ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন: বার্ষিক পরীক্ষা শেষ।অনেক উত্তেজনা কাজ করছে মনে। কারন,এতদিন অপেক্ষা করেছি এই দিনটার জন্য।দিন গুনতাম শুধু কখন এই বার্ষিক পরীক্ষা টা শেষ হবে আর কখন গ্রামে মামার বাড়িতে যাব।অবশেষে সেই শুভ দিনটা এলো।আজ পরীক্ষা শেষ,তাই কালকেই আমরা মামার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হবো।আমার আর তর সইছে না –কখন যে সকালটা হবে সেই অপেক্ষায় আছি।
ও হ্যা এতোকিছু বলতে গিয়ে আমার নিজের পরিচয়টা ও দেওয়া হয়নি।আমি হলাম শুভ,ক্লাস ফোর এ পড়ি। আমার এক ছোট বোন আছে নাম রিয়া। টু তে পড়ে ও। ভীষণ দুষ্ট ।কিন্তু লেখাপড়ায় খুব ভালো ও মনোযোগী।যাই হোক ,এখন রাত 9:30 টা বাজে।সবাই খেতে বসলাম টেবিলে। বাবার আদেশ সবাই যেন তাড়াতাড়ি খেয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ি।সকালে ভোরে ভোরে উঠে নাস্তা খেয়ে খুব সকালে রওনা দিতে হবে। তাই আমরা খেয়ে সবাই তাড়াতাড়ি ঘুমাতে গেলাম।কখন ঘুমিয়ে গেছি নিজেও জানিনা।সকালে খুব ভোরে উঠে সবার সাথে নাস্তা খেয়ে খুব দ্রুত রেডি হয়ে গেলাম।সকাল সাতটার মধ্যে আমরা রওনা হয়ে গেলাম।আমার খুশি আর দেখে কে…খুশিতে রীতিমতো লাফাচ্ছি।ছোটবোন ও অনেক উত্তেজিত ,তবে আমার মতো না ।
আমি আর ও পাশাপাশি বসে আছি ,সেই সুবাদে আমার অতি উত্তেজনার শিকার হচ্ছে আমার নিরীহ বোনটা।এর জন্য অনেকবার মায়ের ধমক খাওয়ার পর আমি একটু নিজের উত্তেজনা নিজের মধ্যেই দমিয়ে রাখার চেষ্টা করলাম।যদিও এটি খুব একটা সহজ কাজ না।তাও মায়ের ধমকের কাছে নিজেকে হার মানতে হলো।বাবা সামনের ড্রাইভিং সিটে আর মা বাবার পাশের সিটে বসে আছেন।ওরা নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন কথা আলোচনা করছেন।তবে কি বিষয় নিয়ে সেটা জানিনা।জানার দরকার নেই ।আমরা আমাদের মতো গল্প করছি চারপাশের পরিবেশ নিয়ে।
এভাবে যেতে যেতে প্রায় কাছাকাছি চলে আসলাম।হঠাৎ আমাদের গাড়িটা থেমে গেল।বাবা বিরক্তি নিয়ে বলল- এটার আবার কি হলো?বাবা আমাদেরকে বলল- তোমরা গাড়িতে বসো,আমি গাড়িটা একটু চেক করে নি।আমরা বাবাকে বললাম বাবা তুমি গাড়ি চেক করতে করতে আমরা আশেপাশে একটু ঘুরে দেখে আসি??বাবা প্রথমে রাজি না হলেও পরে বলল-আচ্ছা যাও,তবে আশেপাশে থাকবে দূরে কোথাও যেওনা যেন। আমরা বললাম ঠিক আছে বাবা দূরে কোথাও যাবো না।মা শুধু একটা মুচকি হাসি দিল,আর কিছু বললনা।আমরা দুজন হাটতে হাটতে একটু সামনের দিকে গেলাম।সামনে দেখলাম একটা সুন্দর পুকুর।পরিষ্কার পুকুরের জল।দেখেই ইচ্ছে হচ্ছিল ওখানে নেমে পানিতে ঝাপাঝাপি করি।কিন্তু সেটা আর করলামনা।রিয়া আমাকে বলল ভাইয়া দেখ ,কত্তবড় একটা বাড়ি আর দেখতে ও কত সুন্দর!!
আমি ও তাকিয়ে দেখলাম আসলেই অনেক সুন্দর আর অনেক বড় বাড়িটা।আমি বললাম- চল ভিতরে গিয়ে দেখি।ও বলল যদি মা বাবা বকা দেয়??আমি বললাম ওরা জানবেনা।আমরা যাব আর আসব।ও বলল আচ্ছা চলো। তারপর আমরা দুজনে মিলে এগিয়ে গেলাম।দরজাটা একটু ধাক্কা দিতেই সহজেই খুলে গেল।আমরা আস্তে আস্তে ভিতরে ঢুকলাম।তারপর এদিক ওদিক দেখতে লাগলাম।রিয়া সাজানো শো পিস গুলো খুব ভালো করে দেখছে হাতে নিয়ে।আর আমি সিড়ি বেয়ে আস্তে আস্তে উপরে উঠে গেলাম।পুরোনো দিনের রাজকিয় প্রাসাদ অনেক বড় কামরা গুলো।আমি উপরের একটা কামরাতে ঢুকলাম।আমি ঢুকতে চাইছিনা তবুও যেন কোনো অদৃশ্য শক্তি আমাকে ভিতরে টেনে নিচ্ছে।
ভিতরে ঢুকে দেখলাম ওখানে অনেক মূর্তি দাড় করানো রয়েছে।তবে মূর্তিগুলো কেমন যেন জীবন্ত মনে হচ্ছে,আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে সবাই।ধীরে ধীরে সবাই আমার দিকে আসছে।আমার সারা শরীর ঘেমে একাকার হয়ে আসছে।একজন এসে আমাকে গলা টিপে ধরেছে।আমি প্রাণটপনে চিৎকার করতে চাইলাম কিন্তু গলা দিয়ে কোন আওয়াজই বের হলোনা।আমি হাত পা আছড়াতে লাগলাম নিজেকে বাচাঁনোর জন্য।জানি এখান থেকে বেঁচে ফিরা প্রায় অসম্ভব তাও আমি নিজেকে বাঁচানোর যথাসম্ভব চেষ্টা করতে লাগলাম।সারা শরীর ভিজে গেছে ঘামে।বাচার আশা ছেড়ে দিলাম।হঠাৎ বোনের আওয়াজ শুনতে পেলাম।মা দেখ ভাইয়া কেমন করছে।মা এসে বলছে এই কি হয়ছে রে তোর,এমন করছিস কেন??আর মামার বাড়ি যাবি না??তাড়াতাড়ি উঠে রেডি হয়ে নে।আমি ধড়ফড় করে বিছানায় উঠে বসলাম।তারমানে এতক্ষণ আমি সপ্ন দেখছিলাম।যাক বাবা বাচাঁ গেল।
এরপর উঠে রেডি হয়ে মামার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেলাম।কিন্তুআগের মতো আর উত্তেজনা কাজ করছেনা।কিছুটা ভয় আর সংশয় নিয়ে চললাম গ্রামের উদ্দেশ্যে ।আশা করি সপ্নের মতো আর কিছু বাস্তবে ঘটবেনা।