Cheap price backlink from grathor: info@grathor.com

বর্ণবাদ প্রথা নাকি পরিশীলন! অতীত কিংবা বর্তমান, হয়তো ভবিষ্যতেও!

মহাভারতের একটা দিক আমার বেশ ভালো লাগে। এখানে বর্ণবাদ জিনিসটা নেই। মহাভারতের অনেক উল্লেখযোগ্য চরিত্র যেমন বিষ্ণু, রাম এদের গায়ের রং কালচে বলেই উল্লেখ আছে। তবে তাদের এ গায়ের রং তাদের সৌন্দর্য্যের বর্ণনায় এতটুকুও বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। মহাভারতের বিখ্যাত চরিত্র দ্রপদীর উল্লেখ আছে গা কৃষ্ণবর্ণ ও অসাধারণ সুন্দরী হিসেবে। কিন্তু মজার বিষয় হলো আমি আজ পর্যন্ত টেলিভিশনের পর্দায় কোনো কালো রাম দেখিনি। আবার বেশ কিছুদিন আগে জনপ্রিয় ভারতীয় একটি চ্যানেলে মহাভারত নামে একটি ধারাবাহিক খুব চলেছিলো, যেখানে দ্রপদীকে দেখানো হয়েছিলো ফর্সা চামড়ার রমণী হিসেবে!

ভারতীয় উপমহাদেশে বর্ণবাদের ধারণা আসে মূলত ইংরেজদের শাসনামলে। ইংরেজরা ভারতীয়দের কৃষ্ণ বর্ণের কারণে তাদের ঘৃণা করতো। এমনকি তাদের বিভিন্ন কাজে নিয়োগ দেয়া হতো গায়ের রঙের ভিত্তিতে। অপেক্ষাকৃত ফর্সা ও উজ্জ্বল চামড়ার মানুষদের নিয়োগ দেয়া হতো উঁচু পদে। আর বাজে সব কাজ ছিল কালো চামড়ার ভারতীয়দের জন্যে। এভাবে প্রতিটা ক্ষেত্রেই তারা বর্ণবৈষম্য করতো। ( তাছাড়া ফারসি, মোঘল সহ এ অঞ্চলের প্রায় সব শাসকরাই ছিলো ফর্সা চামড়ার অধিকারী। এ বিষয়টিও এ অঞ্চলের মানুষের বর্ণবাদের ধারণাকে প্রভাবিত করে।)

এই বর্ণবাদকে পুঁজি করেই চলছে মিডিয়ার মার্কেটিং পলিসি। প্রতিটি ফেয়ারনেস প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপনে দেখা যায়, তাদের ক্রীম ব্যবহার করে একজন মডেলের চেহারা ধীরে ধীরে কলাে থেকে ফর্সা হয়ে উঠছে, ফলে সে জীবন ও ক্যারিয়ারে সফলতার উচ্চ শেখরে পৌঁছে যাচ্ছে! আর এসব অসুস্থ প্রচারণাকে আমরা সাদরে গ্রহণ করছি।
তাছাড়া আমাদের আদরের ট্রল পেজগুলোতো খুব আনন্দের সাথেই বর্ণবৈষম্য কে উসকে চলেছে।

দু’বছর আগে দু’জন পর্যবেক্ষক গিয়েছিলেন দিল্লীতে ভারতের জাতীয় জাদুঘর পরিদর্শনে। সেখানে খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতক থেকে শুরু করে ঊনিশ শতক পর্যন্ত তৈরি করা হিন্দু দেব-দেবীদের মূর্তি সাজানো আছে। হিন্দু ধর্মগ্রন্হের বর্ণনা অনুযায়ী অধিকাংশ মূর্তি কালো রঙেরই তৈরি করা আছে। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হলো, সেখানে দর্শনার্থীদের ক্রয়ের জন্য তৈরি করা প্রায় সব মূর্তিই আসল রঙের পরিবর্তে ফর্সা করে তৈরি করা। এ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে সেখানের একজন জানান যে, ক্রেতারা কালো মূর্তির চেয়ে ফর্সা মূর্তি কিনতেই বেশি পছন্দ করে। তাই এভাবে তৈরি করা হয়েছে! ( Source: India and Colorism, Neha Mishra, 2015)
যেখানে মূর্তি বাছাই করতেই এই অবস্থা,
সেখানে মানুষের কথা না হয় বাদই থাক।

