ধোঁকা দেওয়ার পরিণতি! মুরাদ ও শমসেরের গল্প

মুরাদ ছেলেটি একটা কোচিং এ পড়ে। এই কোচিং এ সে সব বিষয়েই পড়াশোনা করে। তার বন্ধু শমসেরও এই কোচিং এ পড়ে। দুইজনের মধ্যে খুবই বন্ধুত্ত্ব। একসাথে স্কুল যায়, একসাথে কোচিং এ যায়। একজন না গেলে অন্য জন যায় না। তাই সবাই তাদের দু জনকে জানের দোস্ত হিসেবেই চিনে। তারা প্রতিদিন ১০টায় স্কুলে যায়। আর বিকাল ৫টায় কোচিং এ যায়। ভালোভাবেই কাটছিল তাদের জীবন।

তারা স্কুলেও ছিল ভালো ছাত্র, কোচিং এও তারা ভালো ছাত্র। যেকোনো পরীক্ষায় মুরাদ হতো ১ম আর শমসের হতো ২য়। একদিন তাদের বন্ধুত্বে ধোঁকার জন্ম হলো। আর সেটা করলো শমসের। সে জানতে পারল যে, আগামী শুক্রবারে কোচিং এ পরীক্ষা হবে। যে পরীক্ষাতে ১ম হবে তার জন্য থাকছে ২০০০০ টাকা দামের একটা দামী স্মার্ট ফোন। শমসের জানত, যে সে পরীক্ষায় কখন ১ম হতে পারবে না। কারণ, মুরাদই সবসময় ১ম হয়।

কিন্তু, এবার তাকে ১ম হতেই হবে। তাই যে করেই হোক, মুরাদকে পরীক্ষা যেতে দেওয়া যাবে না। মুরাদ তো জানে যে শুক্রবারে পরীক্ষা আছে। কারণ কোচিং এ প্রত্যেক শুক্রবারে সাপ্তাহিক পরীক্ষা নেয়। কিন্তু মুরাদ জানে না যে, ১ম হলে স্মার্ট ফোন গিফট করা হবে। মুরাদ কেন কেউই জানে না।

শমসের কোচিং এর স্যারদেরকে ছুটির ব্যাপারে জিজ্ঞাস করার জন্য যখন কোচিং এর অফিস রুমে যায়, তখন দরজার আড়াল থেকে সে সবকিছু শুনতে পায়। স্যাররা বলাবলি করে, “আগামী শুক্রবারে একটা পরীক্ষা নেব। আর এটাতে যে ১ম হবে তাকে আমরা একটা ২০০০০ টাকা দামের স্মার্ট ফোন গিফট করব। কিন্তু, এই ব্যাপারটা কাউকে এখনই বলার দরকার নেই। পরীক্ষার আগের রাতে সবাইকে ফোন করে জানিয়ে দেব। এই মাসে ঝড় প্রায় হয়। তাই বলে আমরা পরীক্ষা নেব না, তা হয় না। অবশ্যই পরীক্ষা নেব।”

এইটা শুনার পরপরই শমসের ক্লাসে চলে আসে। আর সে মুরাদকে এই পরীক্ষায় এবসেন্ট করার জন্য নানান ছক কষতে থাকে। আর সে একটা বুদ্ধিও বের করে ফেলে।
সে পরীক্ষার আগের রাতে মুরাদকে বলে যে, কালকে পরীক্ষা হবে না। কারণ, কালকে ঝড় হতে পারে।

মুরাদ তার বন্ধুকে তো বিশ্বাস করেই। তাই সে তার কথা চোখ বন্ধ করেই বিশ্বাস করলো।
কিন্তু এমন সময়, মুরাদের ফোনে স্যারদের কল আসছিলো। মুরাদ তখন শমসেরের জন্য নাস্তা আনতে গিয়েছিল। মুরাদ যাতে না জানতে পারে, তাই সে ফোনটা বালিশের নিচে চাপা দিয়ে রাখল। একটু পরে, তার ফোনেও কল আসলো। (মুরাদ এসময় নাস্তা নিয়ে ঘরে ঢুকতেছিল, তাই তাকে দেখিয়ে স্যারদের কথা না শুনে) “জি স্যার। আমি সব জানি স্যার। মুরাদকেও সব বলেছি স্যার। ব্যাস্ত আছি স্যার। রাখি স্যার।”

আসলে স্যারেরা তাদের ফোন করেছিল, যেন কালকে কেউ কোচিং এ না আসে।

তারপরের দিন। আকাশ খারাপ করছিল। তাও শমসের কোচিং গেলো। তার বাবা-মাকে না বলে সে বাড়ির পিছন দিক দিয়ে দেওয়াল টপকে পার হলো। কিন্তু কোচিং এর কাছাকাছি যেতেই এমন ঝড় উঠল যে, শমসের কোন দিকে উড়ে গেলো, তা কেউ বলতে পারে না। এমনকি তার লাশও খুঁজে পাওয়া যায় নি।

পরে ঝড় থামলে, পত্রিকায় বড় বড় অক্ষরে লেখা বের হয় যে, “শমসের নামে এক ছাত্র নিখোঁজ”
আজ প্রায় ৫ বছর হয়ে গেছে। তবুও শমসেরের কোনো খোঁজ পায় নি কেউ।

Related Posts