ধনেপাতার বিস্ময়কর অনেক গুণ! আশ্চর্য এর উপকারিতা!! ধনেপাতার উপকারিতার কথা বলে শেষ করা যাবে না। ধনেপাতায় রয়েছে এক ডজনেরও বেশি এসেনসিয়াল অয়েল। অনেক রকম উপকারী রাসায়নিক ও মানবদেহের জন্য অতীব প্রয়োজনীয় এবং অত্যন্ত জরুরি খনিজ পদার্থ।
ধনেপাতায় থাকে অনেক ধরনের এন্টি-অক্সিডেন্ট। আর এইসব এন্টি-অক্সিডেন্ট থাকার কারণে প্রতিদিন নিয়ম করে ধনেপাতা খেলে মাথার চুল ও ত্বক থাকে সজীব। মাথার ত্বকের গোড়ায় ধনেপাতার এইসব এন্টি-অক্সিডেন্ট ক্রিয়াশীল থাকে বলে চুলের গোড়ায় খুশকি জন্মাতে পারে না। এছাড়া ধনেপাতার এসেনসিয়াল অয়েল চুল ও শরীরের ত্বক ঝলমলে রাখে।
ধনেপাতার মধ্যে থাকা এসেনসিয়াল অয়েল এবং নানা ধরনের উপকারী রাসায়নিক ও অত্যন্ত জরুরি খনিজ পদার্থ মস্তিষ্কের পিটুইটারি গ্লান্ডসহ মস্তিষ্কের কোষে ক্রিয়াশীল থাকে বলে এন্ডোরফিন হরমোনের নিঃসরণ বৃদ্ধি পায়, ফলে মন প্রফুল্ল থাকে। এছাড়া থাইরয়েড গ্লান্ডের হরমোনের নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করে বলে হাইপোথায়রিজম এবং হাইপারথায়রিজমও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
ধনেপাতার মধ্যে থাকা ভিটামিন এ চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে। ধনেপাতার ক্যালসিয়াম দাঁত এবং শরীরের হাড় মজবুত রাখে। ধনেপাতায় আছে সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজসহ অনেক ধরনের সক্রিয় ধাতব মৌলিক। এসব সক্রিয় ধাতব মৌলিক পদার্থ থাকার কারণে শরীরের রক্ত সংবহনতন্ত্র সুস্থ থাকে। বিশেষ করে ধনেপাতার পটাশিয়াম হাই ব্লাডপ্রেসার বা উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
ধনেপাতার সোডিয়াম রক্তের মধ্যে ইলেক্ট্রোলাইটসের ভারসাম্য রক্ষা করে। রক্তে সোডিয়াম, পটাশিয়াম ও ক্লোরাইডের ভারসাম্য না থাকলে মানুষের শরীরের ইলেক্ট্রোলাইটসের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। তখন মস্তিষ্কের স্নায়ুর কোষে ও মাংসপেশিতে ইলেক্ট্রোলাইটসের ইমব্যালেন্সে জরুরি সিগনাল আদান-প্রদান ব্যহত হয়ে পড়ে।
ধনেপাতার সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজসহ অনেক ধরনের সক্রিয় ধাতব মৌলিক মস্তিষ্কের স্নায়ুর মাংসপেশিতে ও নিউরাল কোষে সিগনাল আদান-প্রদান জরুরিভিত্তিতে কার্যকরী করে তোলে, ফলে স্নায়ুর মাংসপেশিতে ও কোষে ইলেক্ট্রোলাইটসের ভারসাম্য রক্ষা হয় এবং মস্তিষ্ক সজীবতা লাভ করে।
ধনেপাতায় রয়েছে সিনিয়াল এসেনসিয়াল অয়েল এবং লিনোলিক এসিড। যা মানুষের শরীরের বাত ব্যথা, প্রদাহজনিত রোগ ও নানারকম এলার্জিতে অধিক কার্যকরী। ধনেপাতা ত্বকের জ্বালাপোড়া কমায়। হাড়ের ব্যথা ও ফোলা কমায়। ধনেপাতায় থাকা আশ্চর্য সব এন্ট্রি-এক্সিডেন্টের কারণে একজিমাসহ অনেক ধরনের ত্বকের অসুখ দূরীভূত হয়ে যায়।
এছাড়া ধনেপাতায় থাকা এন্টিবায়োটিক ও এন্টিএলার্জিক উপাদান একজিমা এবং ত্বকের এলার্জিসহ সকল চর্মরোগের জন্য অধিক শক্তিশালী ও অত্যন্ত কার্যকরী। ধনেপাতায় বিদ্যমান গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক পদার্থ ও সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজসহ অনেক ধরনের সক্রিয় মৌলিক ধাতবের কারণে রক্ত পরিশুদ্ধ হয় এবং রক্তের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল হ্রাস পায় ও উপকারী কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পায়।
ফলে উচ্চ রক্তচাপ হ্রাস পায়। তবে বেশি পরিমাণে ধনেপাতা খেলে যাদের লো ব্লাডপ্রেশার আছে, তাদের ব্লাডপ্রেশার অনেক নেমে যেতে পারে। তাই পরিমিতভাবে ধনেপাতা খাওয়াই তাদের জন্য উত্তম। এছাড়া বেশি ধনেপাতা খেলে হজমেরও কিছুটা সমস্যা দেখা দিতে পারে।
তাই যাদের হজমের সমস্যা, তাদের পরিমিতভাবে ধনেপাতা খাওয়াই ভালো। বহু রাসায়নিক পদার্থ ও এন্টিবায়োটিক ও এন্টিএলার্জিক উপাদানে সমৃদ্ধ ধনেপাতার আশ্চর্য উপকারিতার কোনো শেষ নেই। তাই এই শীতে বেশি বেশি করে ধনেপাতা খেতে হবে।
সাইফুল হক : লেখক, সম্পাদক, গবেষক।