আমাদের অনেকের ধারণা বিজ্ঞান শাখার নোবেল প্রাইজগুলো মনে হয় সবচেয়ে ফেয়ার এন্ড জাস্টিফাইড। কিন্তু বাস্তবতা বলে অন্য কথা। নোবেল সাইন্স প্রাইজের সবচেয়ে বড় ত্রুটি হলো রেসিজম এন্ড জেন্ডার ডিসক্রিমিনেশন। এখানে গায়ের বর্ণ আর ডেমোগ্রাফি একটা বিশাল ফ্যাক্টর। ১৯০১ সাল থেকে আজ পর্যন্ত বিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছে ৬০০-র বেশি বিজ্ঞানী। এরমধ্যে নারী বিজ্ঞনীদের সংখ্যা মাত্র ১৭ জন। আর হ্যাঁ, এখন পর্যন্ত কোনো কৃষ্ণবর্ণের বিজ্ঞানী বিজ্ঞানে নোবেল প্রাইজ পাননি!! তারমানে কি!? নারী এবং কালোরা কি রিসার্চ করে না? অবশ্যই করে, কিন্তু এওয়ার্ড দেওয়ার সময় তো অনেক হিসাব-নিকাশ করে দিতে হয়…..!! যা প্রত্যক্ষ না হলেও পরোক্ষভাবে বর্ণবাদকেই সমর্থন করে।
শুনতে হাস্যকর মনে হলেও এ প্রোপাগান্ডা যে কতটা কার্যকরী তার প্রমাণ পাওয়া যায় একটা এক্সপেরিমেন্টেরর মাধ্যমে।

যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া স্টেটের স্কুল শিক্ষক জেন এলিয়ট তার শিক্ষার্থীদের উপর এই এক্সপেরিমেন্টটি চালান। মার্টিন লুথার কিংয়ের চিন্তাধারা তাকে সবসময় প্রভাবিত করত। ১৯৬৮ সালে যখন মার্টিন লুথার কিংকে খুন করা হয় তারপর থেকেই তিনি তার ছাত্র-ছাত্রীদের বর্ণবাদ, বৈষম্য এই ব্যাপারগুলো বোঝাতে চেষ্টা করেন। কিন্তু তা ফলপ্রসূ হচ্ছিলো না।

এলিয়ট তার শিক্ষার্থীদের উপর দুইদিনব্যাপী একটি এক্সপেরিমেন্ট চালালেন। প্রথমে তিনি তার ক্লাসটিকে দুটি গ্রুপে ভাগ করলেন। প্রথম গ্রুপে রাখলেন যাদের চোখের রং নীল এবং দ্বিতীয় গ্রুপে রাখলেন যাদের চোখের রং বাদামী। প্রথম দিন তিনি প্রথম গ্রুপ অর্থাৎ যাদের চোখের রঙ নীল তাদেরকে বাদামী চোখের শিক্ষার্থীদের চেয়ে সুপিরিয়র তথা উঁচু মর্যাদার বলে তুলে ধরলেন এবং বেশি সুযোগ সুবিধা দিতে শুরু করলেন। এমনকি তিনি এক গ্রুপের শিক্ষার্থীদেরকে অন্য গ্রুপের শিক্ষার্থীদের সাথে মেলামেশা করতে নিষেধ করে দিলেন। দ্বিতীয় গ্রুপের সদস্যদের আরও কোণঠাসা করার জন্য তিনি তাদের বিভিন্ন দোষ-ত্রুটি সবার সামনে বর্ণনা করতে শুরু করলেন।

এর ফলাফল হলো খুবই চমকপ্রদ। প্রথম গ্রুপের শিক্ষার্থীরা অর্থাৎ যারা নিজেদেরকে এখন সুপিরিয়র ভাবে তাদের আচরণ খুব দ্রুত পরিবর্তিত হতে লাগল। তারা ক্লাসে এখন সবচেয়ে মনোযোগী এবং কোন কিছু না বুঝলে তারা সাথে সাথে প্রশ্ন করে। ক্লাস টেস্টেও তারা দ্বিতীয় গ্রুপের সদস্যদের চেয়ে অনেক ভাল করল। সবথেকে মন খারাপ করা যে ব্যাপারটা ঘটল তা হলো, তারা তাদের দ্বিতীয় গ্রুপের বন্ধুদের সাথে খারাপ ব্যবহার করতে শুরু করল এবং তাদের উপর এক ধরনের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করতে লাগল। অন্যদিকে দ্বিতীয় গ্রুপের শিক্ষার্থীরা হীনমন্যতায় ভুগতে লাগল এবং সবদিক থেকে পিছিয়ে পড়তে লাগল।

