পৃথিবীতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ব্যাংকের অর্থ পাচারের ঘটনা ঘটে থাকে। এর মধ্যে কিছু হয়েছে অনলাইনে আর কিছু অফ অফলাইনে। অনলাইনের মাধ্যমে অর্থ পাচারের ঘটনাকে আমরা হ্যাকিং বলে থাকি । হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে হ্যাকার গ্রুপ প্রতিনিয়ত পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে হাজার হাজার ডলার হাতিয়ে নিচ্ছে। আর তেমনই একটা ঘটনা ঘটেছিল রাজধানীতে অবস্থিত বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক কি ঘটেছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে যার জন্য হারাতে হয়েছিল ৮ কোটি ইউএস ডলার ।
ঘটনার সূত্রপাত ঘটে একটা প্রিন্টারের সমস্যার মাধ্যমে 2016 সালের 5 ফেব্রুয়ারি সকাল পৌনে নয়টার দিকে প্রিন্টারে একটা সমস্যা দেখতে পান ব্যাংক কর্মকর্তা জুবায়ের। তবে তিনি এই ঘটনাকে স্বাভাবিকই মনে করেছিলেন। তখন তিনি বুঝতেই পারেননি যে এর পিছনে রয়েছে গভীর ষড়যন্ত্র। এই সুযোগে কিছু বুঝে উঠার আগেই উত্তর কোরিয়ার হ্যাকাররা পুরো কম্পিউটার সিস্টেমটাকে নিজেদের কন্ট্রোলে নিয়ে নেয়। নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে বাংলাদেশের রাখা সমস্ত অর্থ সরিয়ে ফেলার নোটিশ পাঠায় হ্যাকার গ্রুপ বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে। প্রিন্টার বন্ধ করে আবার চালু করার সাথে সাথে হ্যাকিং বিস্ময় ধারণা করতে পেরে দ্রুত নিউইয়র্ক এর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে গিয়েছিল। এরই মধ্যে হ্যাকারগ্রুপ বাংলাদেশের রাখা ৮ কোটি ইউএস ডলার সরিয়ে ফেলে ব্যাংক থেকে।
হ্যাকার গ্রুপের সময় নির্বাচন দেখে ধারণা করা যায় অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে তারা এই মিশনটি চালায়। হ্যাকিং শুরু হয় বাংলাদেশ সময় রাত আটটা থেকে ঠিক তার পরদিন অর্থাৎ শুক্রবার ও শনিবার ব্যাংক এর সাপ্তাহিক ছুটির দিন। অন্যদিকে বাংলাদেশের ছুটি শেষের পর পরই অর্থাৎ রোববার নিউইয়র্কের ছুটির দিন। অর্থ পাচারের জন্য স্থান নির্বাচন করা হয় ফিলিপিনস এর রাজধানী ম্যানিলা কে। ঠিক ওই সময় এই এলাকাসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ চান্দ্রবর্ষ উদযাপনে ব্যস্ত । তাহলে বুঝতেই পারছেন কতটা সুপরিকল্পিতভাবে করা হয়েছিল।
মূলত এক বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে ব্যাংকের এর কম্পিউটার সিস্টেমকে নিজেদের কন্ট্রোলে নিয়েছিল হ্যাকার গ্রুপটি ।2015 সালের জানুয়ারি মাসে রাসেল আলম নামে এক ব্যক্তি চাকরি চেয়ে ব্যাংকের কাছে একটি ইমেইল করে পরে জানা যায় এই রাসেলই প্রকৃতপক্ষে হ্যাকার গ্রুপের সদস্য ।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে তারা এখন কি করছে? কোথায় আছেন? আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের এখনো ধরতে পেরেছে? উত্তর: না। তারা এখনো ঠিকঠাক আছে এবং প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ব্যাংকের অর্থ চুরি করে যাচ্ছে। তবে সম্প্রতি আমেরিকার এফবিআই হ্যাকার গ্রুপের এক সদস্যরা ছবিসহ পরিচয় প্রকাশ করেছেন । উত্তর কোরিয়ার মোট তিন সদস্য হ্যাকিংয়ের জন্য মার্কিন আ দালতে অভিযুক্ত হয়েছেন । ধারণা করা হচ্ছে তারা দীর্ঘদিন ধরে সরকারের হয়ে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ থেকে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে তারা মোট 130 কোটি ডলার আত্মসাৎ করেছে।
( সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ)