Cheap price backlink from grathor: info@grathor.com

বর্ষ বরণ, নিশাত ফারজানা

বর্ষবরণ

গতরাতে টুম্পাদের বাসায় চুরি হয়। গরমের দিন বলে জানালা টা একটু ফাঁক রেখেই ঘুমিয়ে ছিল। চোর বেটা সেই সুযোগ টাই কাজে লাগালো। ৬ তলার উপর বাসা, তাও চুরি হল?

-হল তো।

-তা, কি কি নিল চোর?

-ঝুমকার ট্যাব আর পার্স। পার্সে হাজার পাঁচেক টাকাও ছিল।

-ইসসস… সাগরের বিয়ের জন্য নতুন যে গয়না বানিয়েছেন, ওগুলো নেয়নি তো?

-না না… আল্লাহ মাফ করুক! ওগুলো কিভাবে নিবে? ওগুলো তো সাগরের লকারে রেখেছি। আর লকারের চাবি বাসায়ও রাখি না। সাগরের কাছেই থাকে।

-হুমমম.. কে করতে পারে এই কাজ?

মনে হয় আমি তাকে চিনি…

-কি বলেন! তাই নাকি?

-এ বাড়িতে এসেছেন  কত বছর যেন হল?

-এইতো, নয় হল গত মাসে…

-এ এলাকায় এমন চুরি হয় আগে শুনেছেন?

-না..এরকম তো আগে হয়নি..

-অথচ গত দশ দিনে ৪ টা বাসায় চুরি হল।  বলুন তো এটা কার কাজ হতে পারে?

কার?

-এই এলাকায় নতুন কিছু ফ্যামিলি উঠেছে। না, আমি ওদের কথা বলছি না..ওরা ভদ্র মানুষ। চোর কখনো নিজের এলাকায় চুরি করে না। যাকগে, আমার হাতে তো প্রমাণ নেই, এটা শুধুই সন্দেহ। কিছু বুঝতে পারলে আলাপ করব। উঠি তাহলে। ও হ্যাঁ ভাবী, আজ বাড়ি যাচ্ছি। ক’দিন থাকব। বিকেল ৩ টায় ট্রেন। আমার বাসার দিকে একটু খেয়াল রেখেন ভাবি। যা উৎপাত শুরু হল!

-আচ্ছা ভাবি, আবারে এসেন।

প্রতিবেশী দিশা ভাবীর সাথে কথা হচ্ছিল টুম্পার মায়ে। টুম্পা শুধু মন খারাপ করে শুনছিল। তখন কিছু বলল না।

তারপর ওঠে চলে যায় নিজের রুম এ।

ঝুমকা আপু, সাগর ভাইয়া আর টুম্পা ৩ ভাইবোন। ঝুমকা আপু ডাক্তার। পরিবারের বড় সন্তান। আরো একটা কারণে বাসার সব কিছুই ঝুমকা আপু দেখে। বাবা প্যারালাইসড। মায়েরও তো বয়স হয়েছে। আপুর সাথে টুম্পার বয়সের ব্যবধানটা প্রয়া ১৪ বছরের। তাই আপুর আনুগত্য করতে বাধ্য দস্যি টুম্পা। সাগর ভাইয়া কে অতটা মানে না। তবে সামনে ভাইয়ার বিয়ে। তাই এখন ভাইয়াকেও একটু সমীহ করে চলে আর কি!

দিশা ভাবি কে বিদায় দিয়ে টুম্পার রুমে যান ওর মা। ও মন খারাপ করে বসে আছে। আসলে কাল ওর শাড়িটাও চুরি হয়েছে। এবার পহেলা বৈশাখে রমনায় যাবে বলে ২১ জন বান্ধবী দিলে অর্ডার দিয়ে একই শাড়ি বানিয়েছিল। নিজেই ডিজাইন করে। কাল ওগুলো নিয়ে সবাই নিয়ে যায়। ওর টাও ও নিয়ে আসে। আর সাথে কাঠের একটা ছোট গহনার সেট। বাসায় আসতে একটু রাত হয়। মায়ের শরীর টা খারাপ ছিল বলে সন্ধার পর পরই ঘুমিয়ে পড়ে। তাই মাকেও দেখাতেও পারেনি। মা ওর এইসব প্লানের কিছু আগে জানতেন না। এস.এস.সি. পরীক্ষার উপলক্ষ্যে যা টাকা পয়সা উপহার পেয়েছিল তাই দিয়ে এসব করছিল। ওর কাহিনী শুনে মা খুব রেগে যান। ওকে বেশ বকাবকি করে চলে যান।

টুম্পা বোকর মত তাকিয়ে থাকে। মা হঠাৎ রেগে গেল কেন?

ও রাতে ফিরেছে বলে? না…

চুরি হয়েছে বলে? না…

ও না জানিয়ে টাকা খরচ করেছে বলে?

তাও না..

তাহলে?

পহেলা বৈশাখের প্লান শুনে মা রেগে গেছেন!! কিন্তু এতে রাগার কি হল?

