ফুট চওড়া এবং ১০০ ফুট উঁচু।
তাজমহল নির্মানের পরে, সম্রাট সমস্ত কর্মীদের হাত কেটে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন যাতে এর মতো সুন্দর কোনও কাঠামো তৈরি না হয়। সম্রাট শাহ জাহানও কালো মার্বেল দিয়ে তাজমহলের বিপরীত দিকে আরও একটি সমাধি তৈরি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ক্ষমতাচুত্য হওয়ায় সেটি আর সম্ভব হয়নি।
মোঘলদের পতনের সঙ্গে সঙ্গে তাজমহলের প্রতি নেমে আসে দুর্যোগ। আসল মনিমুক্তা, স্বর্ণ তাজমহলের গাত্রে এখন আর নেই। একদিকে বাগান ধ্বংস করা হয়, অন্যদিকে পানি প্রবাহের স্থাপনাগুলো নষ্ট করা হয়। আরেক দিকে চলে অবাধ লুন্ঠন।