দারসুল হাদীস
পরিমিত রিযিক ও অল্পে তুষ্টির ফযীলত বিষয়ক হাদীস
”আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা:) থেকে বর্নিত যে, রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেছেন: ঐ ব্যক্তি সফলকাম হয়েছে যে ইসলাম গ্রহণ করেছে এবং পরিমিত রিযিক প্রাপ্ত হযেছে। আর আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন তার উপর তুষ্টিও প্রদান করেছেন।”
বর্ণনাকারী / রাবীর পরিচয় : তাঁর নাম আব্দুল্লাহ।তিনি প্রখ্যাত সাহাবী আমর ইবনুল আস এর পুত্র। তার মায়ের নাম রীতা বিনতু মুনাব্বিহ। ইসলাম গ্রহণের পূর্বে তার নাম ছিল আল’আস (পাপী /অবাধ্য)। একটি জানাযাহ অনুষ্ঠানে রাসুলু্ল্লাহ (সা:) তাকে তার নাম জিঞ্জেস করলে তিনি বললেন- আল’আস। এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ (সা:) বললেন, না, আজ থেকে তোমার নাম হবে আব্দুল্লাহ। মূলত: তখন থেকেই তিনি আব্দুল্লাহ নাম ধারণ করেন। ইসলাম গ্রহণের পর অধিকাংশ সময় তিনি রাসুল (সা:) এর সাহচর্যে কাটাতেন। রাগান্বিত বা শান্ত উভয় অবস্থায় রাসুল (সা:) এর মুখ থেকে যা বের হতো তাই তিনি লিখে ফেলতেন। জনৈক সাহাবী তাকে এমনটি না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন- উত্তেজিত অবস্থায় রাসুল (সা:) এর মুখ থেকে যা বের হয় তা না লেখাই উচিত। বিষয়টি তিনি রাসুল (সা:) এর নিকট উপস্থাপন করলে তিনি তাকে বললেন, তুমি আমার সব কথা লিখতে পারো। সত্য ছাড়া অন্য কিছুই আমি বলতে পারি না। তিনি মোট সাত শত হাদীস বর্ণনা করেন। তার হাদীস সংগ্রহটির নাম হচ্ছে ’সাদিকা’।
রাসুলের সাহচর্যে কাটানোর পর যে সময়টুকু তার বেচে যেত তার প্রায় সবটুকুই তিনি দিনে রোযা রেখে ও রাতে নফল ইবাদত করে কাটিয়ে দিতেন। ধীরে ধীরে এ কাজে তিনি এত গভীরভাবে অভ্যস্থ হয়ে পড়েন যে, স্ত্রী-পরিজন ও দুনিয়ার সব কিছুর প্রতি নিরাসক্ত হয়ে উঠেন। এমতাবস্থায় তার পিতা রাসুল (সা:) এর খিদমতে হাজির হয়ে তার এই অস্বাভাবিক বৈরাগ্য জীবনের ব্যাপারে অভিযোগ করলে তিনি তাকে ডেকে বলেন: হে আব্দুল্লাহ! পিতার আনুগত্য করবে। রোযা রাখবে, ইফতার করবে। সালাত পড়বে, বিশ্রামও নিবে। আর স্ত্রী-পরিজনের হকও আদায় করবে। এটিই আমার তরীকাহ। যে আমার তরীকাহ প্রত্যাখ্যান করবে সে আমার উম্মতের মধ্যে গণ্য হবে না।
আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন আমাদের রাসুলের পূর্নাঙ্গ তরীকাহ অনুসরণের তৌফিক দান করুন। আমীন।
এতক্ষণ আমরা হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর সংক্ষীপ্ত জীবনী জানলাম। এখন আমরা আলোচনা করব হাদীসটির আলোচ্য বিষয় ও এর গুরুত্বঃ
হাদীসটিতে পরিমিত রিযিক ও অল্পে তুষ্টির ফযীলত নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। মানুষের স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য হলো এই যে, সে কখনো অল্পে তুষ্ট হতে চায় না। সে সব সময় আরো চায়। অঢেল সম্পদ থাকার পরও সে তাতে সন্তুষ্ট থাকতে পারে না। এ ব্যাপারে অন্য আর একটি হাদীসে রাসুলুল্লাহ (সা:) এর বর্ণনা পাওয়া যায়। যেমন: ’আব্বাস ইবনে সা’আদ (রহ:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইবনুল যুবাইর (রা:) কে মক্কায় মিম্বরে দাড়িয়ে খুতবারত অবস্থায় বলতে শুনেছি: হে মানবসকল! নবী (সা:) বলতেন: যদি বনী আদমকে স্বর্ণে ভরা এক উপত্যকা পরিমাণ সম্পদ দেয়া হয় তাহলে সে আরো একটি চায়। আর যদি দ্বিতীয়টি দেওয়া হয় তাহলে সে তৃতীয় আরো একটি চায়। মাটি ছাড়া কোন কিছু বনী আদমের মুখ গহবরকে পূর্ণ করতে পারে না। আর যে ব্যক্তি তাওবাহ করে আল্লাহ তার তাওবাহ কবুল করেন। (বোখারী)