পরের দিন এলিয়ট একই এক্সপেরিমেন্ট চালালেন। কিন্তু এবার যাদের চোখের রঙ বাদামী তাদেরকে নীল চোখের শিক্ষার্থীদের চেয়ে সুপিরিয়র হিসেবে তুলে ধরলেন। তখন ফলাফলও উল্টে গেল। অর্থাৎ নীল চোখ যাদের তারা সবকিছুতে পিছিয়ে পড়তে লাগল।

এই এক্সপেরিমেন্টটি আমাদেরকে বোঝাতে পারে যে সমাজে যারা অবহেলিত তারা কেন পিছিয়ে পড়ে একই প্রোপাগান্ডা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে সাইন্স নোবেল প্রাইজের ক্ষেত্রে। যাতে সুপিরিয়র হিসেবে সাদা চামড়ার জাতিকেই চেনা যায়।

এ তো গেলো বড় পরিসরের কথাবার্তা, কিন্তু বর্ণ বৈষম্যের সবচেয়ে হৃদয় বিদারক ঘটনাগুলো সবচেয়ে বেশি ঘটে আমাদের ব্যক্তিজীবনে। আর এ বৈষম্যের শিকার সবচেয়ে বেশি হয় মেয়েরা। ভাবতেই অবাক লাগে, গায়ের রং কীভাবে সৌন্দর্যের পরিমাপক হয়, যার মধ্যে মানুষের নিজের কোনো কৃতিত্ব নেই!

সৌন্দর্য তো একটা অনুভূতি, যাকে দেখাও যায় না, ছোঁয়াও যায় না, শুধু অনুভব করা যায়।একজন মা দেখতে যেমনই হোক সন্তানের কাছে সে সবচেয়ে সুন্দরি। কারণ একজন মায়ের সৌন্দর্য তার গায়ের রঙে নয়, তার মমতায়। একজন সফল ব্যক্তির সৌন্দর্য যেমন তার সাফল্য, তমনি একজন ব্যর্থ ব্যক্তির সৌন্দর্য তার চেষ্টা, তার বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব যা তাকে হেরেও হারতে দেয় না। শুধু গায়ের রং, বাহ্যিক গঠনে মানুষের সৌন্দর্য নেই বলেইতো মানুষ মরে যাওয়ার পরও তার সৌন্দর্য বেঁচে থাকে, তার মায়া-মমতায় গড়ে তোলা সম্পর্কগুলোর মাঝে, তার মহৎ কর্মগুলোর মাঝে। একটা দিক আমার বেশ ভালো লাগে। এখানে বর্ণবাদ জিনিসটা নেই। মহাভারতের অনেক উল্লেখযোগ্য চরিত্র যেমন বিষ্ণু, রাম এদের গায়ের রং কালচে বলেই উল্লেখ আছে। তবে তাদের এ গায়ের রং তাদের সৌন্দর্য্যের বর্ণনায় এতটুকুও বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। মহাভারতের বিখ্যাত চরিত্র দ্রপদীর উল্লেখ আছে গা কৃষ্ণবর্ণ ও অসাধারণ সুন্দরী হিসেবে। কিন্তু মজার বিষয় হলো আমি আজ পর্যন্ত টেলিভিশনের পর্দায় কোনো কালো রাম দেখিনি। আবার বেশ কিছুদিন আগে জনপ্রিয় ভারতীয় একটি চ্যানেলে মহাভারত নামে একটি ধারাবাহিক খুব চলেছিলো, যেখানে দ্রপদীকে দেখানো হয়েছিলো ফর্সা চামড়ার রমণী হিসেবে!

ভারতীয় উপমহাদেশে বর্ণবাদের ধারণা আসে মূলত ইংরেজদের শাসনামলে। ইংরেজরা ভারতীয়দের কৃষ্ণ বর্ণের কারণে তাদের ঘৃণা করতো। এমনকি তাদের বিভিন্ন কাজে নিয়োগ দেয়া হতো গায়ের রঙের ভিত্তিতে। অপেক্ষাকৃত ফর্সা ও উজ্জ্বল চামড়ার মানুষদের নিয়োগ দেয়া হতো উঁচু পদে। আর বাজে সব কাজ ছিল কালো চামড়ার ভারতীয়দের জন্যে। এভাবে প্রতিটা ক্ষেত্রেই তারা বর্ণবৈষম্য করতো। ( তাছাড়া ফারসি, মোঘল সহ এ অঞ্চলের প্রায় সব শাসকরাই ছিলো ফর্সা চামড়ার অধিকারী। এ বিষয়টিও এ অঞ্চলের মানুষের বর্ণবাদের ধারণাকে প্রভাবিত করে।)

