প্রবন্ধের শুরুতে সকলকে একরাশ প্রীতি আর শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আশা করি সকলেই ভালো আছেন সুস্থ আছেন। আজ একটি অন্য রকম গল্প শুরু করে দেব। বাংলায় একটা প্রবাদ আছে /কথা প্রচলিত আছে, – “যার জন্য চুরি করি সেই বলে চোর।” আমরা সাধারণত যাকে খুব ভালোবাসি, আদর করি স্নেহ করি-তার জন্য অনেক দুঃখ কষ্ট সইতে পারি। এমন কি তার জন্য অনেক গর্হিত কাজ ও করতে পারি। নিরবে অগৌচরে এমন কাজ করি যা সচরাচর সাধারণের গোচরীভূত হলে নিন্দার ঝড় বইতে পারে, লঙ্কাকাণ্ড ঘটতে পারে, অনেক কঠিন শাস্তি কঠিন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু তবুও প্রিয়জন প্রিয় মানুষ বলে কথা, সব কিছু করা সম্ভব হয়।
অপরদিকে সেই প্রিয়জন প্রিয় মানুষ যার জন্য এসব করা হয় অনেক সময় সে বুঝে হোক অথবা না বুঝে হোক অথবা তার অগৌচরে থেকে হোক সে এসবের প্রতি এমন অনীহা ভাব প্রকাশ করে যেন সে এটা তোড়াই কেয়ার করে না। তার মধ্যে মনে হয় এটা কোন প্রভাবই ফেলছে না। অথচ তার প্রিয় ব্যক্তি তার অগৌচরে তার জন্য সাত সমুদ্র তের নদী পার হয়েও বৃন্দাবন ঘুরে তার জন্য বীর হণুমানের মত হিমালয় পর্বত বহন করে তার পায়ের নিচে হাজির করে দেবে; যা যা প্রয়োজন তার তা মেটানোর জন্য। এমন পরিস্থিতি প্রত্যেকের জীবনে কম-বেশি হয়ে থাকে। কিন্তু প্রিয়জন বলে কথা, যার জীবনে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় সে হয়তো তা প্রকাশ করার ও সাহস পায় না। পাশে প্রিয়জনের মনে আঘাত লাগে এই ভয়ে। ভালোবাসা প্রিয়ভাব এমনই এক তরফা হয়। এটা কখন ও হিসেব করে চলে না।
মানুষের জীবন টা চলমান, চির বহমান। এখানে সব কিছুই যে নিজের হিসেবে চলবে এমন গ্যারান্টি কেউ দিতে পারে না। জীবন চলার পথে কত মানুষের সাথে চলতে ফিরতে হয়, তার ইয়ত্বা থাকে না। এই চলার পথে পথের সাথীদের কারো কারো সাথে অনেক সখ্যতা গড়ে উঠে, কখন ও কখন ও এই চলার সাথীরাই হয়ে উঠে আপন জন প্রিয়জন। আর প্রিয়জন মানে কি, কত আপন, কত প্রিয় তা ভাষায় প্রকাশ যোগ্য নয়।
মানুষ চিন্তাশীল এবং সঙ্গপ্রিয়। সে একাকী থাকতে পারে না বলে কারো সঙ্গ চায়। আর সাধারণত তার চলার সাথীরাই হয়ে উঠে সঙ্গ বা সঙ্গী। সঙ্গীই এক সময় প্রিয়জন প্রিয়সাথী বা আপনজন হয়ে উঠেন। প্রিয়জন তার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ, জীবনের সিংহভাগ। এখন এই প্রিয় জনই কিন্তু অনেক সময় জেনেও না জানার ভান বুঝেও না বুঝার ভান করে থাকে। যে প্রিয়জন তার জন্য সোনার চামচ সংগ্রহ করতে উদ্ধত হয় তাকেও সে অবজ্ঞা করে চলে। আর এখানেই আজকের আলোচ্যমান গল্পের শিরোনামের অবতারণা। প্রিয় পাঠক অবশ্যই বুঝতে পারছেন আমি কি বুঝাতে চাচ্ছি।
মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। সমাজে চলতে চলতেই এমনতর ঘটনার সম্মুখীন হই, হতে হয়। প্রত্যেকের একটা ব্যক্তিজীবন বলে একটা কথা আছে। এই ব্যক্তি জীবনের কথাটা অনেক সময় অনেক কাছের মানুষ ও বুঝতে পারে না। কারণ প্রত্যেকের জীবন আলাদা, এমন কি সেটা এক ঘরে বাস করা স্বামী-স্ত্রী, সন্তান তারাও বুঝতে সক্ষম হয় না। আর এখানেই সকলের অগৌচরে অজান্তে অনেক ঘটনা ঘটে চলে প্রকাশ পায় না। তাই প্রিয়জনের মর্ম গভীর ভাবে চিন্তা না করলে কেউ তা বুঝতে পারে না, উপলব্দি করতে পারে না। তবে আবার অনেকে গভীর চিন্তা করে এসব বুঝতে পারে। যারা এভাবে বুঝতে পারে তারাই কেবল প্রিয়জনের প্রয়োজন বুঝে জীবন কে সুন্দর করে তোলে। তবে এমন উপলব্দি করার মত মানুষের সংখ্যা খুবই কম।
যেমন-এমনটি ঘটেছে দুই বন্ধুর জীবনে। মারুফ এবং ইকবাল খুবই ভালো বন্ধু। একজন আরেক জনকে প্রাণ দিয়ে ভালো বাসে। তবে দুই জনের মধ্যে মারুফই তার বন্ধু ইকবাল কে বেশি ভালোবাসে মনে হয়। সে ইকবালের জন্য তার জান কোরবান করতেও দ্বীধা করবে না। তারা দুইজনে যেন পরাণে পরাণ। কেউ কাউকে ছাড়া চলতে পারে না। এক দিন হয়েছে কি তারা একটা সুপার মার্কেটে গেল। মার্কেটে ঘুরতে ঘুরতে তারা একটা জিনিস খুবই পছন্দ করে ফেলল।মারুফএর চেয়ে ইকবালই বেশি জিনিসটা পছন্দ করল। মারুফ এটা টের পেল, কিন্তু তাদের কাছে এত দামী জিনিস কেনার মত টাকা ছিল না। আর জিনিস টাও খুবই দামী ছিল। মারুফ মনে মনে ছটফট করতে লাগল তার বন্ধু ইকবালের জন্য জিনিস টা কিভাবে হাতিয়ে নেয়া যায়। সে মনে মনে ফন্দী আটল সেলসম্যান অগৌচর হলেই সে জিনিস টা হাতিয়ে নেবে। এক সময় সে সুযোগ বুঝে হাতিয়ে ও নিল। কিন্তু হাতিয়ে নিলে কি হবে গেইট পার হওয়ার জন্য উদ্ধত হতেই ধরা পড়ে গেল। আর তখনই তাকে পুলিশে ধরিয়ে দেয়া হল চুরির অভিযোগে। পরবর্তীতে অনেক দেন দরবার করে মারুফ কে থানা ছুটানো হল।
এ ঘটনার পর থেকেই ইকবাল তার বন্ধু মারুফকে বাঁকা চোখে দেখে। ইকবালের এক কথার জবাব মারুফ কেন চুরি করতে গেল। শত চেষ্টা করেও বুঝাতে সক্ষম হল না যে টাকা না থাকার জন্য প্রিয় বন্ধুর প্রিয় জিনিস দেখে লোভ সামলাতে না পেরে বন্ধুর জন্যই এ কাজ টি করেছে। তাই বন্ধু আমাকে ক্ষমা করো।
আমাদের প্রত্যেকের জীবনে জীবন চলার পথের সাথীরা সুন্দর মনের মানুষ হোক, প্রিয়জনের অন্তরের সকল অভ্যন্তরীণ চিন্তা বুঝার / উপলব্দি করতে সক্ষম হোক এটাই কামনা। যার জন্য চুরি করি সেই বলে চোর এমন অবস্থা কারোর জীবনে না হোক এটাই প্রত্যাশা। সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে এখানেই শেষ করলাম। সকলকে অসংখ্য ধন্যবাদ।