মানব শরীরের সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গ, চিন্তা চেতনা সহ নানান বিষয় মূলত মস্তিষ্ক দ্বারায় নিয়ন্ত্রিত। এজন্য মানবদেহের জন্য মস্তিষ্ক কতটা গুরুত্ব বহন করে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বয়স বাড়ার সাথে সাথে ধীরে ধীরে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমতে থাকে। এজন্য স্মৃতি শক্তি হ্রাস পায়। তবে বিজ্ঞানীদের গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বিশেষ কিছু উপায় অবলম্বনের মাধ্যমে বাড়ানো সম্ভব। তাহলে চলুন জেনে নিই মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির কিছু অসাধারণ উপায়।
মস্তিষ্ককে ভালো রাখতে মনকে কাজে লাগান
মস্তিষ্কের জন্য আপনার মনকে ভালো রাখা খুবই জরুরী। আপনি যদি মানসিক ভাবে অবসাদ গ্রস্থ হয়ে পরেন তবে সেই চাপ আপনার মস্তিষ্কে গিয়ে পরবে। হাসি খুশি থাকা, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতাকে বাড়াতে খুবই সাহায্য করে।
আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার লোমালিন্ডা ইউনিভার্সিটির এক সমীক্ষায় জানা গেছে মস্তিষ্ককে সচল রাখতে জোরে জোরে হাসা খুবই কার্যকরী একটি উপায়। প্রতিদিন নিয়মিত এই কাজটি করার চেষ্টা করুন। তবে সব সময় করলে কিন্তু মানুষ পাগল ভাবতে পারে। এজন্য নির্দিষ্ট কিছু সময়ে করুন।
মাঝে মধ্যে কিন্তু সল্প মাত্রার মানসিক চাপ স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এতে মস্তিষ্ক জরুরী কোনো পরিস্থিতিতে দ্রুত কাজ করার শক্তি লাভ করে। তবে মানসিক চাপের মাত্রা অতিরিক্ত হলে তা শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে খুবই ক্ষতিকর।
মস্তিষ্কের জন্য মাল্টিটাস্ক কতটা উপকারী
‘মাল্টিটাস্ক’ অর্থাৎ একসঙ্গে একাধিক কাজ করা। একসঙ্গে একাধিক কাজ মানুষের মস্তিষ্ককে বিভ্রান্ত করে তোলে। এর ফলে মস্তিষ্কের কোনো কাজের প্রতি মনোযোগের বিঘ্নতা সৃষ্টি হয়। এজন্য কোনো কাজই শেষ পর্যন্ত ঠিকঠাক মতো হয় না। তাই মাল্টিটাস্কিং করার সময় সিদ্ধান্ত নিন যে আপনার মস্তিষ্কের জন্য কাজ গুলো কতটা চাপ ফেলতে পারে। তবে বেশিরভাগ সময় এটা উপকারের থেকে অপকারই বেশি করে।
প্রতিনিয়ত নতুন কিছু শিখুন
প্রতিনিয়ত নতুন কিছু শেখা বা জ্ঞান আহরণ করা মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে খুবই সহযোগিতা করে। আপনি যেসব বিষয়ে কম ধারণা রাখেন বা যেসব বিষয় সম্পর্কে আপনার কোনো জ্ঞান নেই সেই বিষয়গুলো শেখার চেষ্টা করুন। এর ফলে মস্তিষ্ক সচল থাকে। এবং যেকোনো কাজে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। শুধু যে শিখেই যাবেন তা কিন্তু নয় অন্যের সাথে আপনার শেখা বিষয়গুলো শেয়ার করার চেষ্টা করুন। এতে করে আপনার মস্তিষ্ক বিভিন্ন বিষয়ে বেশ পারদর্শী হয়ে উঠবে।
রুটিন এলোমেলো করে দিন
এই কাজটি মস্তিষ্কের জন্য খুবই কার্যকর। আপনি প্রতিদিন যে নিয়ম অনুযায়ী আপনার কার্যক্রম গুলো সম্পন্ন করেন, মাসে অন্তত ৫ থেকে ৭ দিন সে নিয়ম অনুযায়ী কাজ গুলো না করে কিছুটা আলাদা ভাবে কাজ গুলো করুন। অর্থাৎ প্রতিদিনের রুটিন একটু এলোমেলো করে দিন। এই কাজটি মস্তিষ্ক সজাগ থাকতে সাহায্য করে। তবে অবশ্যই প্রতিদিন এই কাজটি করতে যাবেন না। কারণ প্রতিদিন আপনার রুটিন পরিবর্তন হলে আপনার মস্তিষ্ক বিভ্রান্ত হয়ে যাবে।
শারীরিক ব্যায়াম
শারীরিক ব্যায়াম মস্তিষ্কের বৃদ্ধির জন্য খুবই উপকারী। প্রতিনিয়ত ব্যায়ামের ফলে মস্তিষ্কে নতুন কোষের সৃষ্টি হয়। মস্তিষ্কে অক্সিজেন ও গ্লুকোজ সরবরাহে সহায়তা করে শারীরিক ব্যায়াম। এজন্য নিয়মিত হালকা অথবা ভারী ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন। শারীরিক ব্যায়াম মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
