টেকনোলজি রিলেটেড আজকে খুবই মজার একটি টপিক নিয়ে আলোচনা করবো।গত কোন একটি আর্টিকেলে আমি ন্যানোটেকনোলজি নিয়ে বিস্তারিত লিখেছিলাম।আজও লিখব।তবে আজ যে ন্যানটেকনোলজি নিয়ে লিখব তা নয়,আজ আলোচনা করব ন্যানোরসায়ন নিয়ে।তো চলুন শুরু করা যাক।
রসায়ন তো শুনেছেন,তবে ন্যানোরসায়ন টা আবার কী?অনেকেই হয়তো ন্যানোরসায়ন শব্দটা প্রথম শুনেছেন আবার অনেকে হয়তো এইটা সম্পর্কে শুনেছেন। যাইহোক,কী এই ন্যানোরসায়ন?
আসলে ন্যানোরসায়ন হল রসায়ন এবং ন্যানোবিজ্ঞানের সম্মেলন।আমরা যে ন্যানোটোনোলজি নিয়ে আলোচনা করেছিলাম,সেটাও কিন্তু ন্যানোবিজ্ঞানেরই অংশ,যা হয়তো ওই পোস্টেই বলে দিয়েছিলাম। ন্যানোরসায়ন হল সংশ্লেষ প্রক্রিয়ার সহিত সংযুক্ত একটি বিভাগ, যা ক্ষুদ্র উপাদানের আকার, আকৃতি, ক্ষেত্রফল এবং বিচ্যুতি ধর্মগুলির উপর নির্ভরশীল।
ন্যানোরসায়ন কোথায় ব্যবহৃত হয়?
ন্যানোরসায়ন রসায়ন, বস্তু বিদ্যা, ভৌত বিদ্যা ছাড়াও প্রযুক্তিবিদ্যা, জীববিদ্যা ও চিকিৎসাবিদ্যা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। যদিও ন্যানোরসায়ন এবং অন্যান্য ন্যানোবিজ্ঞান ক্ষেত্রগুলির মূল ধারনা একই, কিন্তু তাদের ব্যবহার বিভিন্ন। ন্যানোরসায়ন তাই ন্যানোবিজ্ঞানের রসায়নের দিকটি চিত্রিত করে।
বিজ্ঞানীরা যখন দেখলেন যে উপাদানের আকার ন্যানোমিটার স্কেলে এলে সেটির প্রকৃতির পরিবর্তন ঘটে, রসায়ন এর সহিত ন্যানো-উপসর্গটি তখন যুক্ত করলেন। ন্যানোমিটার স্কেল কাঠামোতে বিভিন্ন রসায়নগত পরিবর্তন ঘটে, যা আকারগত নির্ভরতার প্রমাণ। ন্যানোরসায়নের পিছনে আছে উপাদানের আকার, আকৃতি, স্ব-সংযুক্তি করণ, বিচ্যুতি এবং জৈব-ন্যানো স্ংক্রান্ত ধারণা। সুতরাং কোনো নব্য ন্যানোউপাদান গঠনের সহিত এই ধারনা গুলি ওতপ্রোত ভাবে যুক্ত থাকে। ন্যানোকাঠামো সংশ্লেষ নির্ভর করে কিভাবে উপাদানের আকার,আকৃতি বা ক্ষেত্রফল দ্বারা একক ক্ষুদ্র উপাদান থেকে কার্যকরী পরিকাঠামো তৈরী হতে পারে তার উপর।
ন্যানোকাঠামোতে সম্ভবতঃ থাকে গঠনগত বিচ্যূতি এবং তা চিকিৎসা, ফোটনিক, ইলেকট্রনিক সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে।
সিলিকা, স্বর্ণ, পলিডাইমিথাইলজাইলঅক্সেন, ক্যাডমিয়াম সেলেনাইড, লৌহের অক্সাইড এবং কার্বন- এই উপাদান গুলি ন্যানোরসায়ন এর পরিবর্তনকারী ক্ষমতা প্রদর্শনে সাহায্য করে বা এরা সক্ষম বলা যায়।
বাস্তবিক ক্ষেত্রে ন্যানোরসায়নের ভূমিকা কী?
ন্যানোরসায়ন অনেক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়,এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্র হলো চিকিৎসাবিজ্ঞানে ক্যানসার শনাক্তকরণে।যেমন
লৌহের অক্সাইড (বা আয়রণ অক্সাইড যেটাকে বলা হয়)থেকে এমআরআই করার জন্য বৈসাদৃশ্য বা কন্ট্রাস্টিং উপাদান তৈরী হয় যা ক্যান্সার সনাক্তকরণে ব্যবহৃত হয়।শুধু তাই নয়,এমনকি প্রাথমিক দশাতে ধরা পরলে সারাতেও সাহায্য করে থাকে ন্যানোরসায়ন,সুতরাং চিকিৎসা ক্ষেত্রেও এর ভূমিকা কিন্ত বেশ ভালো অবস্থানেই অাছে।
সিলিকা ( যেটাকে কাচ বলা হয়) আলোক পথের বক্রীকরণ বা অবরূদ্ধকরণে সাহায্য করে। তড়িৎবর্তনী বানাতে সিলিকোন নামক পলিমার ব্যবহার করে। এতে ন্যানোরসায়র ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন আকার ও আকৃতির কার্বন ব্যবহৃত হয় এবং ইলেক্ট্রনিক উপাদান হিসাবেও এটি উত্তম পছন্দ।
তাই ন্যানোরসায়ন কোনো যৌগের পারমাণবিক গঠনের সহিত সম্পর্কিত না হয়ে উপাদানের বিভিন্ন উপায়ে পরিবর্তন ঘটানোর সাথে যুক্ত হয়ে সমস্যার সমাধান করে। রসায়ন পর্যায় সারণীতে কেবল পরমাণুর স্বাধীনতার মাত্রা নিয়ে চিন্তিত থাকে অন্যদিকে ন্যানোরসায়ন উপাদানের অন্য স্বাধীনতার মাত্রাগুলির বিকাশ ঘটিয়ে ঐ উপাদানের প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ করে।
ন্যানোরসায়ন দ্বারা আবার কার্বন ন্যানো উপাদান বানানো যায় যেমন কার্বন ন্যানোটিউব, গ্রাফিন এবং ফুলারিন-এই গুলি বিজ্ঞানীদের নজর কেড়েছে তাদের যান্ত্রিক ও বৈদ্যুতিক শক্তির জন্য।
সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে যে ন্যানোরসায়নের ভূমিকা যে কতটুকু।
আশা করি আজকের পোস্টের মাধ্যমো ন্যানোরসায়ন সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। ন্যানোপ্রযুক্তি নিয়ে আশা করি সামনে আরও লিখব।সবাই ভালো থাকবেন,সুস্থ থাকবেন।
-ধন্যবাদ।