বর্তমান আমাদের দেশে অনেক ছাত্র-ছাত্রী আছে যারা বিদেশে পড়ালেখা ইচ্ছা পোষণ করে থাকে। আমাদের দেশে অনেক ভালো ছাত্র-ছাত্রী থাকা সত্ত্বেও তারা বিদেশে স্কলারশিপ পাওয়ার বেশ কিছু নিয়ম না জানার কারণে বিদেশে পড়ালেখা করা থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকে।
আপনি যখন বিদেশে পড়ালেখা করার কথা ভেবে থাকবেন, তখন আপনার শুরুতেই যে প্রশ্নটি মাথায় আসবে সেটি হলো, বিদেশে স্কলারশিপ কিভাবে পাবেন সে সম্পর্কে। আমরা অনেকেই আছি যারা বিদেশে স্কলারশিপ পাওয়ার যোগ্যতা সম্পর্কে এখনো জানিনা। আজকে আমাদের আর্টিকেল পড়ার মাধ্যমে আপনারা এই বিষয়টি সম্পর্কে একটি যথেষ্ট মানসম্মত ধারণা পাবেন বলে আশা করি।
বিদেশে স্কলারশিপ পাওয়ার উপায়
বিদেশে স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য আপনাকে যথেষ্ট চেষ্টা করতে হবে। চেষ্টা ছাড়া সাধারণত কোনো কাজই সম্ভব নয় এক্ষেত্রেও কোন ব্যতিক্রম হতে পারে না। আপনি যদি এই বিষয়টি নিয়ে আগে থেকে একমত হতে পারেন বা আপনি এর জন্য আগেই আবেদন করতে পারেন তাহলে আপনার জন্য এই কাজটি করা আরো সহজ হয়ে যাবে।
তবে এর জন্য আপনার শুরু থেকে যথেষ্ট যোগ্যতার প্রয়োজন হবে। আপনি বিদেশে যে কোর্স সম্পন্ন করতে যাবেন সে কোর্স ভেদে আপনার যোগ্যতা ভিন্ন রকম হতে পারে। আপনি যদি সেখানে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করে গ্রাজুয়েশন করার জন্য যান তাহলে আপনার যোগ্যতা এক রকম হতে হবে, এবং আপনি যদি সেখানে পিএইচডি বা মাস্টার্স করার জন্য যান, তাহলে আপনার যোগ্যতা এক রকম হতে হবে।
বর্তমান সময়ে আমাদের দেশ থেকে যারা বিদেশে স্কলারশিপ করতে যাচ্ছে তাদের অধিকাংশই গ্রাজুয়েশন, মাস্টার্স অথবা পিএইচডি করার জন্য যেয়ে থাকেন। সে সব ছাত্র-ছাত্রীরা মনে করে থাকে যে, বিদেশে এসব কোর্স সম্পন্ন করলে আমাদের দেশে এসব সার্টিফিকেটের যথেষ্ট মর্যাদা হয়ে থাকে।
আপনি যখন আমাদের দেশে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করে, স্নাতক করার জন্য যখন যাবেন তখন বিশেষ করে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে স্কলারশিপের প্রসেস এর চাইতে একটু সহজ প্রকৃতির হয়ে থাকে। তবে আপনি যে পর্যায়ে যেতে চান না কেন, যেসব দরকারি জিনিস বা রিকোয়্যারমেন্ট আছে সেগুলোর প্রতি আপনাকেই দিক নির্দেশনা রাখতে হবে।
তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্কলারশিপ এর ধরন একটু ভিন্ন প্রকৃতির হয়ে থাকে। ভিন্ন প্রকৃতির বলতে এখানে ভিন্ন ধরনের রিকোয়্যারমেন্ট হয়ে থাকে। ক্রীড়াবিষয়ক স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য আপনাকে একটি ক্রীড়া বিষয়ক ডকুমেন্টারি সাবমিট করার পর পেতে পারেন। তবে সাধারন সাবজেক্ট ভিত্তিক স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য আপনাকে তেমন কিছু করতে হবে না। আপনি নির্দেশনাগুলো জানলে খুব সহজ ভাবে পেয়ে যাবেন।
বিদেশে স্কলারশিপ পাওয়ার একটি অন্যতম উপায় হচ্ছে আপনাকে এ বিষয়ে প্রতিনিয়ত খোঁজখবর রাখতে হবে। স্কলারশিপের খোঁজ খবর রাখার জন্য আপনি ওয়েবসাইটের সহযোগিতা নিতে পারেন। স্কলারশিপের জন্য বিভিন্ন দেশের নানা অফিশিয়াল ওয়েবসাইট রয়েছে। আমরা আপনাকে চারটি ওয়েবসাইটের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলাম এখানে আপনি খুব সহজেই স্কলারশিপের খোঁজখবর রাখতে পারবেন।
উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে স্কলারশিপ পাওয়ার উপায়
আপনি যদি চিন্তা ভাবনা করে থাকেন যে আমি গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করার জন্য বিদেশে যাব অথবা বিদেশে যেয়ে আপনি গ্র্যাজুয়েশন কোর্স সম্পন্ন করবেন। তাহলে আপনার যেটি প্রথম করণীয় কাজ হবে সেটি হলো আপনাকে উচ্চমাধ্যমিকে থাকাতেই নিজেকে ডেভেলপ করে তুলতে হবে। এটি করে অবশ্যই আপনি স্কলারশিপ পেয়ে যাবেন। স্কলারশিপ পাওয়ার বিভিন্ন তথ্য নিচে আলোচনা করা হলো:
- পুরো ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা এসব দেশের নানা প্রদেশের নানা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ের ভর্তির জন্য এস এ টি মূলক স্কোর চেয়ে থাকে। আপনি যখন কলেজ জীবনে পড়ালেখা করতে থাকবেন তখন অবশ্যই এই এস এ টি মূলক স্কোরের প্রতি নজর রাখবেন। এবং তা বৃদ্ধির জন্য যথেষ্ট চেষ্ঠা চালিয়ে যাবেন।
- আমাদের দেশে সাধারণত বিভিন্ন সমাজ সেবা কাঠামো গুলোর উপর লক্ষ্য করা যায় যে, প্রতিযোগিতামূলক, নানা সেবা মূলক সামাজিক কার্যক্রম এর সাথে যুক্ত থাকলে তা বিভিন্ন দেশের কলেজে ভর্তির জন্য এক বিশেষ সহযোগিতামূলক হয়ে দাঁড়ায়। তাই আপনি চেষ্টা করতে পারেন বিভিন্ন অলিম্পিয়াড বা বিভিন্ন সমাজ সেবার কাজে অংশগ্রহণ করতে। এসবের নির্দিষ্ট সনদপত্র আপনার এই কাজের সহযোগিতা করে থাকবে।
- আপনি যদি স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে চান তাহলে আপনার একটি রেকমেন্ডেশন লেটার অতি জরুরী একটি বিষয় হয়ে থাকবে। আপনি আপনার পরিচিত একজন ব্যক্তির দ্বারা এ লেটারটি লিখে নিতে পারবেন। তবে আপনি যে ব্যক্তির দ্বারা লেখাবেন সে ব্যক্তি কে অবশ্যই যথেষ্ট শিক্ষিত হতে হবে। তার হাতের লেখার জন্য যথেষ্ট মানসম্পন্ন ও ভালো হয়ে থাকে।
- সাধারণত বিদেশে স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য উচ্চমাধ্যমিকে থাকাকালীন নানা চেষ্টার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, IELTS এবং TOEFL যা আপনার ইংরেজি বিষয়ের উপর থাকা দক্ষতা কে কাজে লাগিয়ে দেবে। আপনি উচ্চমাধ্যমিকে থাকাকালীন এই দুটি বিষয়ের উপর অত্যাধিক নজর রাখবেন।
স্নাতক শেষে স্কলারশিপ পাওয়ার উপায়