ক্রিয়েটিভ হওয়ার চেষ্টা করুন
নিজেকে ক্রিয়েটিভ করে তোলার চেষ্টা করুন। নতুন নতুন বিষয় সম্পর্কে জানুন এবং সেগুলোকে কাজে লাগিয়ে কোনো কিছু আবিস্কারের চেষ্টা করুন। আপনার যে বিষয় ভালো লাগে সে বিষয় সম্পর্কে বেশি বেশি গবেষণা শুরু করে দিন। এতে আপনার জ্ঞানের পরিধি বাড়বে ও আপনার মস্তিষ্ক আরো বেশি সৃষ্টিশীল হয়ে উঠবে।
তবে অবশ্যই আপনি যে কাজটিই করেন না কেন, সেই কাজটি আপনাকে উপভোগ করতে হবে। যে কাজ আপনার ভালো লাগে না সে কাজ করলে তা কোনো কাজেই আসবে না।
গাণিতিক সমস্যা সমাধান
আজ থেকেই ক্যালকুলেটরকে পড়ার টেবিল থেকে সরিয়ে দিন। ছোট বড় সকল গাণিতিক সমস্যা গুলোর সমাধান নিজে নিজেই করার চেষ্টা করুন। ভুল হলে বার বার করতে থাকুন। যে সমস্যা গুলোর সমাধান একটু চেষ্টা করলে নিজেই করা যায় সেগুলো করতে ক্যালকুলেটর ব্যাবহার না করে নিজেই করার চেষ্টা করুন। এর ফলে যেকোনো সময় যেকোনো জায়গায় আপনার মস্তিষ্ক দ্রুত গাণিতিক হিসাব নিকাশে পটু হয়ে উঠবে।
মস্তিষ্কের বুদ্ধিমত্তা পরীক্ষার কিছু কৌশল
মস্তিষ্কের বুদ্ধিমত্তা পরীক্ষা ও বুদ্ধিমত্তা বাড়ানোর জন্য আপনি বিভিন্ন ব্রেইন গেম, এলোমেলো অক্ষর দিয়ে বিভিন্ন শব্দ ও বাক্য তৈরি করা, আইকিউ টেস্ট, কুইজ প্রতিযোগিতা, জটিল গাণিতিক সমস্যার সমাধান ইত্যাদি কাজ গুলো করতে পারেন। এই কাজ গুলো নিয়মিত চর্চার মাধ্যমে মস্তিষ্কের বুদ্ধিমত্তা বাড়ানো সম্ভব। নিয়মিত কাজ গুলো করতে থাকলে একটা সময় মস্তিষ্ক যেকোনো কাজে খুব দ্রুত ফলাফল করতে সক্ষম হয়।
মস্তিষ্কের বিশ্রাম
মস্তিষ্ক খুবই সংবেদনশীল একটি অঙ্গ। মানবদেহের কথা বার্তা, চাল চলন, চিন্তা ভাবনা সব কিছুই মস্তিষ্কের দ্বারায় নিয়ন্ত্রিত। এজন্য এর কার্যক্ষমতা ঠিক রাখার জন্য বিশ্রাম অবশ্যই জরুরী। এজন্য অবশ্যই নিয়মিত সঠিক সময় মতো ঘুমানো শরীর ও মস্তিষ্কের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। প্রতিদিন অন্তত ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুম স্বাস্থ্যের খুবই প্রয়োজনীয়। ঘুম কম হলে মস্তিষ্ক সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। যার ফলে মানসিক অবসাদ, শারীরিক দুর্বলতা সহ বিভিন্ন সমস্যার দেখা দেয়।
সবসময় চেষ্টা করুন ঘুমানোর সময় ঘরটাকে অন্ধকার রাখতে, এতে ঘুম ভালো হয়। এবং সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রকৃতির মাঝে হাঁটাচলা বা শারীরিক ব্যায়াম করা মস্তিষ্ক ও স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী।
বিনোদন
এতো কিছুর মাঝে বিনোদনকে বাদ দিলে চলবে না। কারণ মস্তিষ্ক ভালো রাখতে বিনোদনের প্রয়োজনও রয়েছে। নতুন কোনো জায়গায় ঘুরতে যাওয়া, মুভি দেখা, গান শোনা ইত্যাদি যে বিনোদনই আপনার পছন্দ তা আপনার মস্তিষ্কের জন্যও প্রয়োজনীয়। এর ফলে আপনার মস্তিষ্ক ভালো কাজ করে ও কোনো কাজে সহজেই মনযোগী হয়ে পরে।
মস্তিষ্কের খাবার
মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি ও কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য খাবারের ভূমিকা অন্যতম। কেননা খাবার মস্তিষ্কের সুস্থতা বজায় রাখতে ও মস্তিষ্ককে সচল রাখতে সাহায্য করে। মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য উপরের বিষয় গুলো নিয়মিত চর্চার মাধ্যমে একটা ভালো ফল লাভ করা সম্ভব। আশা করি আর্টিকেলটি আপনার একটু হলেও উপকারে আসবে। আর্টিকেলটি কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে জানান এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে তাদেরকেও জানতে সহযোগিতা করুন।