আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন সবাই? আশা করি আল্লাহর রহমতে সবাই ভাল আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় আনেক ভালো আছি। আজকের পোস্টে ফেরিঘাটের আজকের অবস্থা নিয়ে কথা বলতে যাচ্ছি। তো আর দেরি না করে চলুন শুরু করা যাক।
ফেরিঘাটের আজকের অবস্থা
বর্তমান সময়ে ঢাকা ও দক্ষিণবঙ্গের মানুষের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে বাঙালির স্বপ্নের পদ্মা সেতু। গত ২৫ জুন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন দক্ষিণবঙ্গের মানুষের বহু প্রতীক্ষিত স্বপ্ন সারথি পদ্মা সেতু। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে দুই অঞ্চলের মধ্যে যাতায়াতের সাধারন দৃশ্য দেখা যেত মাওয়া ফেরিতে। দুই মাস আগেও মাওয়া ছিল দেশের সবচেয়ে ব্যস্ততম ফেরিঘাট।শিমুলিয়া পাটুরিয়া নৌরুটে উপচে পড়া ভিড় ছিল রোজকারের খবরের হেডলাইন।
এখন মাওয়া ফেরিঘাটের সেই ব্যস্ততা প্রায় নেই বললেই চলে। যেখানে ফেরির অপেক্ষায় থাকত অসংখ্য মানুষ, আজ সেখানে অপেক্ষমান কাউকেই তেমন দেখা যায় না। যেই ঘাটে আগে দাঁড়ানোর জায়গা থাকত না, ফেরি এলেই পারাপারের তাগিদে মানুষের ভিড় জমত, সেই ঘাটের পাটাতনই আজ তুলে রাখা হয়েছে। আগে যানবাহন নিয়ে মানুষ অপেক্ষা করত ফেরির জন্য, এখন ফেরি অপেক্ষা করে আছে। সারি সারি ফেরি দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু ফেরিতে ওঠার মতো কেউ নেই। তাই মাওয়া ফেরিঘাট আজ প্রায় জনশূন্য।
মাঝেমাঝে দুই একটি বাস, মাইক্রোবাস, বাইক দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তবে এই যানবাহনগুলো ফেরি পারাপারের জন্য দাঁড়িয়ে থাকেনা বরং যারা দূর থেকে সেতু দেখতে আসে কিংবা শখের বশে ইলিশ খেতে আসে তাদের জন্য দাঁড়িয়ে থাকে। হাঁক-ডাক আর যানবাহনের ব্যস্ততায় ঘেরা মাওয়া ঘাট এখন শুধুই স্মৃতি।
ঘাট সংলগ্ন রাস্তাও ফাঁকা পড়ে আছে। সেতু উদ্বোধনের আগে পর্যন্ত এই রাস্তায় যানবাহনের চাপ ছিল প্রচুর। এখন সেখানে শুনসান নীরবতা।
যাত্রীদের আনাগোনা না থাকায় মাওয়া ঘাটের ভিক্ষুকরা ভিক্ষা পায়না। আগে ভিক্ষা হিসেবে কতোই বা পেত! ৫ টাকা, ১০ টাকা খুব বেশি হলে ৫০ টাকা। এভাবে দেখলে দিনশেষে সব মিলিয়ে কতোই বা হতো! কিন্তু তাও একটা ভরসা ছিল। কিছু না কিছু তো জুটবে। যা পাবে তাই দিয়েই কোনভাবে হয় আধপেটা নাহয় না খেয়েই চালিয়ে নিবে। এই দৃশ্য ভিক্ষাজীবীদের কাছে খুবই সাধারণ। কিন্তু এখন তাদের সেই সামান্য উপার্জনও নেই।
ঘাট সংলগ্ন রাস্তার আশেপাশে রয়েছে সারি সারি ইলিশ মাছের হোটেল। দূর দূরান্ত থেকে আসা মানুষের ভিড় জমত এই হোটেলগুলোতে। এখন সেই হোটেলগুলোও ফাঁকা পরে থাকে। আগের মতো ইলিশ মাছ খাওয়ার আর ভিড় জমে না। হয়তো মাঝেমাঝে শখের বশে আসা মানুষের আনাগোনা দেখা যায়। সেতু ওঠার আগে এরকম দৃশ্য দেখা যেত না।
ফেরিঘাটে বি আই ডব্লিউ টি সি এর যে কক্ষগুলো রয়েছে, যে টিকেট কাউন্টার রয়েছে সবই এখন বন্ধ। সেখানকার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ এখন কর্মহীন জীবনযাপন করছে।
বোঝাই যাচ্ছে যে, ফেরিঘাটের কোনকিছুই আর আগের মত নেই। আপাতদৃষ্টিতে এখানকার ভিক্ষাজীবীদের জীবন জীবিকার টান পড়ার দৃশ্য, ফেরি, রাস্তাঘাট, হোটেলের নিস্তব্ধতা সবই আমাদের মনঃক্ষুন্ন করে। হঠাৎ করে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেখানকার সামগ্রিক অবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
কিন্তু বাস্তবতা হলো এই যে, এই প্রভাব সাময়িক সময়ের জন্য। কেননা একইসাথে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর কারণে গড়ে উঠেছে অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থান। উন্মোচিত হয়েছে সম্ভাবনার নতুন নতুন দ্বার। আজ এই পদ্মা সেতুর কারণে বেঁচে যাচ্ছে অসংখ্য রোগীর প্রাণ। ফেরিতে আটকে থাকতে হচ্ছে না মৃতপ্রায় রোগীদের। আটকে থাকছে না কারো স্বজনের মৃতদেহ। এই পদ্মা সেতুর কারণেই গতি এসেছে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জীবনে। স্বপ্নের পদ্মা সেতু নিয়ে মানুষ ছুটছে তার স্বপ্নের পথে।
সময়ের সাথে সাথে মানুষ সবকিছুর সাথে অভ্যস্ত হয়ে যায়। হয় সে নিজেকে পরিবর্তন করে, নাহয় তার স্থান পরিবর্তন করে। সেরকমভাবেই মাওয়া ফেরিঘাটের ভিক্ষাজীবী মানুষগুলোও হয়তো জীবিকার টানেই একদিন অন্য কোথাও চলে যাবে। নতুনভাবে শুরু করবে জীবন। আর এই ফেরিঘাটের নিস্তব্ধতার সাথেও সেখানকার মানুষ একদিন অভ্যস্ত হয়ে উঠবে।
পোস্টটি কেমন লাগলো দয়া করে কমেন্টে জানাবেন, যদি ভাল লেগে থাকে তাহলে অবশ্যয় শেয়ার করবেন, পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। এমন সব দারুন দারুন পোস্ট পেতে Grathor এর সাথেই থাকুন এবং গ্রাথোর ফেসবুক পেইজ ও ফেসবুক গ্রুপ এ যুক্ত থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।