সাজিয়া নামের সেই মেয়েটি

বাংলাদেশের জেলাগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলার মীরসরাই উপজেলার জামালপুর নামক ছোট্ট একটা গ্রাম। সেই গ্রামের অতিদরিদ্র একটি পরিবারের মেয়ে নাম তার সাজিয়া। দেখতে ততটা সুন্দর না হলেও মেয়েটি ছিল শান্ত-সভ্য।

সেজুতির বাবা খুবই দরিদ্র একজন কৃষক। ওর পরিবারে বাস করে স্ত্রী, এক ছেলে, তিন মেয়ে। তাদের নিয়ে কোনো রকম খেয়ে না খেয়ে ওর জীবন চলে যায়। ওর তিন মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে সাজিয়া,মেজো মেয়ে সাদিয়া আর ছোট মেয়ে সাকিবা। আর একমাত্র ছেলে সাব্বির। তাদের সংসারে অভাব অনটন থাকা সত্ত্বেও একরকম আনন্দ ছিলো।

সবাই একে অন্যের সাথে মিলে মিশে থাকতো। কিন্তু হঠাৎ এক ঝড় এসে সাজিয়ার পরিবারের সকল আনন্দ কেড়ে নিয়ে যায়। একদিন সাজিয়ার বাবা হঠাৎ সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকে। অনেক চেষ্টা করেও তারা তাদের বাবাকে বাঁচাতে পারেনি। সাজিয়াদের পরিবারের একমাত্র আয় রোজগারের লোক ছিল ওর বাবা।

তাই তার বাবা মারা যাওয়ায় তাদের পরিবারের অবস্থা আগের থেকে অনেক খারাপ হয়ে গেছে। এমন এক সময় আসে যখন তাদের সংসার আর চলে না। আর এমন পরিস্থিতিতে সাজিয়া বাধ্য হয়ে সংসারের সকল দায়িত্ব নিজের উপর নেয়। সাজিয়া গ্রামের এক সম্রান্ত পরিবারে কাজ করে সংসার চালায়। ও কাজ করে তার মা,ছোট ভাই-বোনগুলোকে হাসি খুশি রাখে।

গ্রামে একজন নতুন ছেলে আসে। সে সাজিয়াকে দেখে অনেক পছন্দ করে। সাজিয়াকে সে অনেক স্বপ্ন দেখায়। সাজিয়াও ছেলেটাকে আস্তে আস্তে ভালোবাসতে শুরু করে।  ছেলেটা সাজিয়ার পরিবারের সকল দায়িত্ব নিবে বলে। সাজিয়াদের প্রেমটা ছিল মাত্র দেড় থেকে দুই মাস। এর কারণ হলো সাজিয়া জানতে পারে তাকে যে ভালোবাসার স্বপ্ন দেখিয়েছিলো, সে অন্য কাউকে ভালোবাসত।

মাঝখানে সাজিয়ার সাথে শুধু অভিনয় করে ছিল।  সাজিয়ার জীবনটা ছোটবেলা থেকেই অনেক দুঃখ কষ্টে কেটেছে। ওর কাছে তাই এই দুঃখটা নতুন কিছু ছিলো না । তবে সাজিয়া ছেলেটাকে সত্যিই মন থেকে ভালোবেসে পেলেছে। যা হয়তো কেউ ২-৩ বছর প্রেম করেও কাউকে কেউ ভালোবাসতে পারে না ।

তবে সাজিয়া ভেঙে পড়ার মতো মোটেও কোনো মেয়ে ছিলো না । তাই সাজিয়া কাজ করে ছোট্ট একটা খামার দেন। সেখানে সাজিয়া কয়েকটা হাঁস-মুরগি , কয়েকটা গরু-ছাগল পালন করা শুরু করে।  আর এ থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে ও তার ছোট ভাইবোনদের পড়ালেখা করায়। সাজিয়া আস্তে আস্তে অনেক নাম করা ব্যক্তিতে পরিণত হয়।

বর্তমানে সাজিয়ার ছোট দুই বোন ইংল্যান্ডে পড়াশোনা করছে । আর ভাই ডাক্তার হয়ে তার নিজ গ্রাম জামালপুরের হতদরিদ্র মানুষদের বিনামূল্যে সেবা দান করে থাকে। আর সাজিয়া বর্তমানে তার উপজেলার একজন সফল ব্যক্তি। সে তার নিজ এলাকায় গরিব ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার জন্য একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে।  সে নিজেকে অনেক সুখী মনে করে কারণ সে তার পরিবারকে সুখী রাখতে পেরেছে ।

Related Posts

15 Comments

মন্তব্য করুন