হাদীসের অনুবাদঃ
আবু হুরাইরা (রা:) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেছেন: মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন: আমার বান্দাহ যদি কোন নেক কাজের ইচ্ছা পোষণ করে, কিন্তু বাস্তবে এখনো তা করেনি, আমি এর বিনিময়ে তার জন্যে একটি নেকী লিখে ফেলি। আর যদি সে বাস্তবে তা করে, আমি তা দশ নেকী থেকে সাতশত গুন পর্যন্ত লিপিবদ্ধ করি। পক্ষান্তরে সে যদি কোন পাপ কাজের ইচ্ছা পোষণ করে, কিন্তু বাস্তবে এখনো তা করেনি, আমি তার বিরুদ্ধে উহা লিখি না। অত:পর যদি সে উহা করেই ফেলে, আমি তা একটি পাপ হিসেবে লিপিবদ্ধ করি। (সহীহ মুসলিম)
রাবী/বর্ণনাকারীর পরিচয়ঃ
আবু হুরাইরা (রা:) ছিলেন রাসুল (সা:) এর একজন একনিষ্ঠ সাহাবী। ৬ষ্ঠ হিজরী সালে হুদাইবিয়ার সন্ধির পর তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। তখন তার বয়স ছিল ৩০ বছর।
আবু হুরাইরা তার মূল নাম নয়, এটি তার উপনাম। কিন্তু আসল নামের চেয়ে এই উপনামেই তিনি অধিক পরিচিত। তার নাম নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। তবে প্রসিদ্ধ মতে, ইসলামপূর্ব যুগে তার নাম ছিল’আবদি শামস বা আবদি আমর’। আর ইসলাম গ্রহণের পর হয়েছে ‘আবদুল্লাহ বা আবদুর রহমান’। তার পিতার নাম ছিল কারো মতে যুখর আবার কারো মতে গানাম।
আবু হুরাইরা নাম হওয়ার পিছনে একটি ঘটনা আছে, কথিত আছে তিনি আদর করে একটি বিড়াল ছানা পুষতেন। একদা রাসুল (সা:) এর সামনে বসা অবস্থায় হঠাৎ তার চাদরের ভেতর থেকে বিড়াল ছানাটি বেরিয়ে আসে। রাসুল (সা:) তখন তাকে রসিকতা করে ‘আবু হুরাইরা’বা বিড়াল ছানার বাবা বলে ডাকেন। আর তখন থেকেই মূলত তিনি সবার মাঝে আবু হুরাইরা নামে খ্যাতি অর্জন করেন। ইসলাম গ্রহণের পর থেকে তিনি রাসুলের সাহচর্যে কাটাতেন এমনকি তাকে ছায়ার ন্যায় অনুসরণ করতেন। তার বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা ৫৩৭৪ টি। তিনি ৭৮ বছর বয়সে হিজরী ৫৭ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
হাদীসের আলোচ্য বিষয়ঃ
আলোচ্য হাদীসেটিতে বান্দাহর প্রতি মহান আল্লাহর মহানুভবতার প্রকাশ পেয়েছে। আল্লাহ ক্ষমাপরায়ণ, ক্ষমা করতে তিনি পছন্দ করেন। বান্দাহর প্রতি তিনি অত্যন্ত দয়াপরবশ তাইতো বান্দাহ কোন অন্যায়ের দিকে পা বাড়ালেই তিনি তাকে শাস্তি দেন না, অপেক্ষা করেন বান্দাহ তার খারাপ চিন্তা বা পরিকল্পনা থেকে ফিরে আসে কিনা। যদি ফিরে আসে তাহলে তিনি আর তাকে খারাপ চিন্তা বা পরিকল্পনার জন্য কোন শাস্তি দেন না। হাদীসে এসেছে, বান্দাহ যে খারাপ কাজের পরিকল্পনা করে তা না করে ফিরে এসেছে তার জন্য উল্টো তাকে পুরস্কৃত করেন। আর যদি সে পরিকল্পনা অনুযায়ী অন্যায়টি করেই ফেলে তাহলেও তার জন্য ঐটুকুই শাস্তি লিখেন। সুতরাং বুঝাই যাচ্ছে, তিনি আমাদের কতটা সুযোগ দিচ্ছেন।
পক্ষান্তরে, সে যদি কোন ভাল কাজের চিন্তা বা পরিকল্পনা করে তাহলে তা বাস্তবায়নের পূর্বেই তার নামে একটি নেকী লিখে ফেলেন। এরপর যদি সে তা বাস্তবায়ন করে তাহলে তার বিনিময় অনেকগুন অর্থাৎ দশ থেকে সাতশত গুন পর্যন্ত বাড়িয়ে দেন।
সুরা আল-আনআমের ১৬০ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন: “যে কেউ একটি কল্যাণকর কাজ করবে, সে তার দশগুন পাবে। আর যে কেউ একটি পাপ কাজ করবে, তাকে কেবল সেটারই প্রতিফল দেয়া হবে এবং তাদের প্রতি কোন প্রকার যুলুম করা হবে না।”
সুতরাং হাদীসের আলোকে আল্লাহর মহানুভবতার কথা চিন্তা করে আমাদের পরিকল্পনা করা উচিত।
হাদীসের ব্যাখ্যাঃ
