সিফাত,
নম্র ভদ্র শান্ত ছেলে।
সকলের নজরে পড়ার মত ভালো ছেলে।
পড়াশুনায়ও বেশ ভালো। মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওটা সিফাতের ছোট্ট একটি বোন আছে।
সারাদিন পড়া শুনা আর মাঝে মাঝে বন্ধুদের সাথে আড্ডা আর ঘুরাঘুরিতেই দিন কাটে সিফাতের। ঘুরতে বেশ ভালোই লাগে সিফাতের। প্রকৃতি ভালোবাসে, তাই ঘুরে প্রকৃতি দেখাই ওর নেশা।
সেদিন ক্লাস শেষে বন্ধুদের সাথে প্লান করলো নৌকা চড়বে সবাই মিলে আগামি কাল বিকালে তারা পাশের নদিতে ঘুরতে যাবে।
পরদিন হালকা বৃষ্টি হচ্ছিলো। কেউ আসবে কিনা ভাবছিলো সিফাত। হয়তো আসবে না, আবার আসতেও পারে। এসব ভাবতে ভাবতে একাই চলে গেলো নদীর পাড়ে। গিয়ে দেখলো কেউ আসেনি। কি আর করার, বৃষ্টি থেমে গেছিলো। তাই একটু হাটতে হাটতে সামনের দিকে এগোলো সিফাত।
এদিক টা কেমন যেনো নতুন লাগছে। এর আগেও সিফাত এখানে এসেছে, কিন্তু আজ যেনো অন্য রকম লাগছে ওর কাছে। একটু সামনে হঠাৎ একটা মেয়ে দেখতে পেলো সিফাত। সাদা জামা পরা।আনমনে তার কাছে হেটে গেলো সিফাত। মেয়েটির সাথে কথা ও বললো।
মেয়েটি বললো
– কেমন আছো সিফাত?
– ভালো আছি। কিন্তু তুমি আমার নাম জানলে কি করে? আমি তো তোমাকে চিনি না।
– বলবো সব। এখন বাদ দাও তো। দেখো যায়গা টা কত সুন্দর।
– হ্যা খুব সুন্দর।
কিছুখন চুপ করে থাকলো দুজনেই
সিফাত বললো।
– তোমার নাম কি?
– পরী
– সিফাত কিছুটা হতভম্ব হয়ে গেলো। মেয়েটা দেখতে পরীর মত সুন্দর। আবার নাম বলছে পরী।
– আমার নাম পরী। তুমি কি আমার বন্ধু হবে?
– কেনো নয়, আমরা বন্ধু হতেই পারি।
– ( একটা মূর্তি দেখিয়ে) এটা নাও,তোমার কাছে রাখবে যত্ন করে। কখনো হারাতে দিয়ো না। আমি চলি, আবার দেখা হবে।
মূর্তি টা হাতে দিয়েই খুব দ্রুত হেটে চলে গেলো পরী।
সিফাত কিছু বলার সুজোগ পেলো না। হাতের মূর্তি টার দিকে তাকিয়ে দেখলো হুবহু পরির মত দেখতে মুর্তি টা।
খুব অবাক হলো সিফাত।
তখন খেয়াল হলো আবার বৃষ্টি পড়ছে, দৌড়ে একটা ছাউনির নিচে গেলো সিফাত।
সেখানে গিয়ে দেখলো তার বন্ধুরা সবাই এসেছে৷ সিফাত বললো তোরা এতো দেরি করে এলি যে। ওরা বললো কোই দেরি, আমরা তো ঠিক সময়েই এসেছি। তুই আরো আগে এসেছিস।
সিফাত বললো কিন্তু আমি তো সময় মতই বাসা থেকে বেরিয়েছিলাম৷
আরেকজন বললো এসব বাদ দে তো,,,, চল নৌকা খুজি। ঘুরবি না তোরা???
সিফাত বললো কিন্তু বৃষ্টি তো,
– ওটুক বৃষ্টি তে কিছু হবে না।
– চল তাহলে নৌকার কাছে যাই……
সেদিন তারা নৌকা ঘুরে যে যার বাড়ি চলে গেলো।
সিফাত বাসায় গিয়ে সেই মুর্তি টা দেখতে লাগলো। অসম্ভব সুন্দর সেই মুর্তি টা। যেনো আলোয় জলমল করছে। এরকম মুর্তি আগে কখনো দেখেনি সে।
পরি বলেছিলো মুর্তি টাকে যত্ন করে রাখতে। সিফাত মুর্তি টাকে খুব যত্ন করে তার বইয়ের তাকে রেখে দিলো। এমনিতে তার ঘরে তেমন কেউ আসে না। শুধু তার ছোটো বোন মাঝে মাঝে আসে।
সেদিন রাতে হঠাৎ একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন আসলো। রিসিভ করে কথা বললো।
অপাশ থেকে
– হ্যালো
– কে আপনি?
– আমি
– আমি কে?
– তোমার ঘরে যার মুর্তি শোভা পাচ্ছে সে আমি।
– ও তুমি। কোথায় চলে গেলে তখন। আর তো দেখলাম না তোমাকে।
– ছিলাম তো তোমার আশে পাশেই।
– আমি তো খুজে পেলাম না তোমাকে।
– কিভাবে পাবে আমি তো অদৃশ্য হয়ে ছিলাম।
– ধুর কি যে বলো না তুমি। মজা করছো!
