আপনি আপনার জীবনে সফল হতে চান? কি ঠিক বলেছি তো! হ্যাঁ এটা তো ঠিক যে লাইফে একজন সফল ব্যক্তি কেনা হতে চাই। জীবনে নাম, যশ, খ্যাতি, টাকা এগুলো তো সবাই আশা করে। কিন্তু চাইলেই যে তা পাওয়া যাবে তা মোটেও নয়। তার জন্য দরকার হয় একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য এবং তার অর্জন করার জন্য যথেষ্ট ইচ্ছাশক্তি।
কিন্তু আপনার এখন মনে হতেই পারে যে লাইফে বড় হওয়ার মত তো আমার কিছুই নেই। না আছে টাকা, না আছে জ্ঞান, আর না আছে উচ্চতর শিক্ষা। আমার পক্ষে কি লাইফে বড় হওয়া সম্ভব? আর যদি বড় কোনো ব্যবসাও করতে চাই তেমন টাকা পয়সাও তো আমার কাছে নেই। ঠিক এই কারণেই আপনাদের বলতে চাই লাইফে বড় হতে গেলে টাকা-পয়সা, জ্ঞান, উচ্চশিক্ষা এগুলোর পাশাপাশি আরও কিছু জিনিস লাইফে প্রয়োজন পড়বে। তার মধ্যে প্রথমেই যে জিনিসটা দরকার সেটি হলো একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য এবং ঠিক তারপরে যা দরকার হবে তা হলো সেই লক্ষ্যকে সফল করার জন্য যথেষ্ট প্রত্যাশা অর্থাৎ আপনার ইচ্ছাশক্তি।
তাই এই আর্টিকেলে আজ আপনাদের এমন একজনের কথা বলবো যার জীবনের গল্প জেনে আপনি চমকে উঠবেন। আর আমি আপনাদের এটাই বলব যে, এই ব্যক্তির জীবনের সমস্যাগুলোর সঙ্গে আপনি নিজের জীবনের সমস্যা গুলোকে একবার তুলনা করে দেখবেন। তাহলে হয়তো আপনার মনে হতেই পারে যে আপনার জীবনের সমস্ত বড় সমস্যাগুলি আসলে কোন সমস্যাই নয়। আর তাই আপনার কাছে একটাই অনুরোধ অবশ্যই এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন কারণ আজকের এই আর্টিকেলটি হয়তো আপনার জীবনের সমস্ত বড় সমস্যা গুলোকে একদম শেষ করে দিতে পারবে। তো চলুন শুরু করা যাক…
আজকে আমরা যে ব্যক্তিটি সম্পর্কে কথা বলতে চলেছি তিনি হলেন পৃথিবীর সবথেকে বড় মেমোরি অ্যান্ড স্পিড রিডিং এক্সপার্ট। তিনি একজন ইন্টারন্যাশনাল স্পিকার এবং সোশ্যাল এন্ট্রেপ্রেনিউর (Entrepreneur)। এছাড়াও তিনি কুইক লার্নিং নামক একটি কোম্পানির সিইও। হ্যাঁ এই ব্যক্তিটি হলেন ‘জিম কুইক’। তার জীবনের শুরুর দিকে এমন এক আঘাত আসে যা তাকে ক্রমশ হতাশার অন্ধকারে নিয়ে যায়।
ছোটবেলায় তিনি একবার স্কুলের বেঞ্চ থেকে নিচে পড়ে যায়। যার ফলে তার ব্রেনের নার্ভ প্রচন্ডভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যা তার লেখাপড়ার ওপর প্রচন্ড পরিমাণে প্রভাব ফেলতে থাকে। স্কুলে কোন পড়ায় তিনি বুঝতে পারতেন না, এমনকি কোন কিছুই তার মাথায় ঢুকতো না তাই তিনি সব সময় চুপচাপ একাই থাকতো। তারই ক্লাসের অন্যান্য স্টুডেন্টরা তাকে ‘দ্য বয় অব ব্রোকেন’ বলে ডাকতো। সব থেকে বড় কথা হলো তিনি একেবারেই রিডিং পড়তে পারতো না। তাই বই পড়তে গেলেই তিনি ভয় পেতেন। স্কুলের স্টুডেন্টরা তাকে বোকা, হাঁদা ইত্যাদি বলে ডাকতো।
