নোরা একজন থ্রিলারপ্রেমী পাঠক।বিরতিহীনভাবে সে ফিকশন ঘরানার বই পড়ে যায়।বিখ্যাত অখ্যাত সব থ্রিলার ফ্যান্টাসি তার পড়া হয়ে গেছে।কিন্তু একজন বই পড়ুয়াকে শুধু ফিকশনের জগতে আটকে থাকলে চলেনা।তাকে নন-ফিকশনের জগতেও বিচরণ করতে হয়।অথচ নন-ফিকশন ঘরানার বই হাতে নিলেই কোত্থেকে যেন ক্লান্তি এসে ভর করে,কয়েক পৃষ্ঠা পড়তে না পড়তেই হাই তোলে,ঘুম ঘুম ভাব পেয়ে বসে তাকে।তবু সে চায় নন-ফিকশনের বিশাল জগতে বিচরণ করতে।
এরকম শুধু নোরা নয়,নোরার মতো আছে হাজার হাজার পাঠক যারা নন-ফিকশন ঘরানার বই পড়া শুরু করতে চাচ্ছেন বা পড়া শুরু করেছেন।কিন্তু ক্লান্তি ভর করছে বা ঘুম ঘুম ভাব চলে আসার জন্য একটা বইও পড়ে শেষ করতে পারছেন না সেক্ষেত্রে কয়েকটা টিপস অবলম্বন করে সহজেই এই ক্লান্তি ভাবটা দূর করা যায়।টিপসগুলো নিয়ে কথা বলার আগে নন-ফিকশন সম্পর্কে কিছু তথ্য না জেনে নিলেই নয়!
নন-ফিকশন মানেই কিন্তু কঠিন কঠিন ভাষায় লেখা বা প্রচুর জ্ঞানে পরিপূর্ণ বই হতে হবে এমন কিন্তু একেবারেই নয়।একটি রান্না বিষয়ক বইও কিন্তু নন-ফিকশন বইয়ের ক্যাটাগরিতে পড়ে।এই ক্যাটাগরিতে আরো আছে লেখকের আত্মজীবনী,সমাজ-সংস্কৃতির ইতিহাস, গান ও শিল্প,বিজ্ঞান,ধর্ম,রাষ্ট্র, রাজনীতি, ভ্রমণ,বাণিজ্য,ভাষা,স্বাস্থ্য ও ক্রীড়া, পোষা প্রাণী, কারুশিল্প,সত্য ঘটনা ও আত্ম উন্নয়নমূলক বই ইত্যাদি।
ফিকশন আর নন-ফিকশন কে দুটো আলাদা এরিয়া হিসেবে বিবেচনা করলে এই দুটোর মধ্যে একটা ব্রিজ আছে।দুটো এরিয়াকে যদি গোলক হিসেবে কল্পনা করি,তবে এক কেন্দ্র থেকে অন্য কেন্দ্রে এই ব্রিজ তৈরি হয়ে আছে।এখন এই ব্রিজটা কি?
এই ব্রিজটা হচ্ছে নন-ফিকশন ও ফিকশন মিক্সড বই যা নতুন কিছু জানার আগ্রহ বা অভ্যাস তৈরি করে।এই মিক্সড বইগুলোকে আমরা বলি ফিকশনের মতো নন-ফিকশন বই বা নন-ফিকশনের মতো ফিকশন বই।এ ধরনের বইগুলোতে সাধারণত কল্পকাহিনীর পাশাপাশি শিল্প-সভ্যতার অনেক সত্য ঘটনা ও বর্ননা থাকে যা পরবর্তীতে সেই নন-ফিকশনাল উপাদান সমূহ সম্পর্কে বিশদভাবে জানার আগ্রহ তৈরি করে।খেয়াল করলেই দেখতে পাবেন বর্তমানে আমাদের হাতের কাছের এমন সব থ্রিলার ফ্যান্টাসি বই আছে যেগুলোর মূল ভিত্তিই হচ্ছে কোনো ঐতিহাসিক সত্য ঘটনা।তাই শুরুটা নন-ফিকশনের মতো ফিকশন ঘরানার বইগুলো পড়ার মাধ্যমেই নন-ফিকশন বই পড়ার অভ্যাস করা যেতে পারে।
এছাড়াও নিচের টিপসগুলো অবলম্বন করতে পারেন-
১.প্রথমেই নন-ফিকশন ঘরানার বইয়ের মধ্যে কোন ক্যাটাগরির বই পড়তে চান সেটা সিলেক্ট করুন।ইতিহাস বিষয়ক বই পড়তে চাইলে ইতিহাস বিষয়ক বই সিলেক্ট করুন,ভ্রমণ বিষয়ক বই পড়তে চাইলে ভ্রমণ বিষয়ক বই সিলেক্ট করুন।
২.সহজ ও প্রাঞ্জল ভাষায় লিখা বই সিলেক্ট করুন।বিভিন্ন বুক রিভিউ সাইট,গ্রুপের পোস্ট ফলো করতে পারেন।
৩.নন-ফিকশন বই পিডিএফে না পড়ে হার্ডকপিতে পড়তে সুবিধে।তাই হার্ডকপি সংগ্রহ করুন।দাগ দিয়ে পড়ার অভ্যাস থাকলে,দাগ দিয়েও পড়তে পারেন।এতে পড়ার প্রতি মনোযোগ বৃদ্ধি পায়।
৪.বইয়ের সাইজ বড় হলে অধ্যায় বা পৃষ্ঠা অনুযায়ী ভাগ করে নিন।
৫.যখনই মনে হবে পড়তে ভালো লাগছেনা বা মনোযোগ ছুটে যাচ্ছে জোর করে না পড়ে রেখে দিন।প্রয়োজনে কয়েক পৃষ্ঠা করেই পড়ুন।
পরিশেষে,সাধারণত যারা ফিকশন পড়তে অভ্যস্ত তারা হুট করেই নন-ফিকশন পড়া স্টার্ট করতে পারেনা।তাদেরকে একটু একটু করেই শুরু করতে হয় নন-ফিকশন এর জগতে বিচরণ। এক্ষেত্রে ফিকশনের মতো নন-ফিকশন বা নন-ফিকশনের মতো ফিকশন অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।ধীরে ধীরে বিভিন্ন নন- ফিকশন উপাদান বা বিষয়বস্তুর সাথে পরিচয় যেমন করাবে তেমনি সেই উপাদান গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পরবর্তীতে একজন পাঠক নন-ফিকশন এর দিকে ঝুঁকে পড়বে।তারমানে এই না ফিকশন বইয়ের প্রয়োজন নেই।কারণ একটা না একটা সময় নন-ফিকশন একঘেয়েমি ভাব তৈরি করে দিবে বা রিডার্স ব্লক(বই পড়তে অনীহা) ক্রিয়েট করবে।তখন আবার ফিকশন ই এই রিডার্স ব্লক কাটিয়ে তুলতে সাহায্য করবে।তাই ফিকশন ও নন-ফিকশন বই উভয়েরই প্রয়োজনীয়তা আছে।