আপনি যখন আপনার স্নাতক অধ্যায়ন শেষে বিদেশে স্কলারশিপ পাওয়ার চেষ্টা করবেন তখন তা আপনার জন্য একটি উপযোগী বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। অধিকাংশ মানুষের প্রতি লক্ষ্য রেখে বলা যায় যে তারা সাধারণত স্নাতক কোর্স সম্পন্ন করে বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে থাকে। অনেকেই আছে যারা দেশের বাইরে যেয়ে স্নাতকোত্তর অথবা পিএইচডি করার চিন্তা ভাবনা করে থাকে।
আপনি যদি স্নাতক শেষ করে বিদেশে যাওয়ার চিন্তা-ভাবনা করেন তাহলে এই চিন্তা-ভাবনা টি আপনাকে স্নাতকে অধ্যায়ন থাকাকালীন অবস্থায় করতে হবে। এটি আপনার জন্য মঙ্গলজনক হয়ে দাঁড়াবে। আপনি যদি তখন থেকে আমাদের উপরে আলোচিত ওয়েবসাইট গুলো ঘুরে দেখা শুরু করেন তাহলে আপনি এই বিষয়ে যথেষ্ট ধারণা লাভ করতে পারবেন। স্নাতক শেষে স্কলারশিপ পাওয়ার বিভিন্ন তথ্য নিচে আলোচনা করা হলো:
- আপনি যখন স্নাতকে অধ্যায়ন করবেন তখন থেকে আপনাকে গবেষণা বা নিবন্ধনের দিকে একটু বেশি খেয়াল রাখতে হবে। আপনি যে বিষয়ের ওপর গবেষণা শুরু করবেন সে বিষয়ের প্রতি আপনার লেখা জার্নাল বা থিসিস পেপার গুলো বিভিন্ন ধরনের ইন্টার্নেশনাল সাইটে প্রকাশের চেষ্টা করবেন।
- আপনি বিদেশে গিয়ে যে বিষয় নিয়ে পড়তে চাচ্ছেন যে, বিষয়ের প্রতি আপনি উচ্চ সনদপত্র গ্রহণ করতে চাচ্ছেন সে, বিষয়ের প্রতি যদি আপনার চাকরির অভিজ্ঞতা থাকে তাহলে, তা স্কলারশিপ পাওয়ার ক্ষেত্রে এক বিশেষ সুবিধা হয়ে দাঁড়ায়।
- বিদেশে যেসব বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে সেসব বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপ ও ফলোশিপের জন্য অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়। আপনি যদি সেই সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বা সেই প্রতিষ্ঠানের অধ্যাপকদের সাথে, ইমেইলে যোগাযোগ করার মাধ্যমে সেই ফান্ডের জন্য আবেদন করতে পারেন। মেইলের মাধ্যমে আপনাকে অবশ্যই তাদের জানাতে হবে আপনি কোন বিষয়ে পড়ালেখা করতে চান সে বিষয়ে। তাহলে তা স্কলারশিপ পাওয়ার ক্ষেত্রে এক উপযোগী বিষয় হয়ে দাঁড়াবে।
- IELTS, TOEFL,GRE,GMAT এই স্কোর গুলো সাধারণত আপনার বিদেশে স্নাতকোত্তর বা পিএইচডি পড়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে থাকে। আর তাই এসব বিষয়ের প্রতি আপনাকে যথেষ্ট খেয়াল রাখতে হবে।
বিদেশে স্কলারশিপ এর জন্য আপনার অবশ্যই ভালো রেজাল্ট থাকা দরকার। তবে রেজাল্টের বিষয়টি অত বড় কোন বিষয় নয়। আবেদনের সময় আপনার নির্দিষ্ট জিপিএ ও সিজিপিএ অবশ্যই তারা চাইবেন। আপনি সেসব রেজাল্ট সঠিক মত সঠিক জায়গায় দিয়ে দেবেন। তবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে আপনাকে অবশ্যই ভালো ইংরেজি জানতে হবে। ইংরেজি জানার পাশাপাশি আপনাকে চমৎকার মেইল রাইটিং করতে হবে। এই দুইটি বিষয়ের উপর আপনাকে অত্যন্ত পারদর্শী হতে হবে বিদেশে স্কলারশিপ এর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হয়ে থাকে।
যে সব বিষয় অবশ্যই খেয়ার রাখবেন