টুম্পা আর চৈতালি একসাথে স্কুলে যেত। কাছাকাছি বাসা। পরীক্ষার পর অনেক দিন দেখা হয়না। আসলে সব ফ্রেন্ডদেরই অনেক দিন একসাথে হওয়া হয়না। তাই এবার পহেলা বৈশাখ নিয়ে ওদের মহাপরিকল্পনা। প্রস্তাব টা অবশ্য অনিল স্যারের। বাকি সবটা টুম্পা, চৈতালি, অন্তরা আর দিপু শিপু দের আয়োজন। ৮৭ জন ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে ২১ জন মেয়ে আর ১৫ জন ছেলে যাচ্ছে। বাকিদের কারো বাসা থেকে রাজী না, কেউ ঢাকার বাইরে…

সাধারণত যা হয় আর কি…! ১৪ই এপ্রিল সকালে সাড়ে ৬ টায় সবাই স্কুলে সামনে হাজির হবে, তার অনিল স্যার আর রিক্তা ম্যাডাম  নিয়ে গাড়ি করে টি এস সির  মঙ্গল শোভাযাত্রায় যোগ দেবে। সেখান থেকে রমনা। তারপর “এসো হে বৈশাখ” পান্তা ইলিশ, মেলা, ঘোরাঘুরি, রঙ ছুড়াছুড়ি, সেলফি গ্রুপ। উফ! ভেবেই কেমন শিহরতি হচ্ছে সবাই হচ্ছে সবাই। আসলে এত দিন ওরা ছোট ছিল, এভাবে আগে কখনো যাওয়া হয়নি। এখন তো পরীক্ষার শেষ  দিন থেকে নিজেকে কেমন বড় বড় বোধ হয়!!!

একটু পরই চৈতালি আসে টুম্পাদের বাসায়। টুম্পাকে নিমন্ত্রণ করতে।

-কিসের নিমন্ত্রণ?

-আজ বিকেলে আমাদের বাড়িতে চৈত্র সংক্রান্তির আয়োজন হচ্ছে। তুই যাবি।

-এই অনুষ্ঠানে কি হয়?

-অনেক অনেক কিছুই করে। আমরা শিব দেবতার কীর্তন করি। নিরামিষ রান্না করি। মা জ্যাঠীরা সারা চৈত্র মাস ব্রত করেন। এই দিনে পুঁজো দেন।

-ও..ও… (আমতা আমতা করে টুম্পা)

-আমরা যখন গ্রামে ছিলাম, আরও মজা হতো। গাঁজন উৎসব হতো। আমরা সূর্যের সাথে পৃথিবীর বিয়ে দিতাম…

-কি! তোমরা বিয়ে দিতে??!! প্রতি বছর একই বিয়ে??

-হ্যা। মজার না?

-(টুম্পা ঢোক গিলে। তারপর মাথা নেড়ে সম্মতি দেয়।) তা আমি গিয়ে কি করব? আগে কখনো যাইনি…

-তাতে কি? আগে কি বৈশাখে গিয়েছিলি? মঙ্গলযাত্রায় গিয়েছিলি? শাখা সিঁদুর রঙের শাড়ি পড়েছিলি? এবার তো  সব করবি তাই না, যাতে পুরো বছর টায় মঙ্গল হয়?..তাই বলছি কাল আসবি। ভাগল লাগবে। আর বছরের প্রথম দিন যেভাবে বরণ করতে হয়, শেষ দিনটাও সেভাবে বিদায় দিতে হয়।

-ও.. আচ্ছা দেখি…

-দেখি না, আসবি। ও ভাল কথা, অন্তরা কিন্তু আজ গ্রামে চলে গেছে জানিস? ওর নানু খুব অসুস্থ। ওর এবার রমনায় যাওয়া হচ্ছে না…

-আহারে, বলিস কি?

-হ্যাঁ রে.. আচ্ছা আসি। কাল আসবি কিন্তু…

চৈতালি বিদাই নেয়।

টুম্পা চৈতালির কথা গুলো ভাবে। আসলেই কি সে জন্য সবাই বৈশাখের আয়োজনে যায়? দ্বিধায় পরে যায় ও…

বিকালে চৈতালি ফোন করে।

-কি রে, কোথায়?

-দোস্ত, সরি রে..

-কেন?

-আরে মায়ে সাথে একটু রাগারাগি করেছি। ভাল লাগছে না… আজ না থাক…

টুম্পার আম্মু ওকে কিছুতেই রমনায় যেতে দেবে না। কিন্তু কেন? খুব রাগ হচ্ছিল প্রথমে কিন্তু এখন শুধুই কান্না পাচ্ছে। কালকে মা যে কথা গুলো বলেছে, নিশ্চয়ই মায়ের অনেক কষ্ট হয়েছে কথা গুলো বলতে। ঝুমকা আপুর জীবনের যে কথা গুলো ও জানত না, সে গুলো না জানাই থাকত। এখন টুম্পা বুঝতে পেরেছে, কেন নয় বছর আগে ওরা তাড়াহুড়ো করে বাসা বদলে এখানে চলে আসে? কেন সে সময় আপুর বিয়েটা ভেঙ্গে যায়? কেন এরপর আপু আর বিয়ে করেনি? কেন সে দিন বাবা স্ট্রোক করে প্যারালাইসড হয়ে যান? কেন মা ওর রমনায় যাওয়ার কথায় আপত্তি করে?

কেন পহেলা বৈশাখের আয়োজন শুনে মা রেগে যান… নিশ্চয়ই প্রতি বছর ঝুমকা আপুর ওই ঘটনা গুলো মনে পড়ে। সব বন্ধুবান্ধব দের নিয়ে আপুও তো আনন্দ করবে বলেই রমনায় গিয়েছিল.. আচ্ছা চৈতালি তো বলেছিল, বৈশাখ বরণে নাকি মঙ্গল হয়। তাহলে?

Related Posts

14 Comments

Leave a Reply

Press OK to receive new updates from Firstsheba OK No