এই পরিস্থিতিকে নিয়েই তিনি পরবর্তী তিন বছর বাক্য লেখা রপ্ত করতে শুরু করে। রাত্রিবেলা রিডিং পড়তে শুরু করে।তার প্রিয় বই ছিল এক্স ম্যান। যার সাথে তিনি তার জীবন কেউ জুড়তে পারতেন। তার যেন কোথাও একটা মনে হতো যে এক্স ম্যান এর সঙ্গে তার জীবনের কিছু একটা অদ্ভুত মিল রয়েছে। তাই এই এক্স ম্যান বই পড়েই তিনি তার প্রথম রিডিং পড়া শুরু করেন।
একটা ছেলে যার ব্রেনের পড়া ও বোঝার শক্তি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। সে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে বই পড়তে পড়তে আবার রিডিং পড়া শিখে নেই। একবার তার স্কুলে রিডিং ও রাইটিং স্কিল এর উপর একটা টেস্ট ঘোষণা করা হয়। কিন্তু তার বাবা-মা তাকে সেই টেস্ট দিতে বারণ করেন। কিন্তু তিনি বলেন বাবা ও মা তোমাদের মাথা আমি নিচু হতে দেব না। রিপোর্ট কার্ডে আমি পাশ করেই দেখাবো এবং প্রমাণ করবো যে, আমার মধ্যেও ট্যালেন্ট আছে।
শেষমেষ তিনি সেই টেস্টটিতে যোগদান করেন। সেই টেস্টে তার টপিক ছিল লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি। এরপর থেকে তিনি সবসময় লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি সম্পর্কে রিসার্চ করতে শুরু করেন। রাতদিন রিডিং প্র্যাকটিস করতে থাকেন। আসলে এটা তার কাছে একটা চ্যালেঞ্জ ছিল যে, সে তার রিপোর্ট কার্ডে পাস করেই দেখাবে। আর তিনি মনে করতেন এটাই ছিল তার কাছে সঠিক সময় তার সহপাঠী ও শিক্ষকদের কাছে তুলে ধরা যে, তার মধ্যেও ট্যালেন্ট আছে।
কিন্তু শেষমেশ যখন সেই দিন এলো যখন সব স্টুডেন্টের সামনে তার টপিক সম্পর্কে বলতে বলা হলো তখন তার আবার সেই পুরনো দিনের কথা মনে পড়ে গেল। তার মুখ থেকে একটা শব্দও বের হলো না। অর্থাৎ তার কঠোর পরিশ্রম ও চেষ্টা নষ্ট হয়ে গেল এবং শেষমেশ তার রিপোর্ট কার্ডের মার্কস আসলো শূন্য। এই মার্কস দেখে ছেলেটি অর্থাৎ জিম কুইক খুবই অসহায় হয়ে পরলো।
সেই ঘটনার পর থেকে তার মাথায় শুধু একটাই কথা ঘুরপাক খেতে থাকলো যে এটা কিভাবে সম্ভব? ছেলেটি ভাবতে থাকলো আমি কেন এতো আনলাকি? আমার ভাগ্য কেন এতো খারাপ? এবং এই মতই ছেলেটি আবার পুনরায় রিডিং পড়তে শুরু করলো। কিছু দিনের মধ্যে তিনি ভালো স্পিডে রিডিং পড়া শিখেও ফেললো। কিন্তু ঠিক সেই সময়েই ঘটলো আর একটা বিপত্তি। তার জীবনে আবার একটা দুর্ঘটনা ঘটলো। তিনি সিঁড়ি থেকে পরে গিয়ে পুনরায় মস্তিস্কে আঘাত পেলেন। যা ছিল তার লাইফের আরো একটি খারাপ সময়।