এই বর্ণবাদকে পুঁজি করেই চলছে মিডিয়ার মার্কেটিং পলিসি। প্রতিটি ফেয়ারনেস প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপনে দেখা যায়, তাদের ক্রীম ব্যবহার করে একজন মডেলের চেহারা ধীরে ধীরে কলাে থেকে ফর্সা হয়ে উঠছে, ফলে সে জীবন ও ক্যারিয়ারে সফলতার উচ্চ শেখরে পৌঁছে যাচ্ছে! আর এসব অসুস্থ প্রচারণাকে আমরা সাদরে গ্রহণ করছি।
তাছাড়া আমাদের আদরের ট্রল পেজগুলোতো খুব আনন্দের সাথেই বর্ণবৈষম্য কে উসকে চলেছে।

দু’বছর আগে দু’জন পর্যবেক্ষক গিয়েছিলেন দিল্লীতে ভারতের জাতীয় জাদুঘর পরিদর্শনে। সেখানে খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতক থেকে শুরু করে ঊনিশ শতক পর্যন্ত তৈরি করা হিন্দু দেব-দেবীদের মূর্তি সাজানো আছে। হিন্দু ধর্মগ্রন্হের বর্ণনা অনুযায়ী অধিকাংশ মূর্তি কালো রঙেরই তৈরি করা আছে। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হলো, সেখানে দর্শনার্থীদের ক্রয়ের জন্য তৈরি করা প্রায় সব মূর্তিই আসল রঙের পরিবর্তে ফর্সা করে তৈরি করা। এ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে সেখানের একজন জানান যে, ক্রেতারা কালো মূর্তির চেয়ে ফর্সা মূর্তি কিনতেই বেশি পছন্দ করে। তাই এভাবে তৈরি করা হয়েছে! ( Source: India and Colorism, Neha Mishra, 2015)
যেখানে মূর্তি বাছাই করতেই এই অবস্থা,
সেখানে মানুষের কথা না হয় বাদই থাক।

আমাদের অনেকের ধারণা বিজ্ঞান শাখার নোবেল প্রাইজগুলো মনে হয় সবচেয়ে ফেয়ার এন্ড জাস্টিফাইড। কিন্তু বাস্তবতা বলে অন্য কথা। নোবেল সাইন্স প্রাইজের সবচেয়ে বড় ত্রুটি হলো রেসিজম এন্ড জেন্ডার ডিসক্রিমিনেশন। এখানে গায়ের বর্ণ আর ডেমোগ্রাফি একটা বিশাল ফ্যাক্টর। ১৯০১ সাল থেকে আজ পর্যন্ত বিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছে ৬০০-র বেশি বিজ্ঞানী। এরমধ্যে নারী বিজ্ঞনীদের সংখ্যা মাত্র ১৭ জন। আর হ্যাঁ, এখন পর্যন্ত কোনো কৃষ্ণবর্ণের বিজ্ঞানী বিজ্ঞানে নোবেল প্রাইজ পাননি!! তারমানে কি!? নারী এবং কালোরা কি রিসার্চ করে না? অবশ্যই করে, কিন্তু এওয়ার্ড দেওয়ার সময় তো অনেক হিসাব-নিকাশ করে দিতে হয়…..!! যা প্রত্যক্ষ না হলেও পরোক্ষভাবে বর্ণবাদকেই সমর্থন করে।
শুনতে হাস্যকর মনে হলেও এ প্রোপাগান্ডা যে কতটা কার্যকরী তার প্রমাণ পাওয়া যায় একটা এক্সপেরিমেন্টেরর মাধ্যমে।

যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া স্টেটের স্কুল শিক্ষক জেন এলিয়ট তার শিক্ষার্থীদের উপর এই এক্সপেরিমেন্টটি চালান। মার্টিন লুথার কিংয়ের চিন্তাধারা তাকে সবসময় প্রভাবিত করত। ১৯৬৮ সালে যখন মার্টিন লুথার কিংকে খুন করা হয় তারপর থেকেই তিনি তার ছাত্র-ছাত্রীদের বর্ণবাদ, বৈষম্য এই ব্যাপারগুলো বোঝাতে চেষ্টা করেন। কিন্তু তা ফলপ্রসূ হচ্ছিলো না।