– আচ্ছা তোমার বাড়িতে কে কে আছে?…..
…………
এভাবেই কথা চলতে থাকে পরী আর সিফাতের। পরি কখনো তার বাসায় ঠিকানা দেয় নি সিফাতকে। নিজের সম্মন্ধে খুব বেশি কিছু বলেও নি কখনো। সিফাত ও জোর করতো না। তারা শুধু কথা বলতো৷
পরে একদিন দেখাও হয়েছিলো ওদের…….
কলেজ শেষে বাসায় ফিরতে একটু দেরি হয় সিফাতের। সিফাত বাড়ির পথে হাটছিলো। তখনই পিছন থেকে পরী তাকে ডাকলো। সিফাত তো অবাক হয়ে গেলো,
– তুমি এখানে এলে কিভাবে?
– এইতো তোমায় খুজে চলে এলাম।
– তোমার বাসা কি এখানেই কোথাও?
– কেনো বাসা দিয়ে কি করবা তুমি? আমার নামে নালিশ করবা? আমি খুব বাজে তাই না? তুমাকে বিরক্ত করি?
– আরে না না। আমি তা বলছি না। আচ্ছা যাও তোমার বাসা কোথায় বলতে হবে না। এখন চলো।
– কোথায় যাবো?
– আমার বাসায়, এইতো সামনেই আমার বাসা।
– যাবো একদিন। আজ না।
– কেনো? আজ কি সমস্যা?
– আজ যাওয়া যাবে না….
.একটু পরেই সিফাতের বাসা চলে এলো। সিফাত একাই বাড়ি গেলো।
রাতে আবার পরীর ফোন এলো। আবার তারা কথা বললো
এভাবেই দিন দিন পরীর প্রতি দুর্বল হতে থাকে সিফাত। পরীকে তার খুব ভালো লাগে। পরী তার সব খেয়াল রাখে, সব সময় খোজ নেয়।
সিফাত ভাবে পরীকে একদিন বলে দেবে তার ভালোবাসার কথা।……..
সেদিন সন্ধায় নিজের টেবিলে পড়তে বসেছিলো সিফাত। তখন তার বোন ও সেখানে আসলো। সে বললো
– কি করছো ভাইয়া?
– এইতো পড়তে বসলাম। তোর পড়া নেই? পড়তে বসিস না কেনো?
– আজ আমার ছুটি। আজ তোমার পড়া নেবো আমি।
– হ্যা হইছে খুব। নিজের কাজে মন দে।
– (পরীর মূর্তি টা দেখিয়ে) এটা কি ভাইয়া? দেখি একটু,
– না, এটা দেখিতে হবে না। ধরবি না বলছি।
– দেখি না একটু। কি সুন্দর লাগছে।
বলেই হাতে নিলো মুর্তি টা, সিফাত ও ধরতে গেলো ওকে দেবে না বলে। দুজনে কাড়াকাড়ি করতে গিয়ে হাত থেকে পড়ে মুর্তি টা ভেঙে গেলো।
সিফাত এর খুব মন খারাপ হলো। ওর বোন সরি বলে দৌড়ে চলে গেলো।
……
সিফাত ভাঙা মুর্তি টা নিয়ে বসে আছে। হঠাৎ তার মনে পড়লো পরীর কথা, পরী বলেছিলো খুব যত্ন করে রাখতে। কিন্তু একি হয়ে গেলো…..
ভেঙে গেলো তো।
মন খারাপ করে থাকলো সিফাত। রাতে খাবার ও খেলো না। সুয়ে থাকলো, পরীর ফোনের অপেক্ষায়। কিন্তু অনেকখন হলো পরীর ফোন তো আসছে না। এতো দিনে একবার ও সিফাত পরীকে ফোন দেয় নাই। সব সময় পরীই সিফাত কে দিতো। কিন্তু আজতো ফোন দিচ্ছে না। কত সময় তো হলো৷ কেনো ফোন দিচ্ছে না পরী!
অপেক্ষা যেনো শেষ হয় না৷ সারা রাত শেষ হয়ে গেলো তবুও পরীর ফোন আসলো না।
সকালে সিফাত পরীর নাম্বারে কল দিলো। নাম্বারটি বন্ধ বলছে৷
সারা দিন চেষ্টা করলো। বন্ধই। তার নাম্বারে আর কল দেয়া গেলো না।
আর কখনো পরীর নাম্বার খোলা পায় নি সিফাত।
কত দিন কত মাস চলে গেলো… পরীর সাথে আর কথা হয় না সিফাতের।
একদিন সিফাত কাস্টমার কেয়ারে ফোন দিয়ে পরীর ফোন নাম্বারের লোকেশন জানতে চাইলো………. তাতে যা শুনলো… পুরোই অবাক হয়ে গেলো সিফাত। কিভাবে সম্ভব হতে পারে এটা!
কাস্টমার কেয়ার থেকে বলেছিলো পরীর নাম্বার টা কখনোই ব্যবহার হয়নি। এমনকি এই নাম্বারের সিমটি নাকি এখনো বিক্রি ই হয়নি………..
- তাহলে কিভাবে ফোন দিতো পরী! কিভাবে কথা বলতো আমার সাথে! কিভাবে!
সিফাত আজো এই প্রশ্নের উত্তর খুজে পায় না……………!
……………….!!