- বিদেশে স্কলারশিপ পাওয়ার ব্যাপারে আপনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য আপনার ব্যক্তিগত নানা ডকুমেন্টের প্রয়োজন হবে। সেসব ডকুমেন্ট আপনি অবশ্যই সঠিক টাই তাদেরকে দেবেন।
- বিভিন্ন স্টেটমেন্ট, রেকমেন্ডেশন লেটার, ইমেইল এসব সাধারণত কখনো অন্যের টা কপি করে বসিয়ে দেবেন না। সম্পূর্ণটাই নিজের মেধা দিয়ে লেখার চেষ্টা করবেন। এবং লক্ষ্য রাখবেন যাতে করে কোনো রকম ভুল না হয়।
- স্টেটমেন্ট অফ পারপাজ এটা আপনি প্রথম অবস্থাতে যা লিখেছিলেন সেটা কখনোই ফাইনাল ধরে বসে থাকবেন না। এটার লেখার শেষে আপনি কয়েকবার রিভাইজ দেবেন যাতে কোনরকম ভুল না থাকে সেখানে।
- আপনার যেসব গবেষণা বা জার্নালগুলো কখনোই নিম্নমানের বা অপরিচিত কারো জার্নাল আপনি কখনো প্রকাশ করবেন না। এক্ষেত্রে আপনার ভর্তি বাতিল হয়ে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করবেন।
- বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় যখন আপনি পড়তে যাবেন তখন অবশ্যই আপনার নম্বরপত্র গুলো তারা মেইলের মাধ্যমে চেয়ে থাকবে। আপনি যখন সেটি মেইলে পাঠাবেন তখন যেন সেটি পুরোপুরি ইংরেজিতে লেখা থাকে। অনেক সময় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা থার্ড পার্টির মাধ্যমে ট্রান্সক্রিপ্ট এর সত্যতা যাচাই করে।
- বিদেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় গুলো সাধারণত তিন সেমিস্টার এর মাধ্যমে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করে থাকে। তাদের তিনটি সেমিস্টার হচ্ছে যথাক্রমে: ফল, স্প্রিং, এবং সামার। ইন্টারন্যাশনাল এর স্টুডেন্টদের জন্য ফল সেমিস্টারে আদর্শ হয়ে থাকে। যদি সেখানে ভর্তি হতে না পারেন, তাহলে পরের সেমিস্টারে ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করুন।
- বিদেশের যে বিশ্ববিদ্যালয় আপনি পড়ালেখা করার জন্য চিন্তা ভাবনা করছেন সে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ওয়েবসাইট, ফেসবুক আইডি, অথবা ইউটিউবে নজর রাখুন। কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের তাদের ভর্তির জন্য অনলাইনে সেশন পরিচালনা করে থাকে। কাজেই অনলাইনের মাধ্যমে হিসাব বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি খেয়াল রাখুন।
পরিশেষে
আজকে আমাদের এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে উপরে আলোচিত সমস্ত তথ্যগুলো যদি আপনি পড়ে থাকেন তাহলে বিদেশে স্কলারশিপ পাওয়ার ব্যাপারে আপনি অনেকটাই ভালোমতন জানতে পারবেন। তবে বিদেশে স্কলারশিপ পাওয়ার ক্ষেত্রে ভাগ্যের ব্যাপার যথেষ্ট হয়েছে, ভাগ্য ছাড়া হয়তো কোন কিছুই সম্ভব নয়।
কিন্তু তারপরও আপনাকে এই বিষয়ের প্রতি যথেষ্ট চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে অনেক ভালো ছাত্র ছাত্রীরা নানা দেশে পড়ার জন্য স্কলারশিপ পেয়ে যাচ্ছে। এবং তারা তাদের উচ্চশিক্ষার সনদপত্রের মান অধিক বাড়িয়ে তুলছে। ধন্যবাদ।