এলিয়ট তার শিক্ষার্থীদের উপর দুইদিনব্যাপী একটি এক্সপেরিমেন্ট চালালেন। প্রথমে তিনি তার ক্লাসটিকে দুটি গ্রুপে ভাগ করলেন। প্রথম গ্রুপে রাখলেন যাদের চোখের রং নীল এবং দ্বিতীয় গ্রুপে রাখলেন যাদের চোখের রং বাদামী। প্রথম দিন তিনি প্রথম গ্রুপ অর্থাৎ যাদের চোখের রঙ নীল তাদেরকে বাদামী চোখের শিক্ষার্থীদের চেয়ে সুপিরিয়র তথা উঁচু মর্যাদার বলে তুলে ধরলেন এবং বেশি সুযোগ সুবিধা দিতে শুরু করলেন। এমনকি তিনি এক গ্রুপের শিক্ষার্থীদেরকে অন্য গ্রুপের শিক্ষার্থীদের সাথে মেলামেশা করতে নিষেধ করে দিলেন। দ্বিতীয় গ্রুপের সদস্যদের আরও কোণঠাসা করার জন্য তিনি তাদের বিভিন্ন দোষ-ত্রুটি সবার সামনে বর্ণনা করতে শুরু করলেন।

এর ফলাফল হলো খুবই চমকপ্রদ। প্রথম গ্রুপের শিক্ষার্থীরা অর্থাৎ যারা নিজেদেরকে এখন সুপিরিয়র ভাবে তাদের আচরণ খুব দ্রুত পরিবর্তিত হতে লাগল। তারা ক্লাসে এখন সবচেয়ে মনোযোগী এবং কোন কিছু না বুঝলে তারা সাথে সাথে প্রশ্ন করে। ক্লাস টেস্টেও তারা দ্বিতীয় গ্রুপের সদস্যদের চেয়ে অনেক ভাল করল। সবথেকে মন খারাপ করা যে ব্যাপারটা ঘটল তা হলো, তারা তাদের দ্বিতীয় গ্রুপের বন্ধুদের সাথে খারাপ ব্যবহার করতে শুরু করল এবং তাদের উপর এক ধরনের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করতে লাগল। অন্যদিকে দ্বিতীয় গ্রুপের শিক্ষার্থীরা হীনমন্যতায় ভুগতে লাগল এবং সবদিক থেকে পিছিয়ে পড়তে লাগল।

পরের দিন এলিয়ট একই এক্সপেরিমেন্ট চালালেন। কিন্তু এবার যাদের চোখের রঙ বাদামী তাদেরকে নীল চোখের শিক্ষার্থীদের চেয়ে সুপিরিয়র হিসেবে তুলে ধরলেন। তখন ফলাফলও উল্টে গেল। অর্থাৎ নীল চোখ যাদের তারা সবকিছুতে পিছিয়ে পড়তে লাগল।

এই এক্সপেরিমেন্টটি আমাদেরকে বোঝাতে পারে যে সমাজে যারা অবহেলিত তারা কেন পিছিয়ে পড়ে একই প্রোপাগান্ডা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে সাইন্স নোবেল প্রাইজের ক্ষেত্রে। যাতে সুপিরিয়র হিসেবে সাদা চামড়ার জাতিকেই চেনা যায়।

এ তো গেলো বড় পরিসরের কথাবার্তা, কিন্তু বর্ণ বৈষম্যের সবচেয়ে হৃদয় বিদারক ঘটনাগুলো সবচেয়ে বেশি ঘটে আমাদের ব্যক্তিজীবনে। আর এ বৈষম্যের শিকার সবচেয়ে বেশি হয় মেয়েরা। ভাবতেই অবাক লাগে, গায়ের রং কীভাবে সৌন্দর্যের পরিমাপক হয়, যার মধ্যে মানুষের নিজের কোনো কৃতিত্ব নেই!

সৌন্দর্য তো একটা অনুভূতি, যাকে দেখাও যায় না, ছোঁয়াও যায় না, শুধু অনুভব করা যায়।একজন মা দেখতে যেমনই হোক সন্তানের কাছে সে সবচেয়ে সুন্দরি। কারণ একজন মায়ের সৌন্দর্য তার গায়ের রঙে নয়, তার মমতায়। একজন সফল ব্যক্তির সৌন্দর্য যেমন তার সাফল্য, তমনি একজন ব্যর্থ ব্যক্তির সৌন্দর্য তার চেষ্টা, তার বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব যা তাকে হেরেও হারতে দেয় না। শুধু গায়ের রং, বাহ্যিক গঠনে মানুষের সৌন্দর্য নেই বলেইতো মানুষ মরে যাওয়ার পরও তার সৌন্দর্য বেঁচে থাকে, তার মায়া-মমতায় গড়ে তোলা সম্পর্কগুলোর মাঝে, তার মহৎ কর্মগুলোর মাঝে।

Related Posts

6 Comments

Leave a Reply

Press OK to receive new updates from Firstsheba OK No