অর্থাৎ তিনি যখনি কিছু না কিছু করতে যেতো তখনি কোনো না কোনো বাঁধা তার সামনে এসে দাঁড়াতো। কিন্তু তিনি মোটেও দমে যাওয়ার পাত্র ছিলেন না। হাসপাতালের বেডে শুয়ে শুয়ে তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন ব্যাস অনেক হয়েছে, এবার আমার লাইফের কোনো না কোনো সমাধান বের করতেই হবে। তিনি নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করতে থাকলেন যে, আমার সমস্যাটা কি? এবং অবশেষে তিনি খুঁজে পেলেন তার সমস্যা হলো এই যে, আমি কোনো কিছুই মনে রাখতে পারি না এবং আমার মেমোরি খুবই দুর্বল। আমার ব্রেন খুবই স্লো। এই উত্তর গুলো পাওয়ার পর তিনি খুঁজতে শুরু করলেন কিভাবে কোনো জিনিসকে সহজে শেখা যায়।
তার মনে হতে শুরু করে আমাদের জীবনে বইতো অনেক রয়েছে এবং সেগুলো পড়ানোর জন্য শিক্ষকেরও কোনো অভাব হয় না। কিন্তু কিভাবে এই বইগুলোকে পড়ে ভালোভাবে মনে রাখা যায় এটা কিন্তু কেউই শেখায় না। অর্থাৎ আমাদের চারপাশের শিক্ষকরা বলে পড় পড়, কিন্তু কিভাবে পড়বো? কিভাবে পড়লে মনে রাখা সহজ হয়? তা সম্পর্কে কিছুই কখনো আমাদেরকে শেখানো হয় না।
তখনই জিম কুইক ঠিক করেন যে তিনি প্রথমে মস্তিষ্ককে ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করবেন, যে কিভাবে আমাদের মস্তিষ্ক কাজ করে? কিভাবে একে আরো শক্তিশালী করা যায়? কিভাবে আমাদের মস্তিষ্ককে আরো কাজে লাগানো যায়? আর তার এই সিদ্ধান্তই ছিল তার লাইফ চেঞ্জিং সিদ্ধান্ত। তখন তিনি বুঝতে পারেন যে তিনি কেন এতোদিন অন্ধকারের মধ্যে নিজেকে লুকিয়ে রেখেছিল। কেন এতোদিন তিনি নেগেটিভ ছিলেন। আর কেনইবা এতোদিন কোনো পজিটিভ চিন্তা করেননি। এরপর তিনি মাইন্ড এক্সপার্ট হয়ে একজন মাইন্ড এবং মেমোরি ট্রেইনার হয়ে ওঠেন।
এছাড়াও তিনি আজ বড় বড় কোম্পানির মালিক। ইলোন মাস্কের মতো বড় বড় ব্যক্তিত্বকেও তিনি ট্রেইন করে থাকেন। একটি ছোট্ট ছেলে যে একসময় রিডিং না পড়া ও বোঝার জন্য কারণে লাইফ থেকে হারিয়ে যেতে চাইছিলো সে আজ তার নিজের স্টুডেন্টদেরই ট্রেইন করছেন। অর্থাৎ এর থেকে আমরা এটাই বুঝতে পারি যে এটাই হলো ব্রেনের আসল শক্তি এবং আমরা প্রত্যেকটি মানুষ জীবনে সবকিছু করার জন্য উপযুক্ত।
শুধু আমাদেরকে এটাই বুঝতে হবে যে আমাদের মস্তিষ্ককে আমরা যেভাবে কাজে লাগাবো এটা সেভাবেই কাজে লাগবে। আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি জীবন জীবন সম্পর্কে একটু হলেও সঠিক উপলব্ধি করতে পেরেছেন। এতক্ষণ মন দিয়ে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।