এ ব্যাপারে কোরআনে ও আলোচনা এসেছে, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন: “প্রাচুর্যের প্রতিযোগীতা তোমাদেরকে বেভুলা বানিয়ে রেখেছে। এমনকি এ অবস্থায় তোমরা কবর পর্যন্ত গিয়ে উপনীত হও।”
উপরোক্ত বর্ণনা থেকে একথা স্পষ্ট যে, মৃত্যু না আসা পর্যন্ত মানুষের এই বেশী পাওয়ার চাহিদা মিটবে না। সম্পদের মোহ সকল মানুষেরই আছে। তাই যারা এই মোহ থেকে নিজেকে বের করে আনতে পারে এবং মহান আল্লাহ প্রদত্ত হালাল রিযিকে সন্তষ্ট থাকে, তারাই মহান ও মর্যাদাবান। তারাই প্রকৃত সফলকাম পরকালের বিবেচনায়। তাই এই হাদীসটি মানব জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
হাদীসের ব্যাখ্যাঃ
হাদীসের শুরুতেই রাসুল (সা:) সুসংবাদ দিয়েছেন। আর এই সুসংবাদ দিয়েছেন কাদের জন্য, যারা ইসলাম গ্রহণ করেছে তাদের জন্য। ইসলাম গ্রহণের পর যারা মুসলিম হয়েছে তাদের মধ্যে যারা আবার তাদের প্রয়োজনীয় রিযিক পেয়েই সন্তষ্ট থাকে তাদেরকেই মুলত: রাসুল (সা:) সুসংবাদ দিয়েছেন। আমরা জানি সকল মানুষই সফলতা পেতে চায়। আর সে সফলতা দেওয়ার একমাত্র মালিক হলেন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন। তার দেয়া সফলতাই হলো প্রকৃত সফলতা। আর সেটা হচ্ছে পরকালীন সফলতা। পরকালীন সফলতার প্রথম সোপান হলো ইসলাম গ্রহণ করা বা আল্লাহর প্রতি আত্নসমর্পণ করা। আবার আল্লাহ প্রদত্ত রিযিকে সন্তষ্ট থাকাও তার প্রতি আত্নসমর্পণের একটি দৃষ্টান্ত। রিযিক হলো বন্টনকৃত। অর্থাৎ রিযিক মহান আল্লাহ কর্তৃক পূর্বনির্ধারিত। কেউ চাইলেই তা কমাতে বা বাড়াতে পারে না। সুতরাং আমরা আমদের প্রাপ্ত রিযিকে সন্তষ্ট না থাকলেও আমাদের কিছু করার থাকবে না, বরং আমরা যদি এই রিযিকে ধৈর্য্যধারণের মাধ্যমে সন্তুষ্ট থাকি তাহলে আল্লাহও আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকবে, আর আল্লাহ যদি আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকে তাহলে আমরা ইহকাল এবং পরকালে সফলকাম হবো। মহান আল্লাহ কাউকে কাউকে অঢেল রিযিক দিয়ে পরীক্ষা করেন, আবার কাউকে কাউকে পরিমিত রিযিক দিয়ে কিংবা অভাব অনটন দিয়েও পরীক্ষা করেন। এ ক্ষেত্রে যারা প্রয়োজনের অধিক প্রাপ্ত হয় তাদের পরীক্ষাটা একটু বেশীই হয়। কেননা তারা অধিক পাওয়ার পর আল্লাহর শোকর আদায় করে কিনা সেটা দেখা হবে। তাদের সম্পদে অন্য বান্দাদের যে হক রয়েছে সেটা আদায় করে কিনা তাও দেখা হবে। এমনকি তাদের সম্পদের যাকাত আদায় করে কিনা তাও দেখা হবে।
পরিশেষে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে আমাদের প্রার্থনা, আল্লাহ যেন সর্বাবস্থায় আমাদেরকে তার নিয়ামতকে অনৃধাবন করার তাওফীক দান করেন। তার দেওয়া রিযিকের উপর সন্তষ্ট থেকে যেন তার নৈকট্য লাভে ধন্য হই এবং ইহকালীন ও পরকালীন সফলতা লাভ করতে পারি। আমীন।
বাংলাদেশ এবং এর সৃষ্টির প্রেক্ষাপট
লাল সবুজের চিরচেনা রূপে ঘেরা আমাদের জন্মভূমি এই প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশ। প্রত্যেকের কাছেই তার নিজ নিজ জন্মভূমি খুবই প্রিয়তম এবং ভালো...