এটি হাদীসে কুদসী। হাদীসে কুদসী হলো ঐ হাদীস যে হাদীসের বক্তব্য আল্লাহর কিন্তু ভাষা হলো রাসুলুল্লাহ (সা:) এর। এই হাদীসের মাধ্যমে আমরা দেখতে পাচ্ছি আমাদের প্রতি আল্লাহর অশেষ দয়া ও অনুগ্রহ। আল্লাহ জানেন শয়তানের চক্রান্তে পড়ে বান্দাহ অনেক সময় খারাপ চিন্তা বা পরিকল্পনা করে ফেলতে পারে। তাই তিনি সাথে সাথেই তাকে শাস্তির কঠোর ব্যবস্থা করেননি। তিনি দেখতে চাচ্ছেন, কে শয়তানের চক্রান্তের কাছে মাথা নত করে আর কে তার বিবেক দিয়ে চিন্তা করে ভুল পথ থেকে ফিরে আসে। আর যে আল্লাহর দেয়া বিবেক কাজে লাগিয়ে খারাপ পথে পা বাড়িয়েও ফিরে আসলো তার প্রতি সন্তষ্ট হয়ে তাকে পুরস্কুত করেন। কিন্তু যে শয়তানের কুমন্ত্রনায় পড়ে ফিরে আসতে পারলনা তাকেও বেশি শাস্তি না দিয়ে কেবল ঐটুকুই শাস্তি দিয়ে থাকেন।
পক্ষান্তরে বান্দাহ কোন ভাল কাজের পরিকল্পনা করার সাথে সাথেই আল্লাহ তার নামে একটি নেকী লিখে ফেলেন যদিও সে তা বাস্তবায়ন করেননি। আর যদি সে তা বাস্তবায়ন করে ফেলে তাহলেতো তার প্রতিফল বাড়িয়ে দশ থেকে সাতশত গুন পর্যন্ত লিপিবদ্ধ করেন।
তিরমিযী শরীফে আছে, আবু হুরাইরা (রা:) থেকে বর্ণিত যে, রাসুল (সা:) বলেছেন: মহান আল্লাহর কথাতো হাক্ক তথা সত:সিদ্ধ- তিনি বলেছেন, আমার বান্দাহ যখন নেক কাজের চিন্তা করে, তখনই তার জন্য একটি নেকী লিখে ফেলো। পরে যদি সে তা করে, তাহলে তার দশগুন লিখো। আর যখন সে মন্দ কাজের চিন্তা করে, তখনই তা লিখে ফেলো না। যদি সে তা করে তাহলে একগুন লিখো। আর যদি করা বাদ দেয় বা তা না করে তাহলে তার জন্য একটি নেকী বরাদ্দ করো।
এরকম আরো হাদীস আছে, মুসলিম শরীফের আর একটি হাদীসে এসেছে, ‘আমার বান্দাহ যখন কোন ভাল কাজ করবে বলে মনস্থ করে, তখন তা না করলেও আমি তার জন্য একটি নেকী লিপিবদ্ধ করি। অত:পর যখন সে তা করে, তখন আমি এর দশগুন লিপিবদ্ধ করি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: তিনিই (আল্লাহ) তো তার সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত। তথাপি মালাইকা (ফিরিশতা) বলবে, প্রভু, আপনার ঐ বান্দাহ তো পাপ করতে চায়। তখন আল্লাহ বলবেন, তোমরা তার প্রতি নজর রাখো। যদি সে তা করে ফেলে তাহলে সমপরিমান গুনাহ লিখবে। আর যদি সে তা ছেড়ে দেয়, তাহলে তার জন্য একটি সাওয়াব লিপিবদ্ধ করবে। সে তো আমারই ভয়ে তা বর্জন করেছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: তোমাদের কেউ যখন সুন্দরভাবে ইসলামে প্রবেশ করে তখন তার প্রতিটি সৎকর্মই দশগুন থেকে সাতশত গুন পর্যন্ত লিপিবদ্ধ করা হয়। আর মৃত্যু অবদি সে যত পাপ কাজ করবে, সবই তার সমপরিমান লিখা হবে।’
হাদীসের শিক্ষাঃ
* আল্লাহ রাহমানুর রাহীম। বান্দাহর প্রতি তার দয়া বা অনুগ্রহের শেষ নেই।
* তিনি গাফুরুর রাহীম। তিনি ক্ষমাশীল এবং ক্ষমা করতে পছন্দ করেন।
* ভাল কাজের চিন্তা করলেই আল্লাহ নেকী দিয়ে দেন। আর তা বাস্তবায়ন করলেতো অনেকগুন বাড়িয়ে দেন।
* খারাপ কাজের চিন্তা করলে শাস্তিতো দেনই না বরং সেখান থেকে ফিরে আসলে আরো পুরুস্কৃত করেন।
* আল্লাহর দয়া ও ক্ষমা কাজে লাগিয়ে আমাদের আমলনামায় নেক কাজ বাড়িয়ে নেয়ার সুযোগ।
পরিশেষে মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা তিনি আমাদেরকে বেশী বেশী নেক চিন্তা ও নেক আমল করার তৌফিক দান করুন। আমীন।
রেমিটেন্স যোদ্ধাদের কথা ও ভাবতে হবে আমাদের
রেমিটেন্স যোদ্ধাদের কথাও ভাবতে হবে আমাদের প্রবাসের জীবন আসলেই কত কঠিন তা ভাষায় প্রকাশ হয়তো সম্ভব নয়। নিজের অস্তিত্ব...