আমরা আমাদের বাচ্চাদের শিক্ষা দিচ্ছি না ট্রেনিং দিচ্ছি , চলুন একটু দেখি আসি। আমাদের প্রথমেই শিক্ষা এবং ট্রেনিং এর মধ্যে পার্থক্যটা জানা থাকা দরকার । শিক্ষা হচ্ছে জীবনব্যাপি প্রক্রিয়া, যার জন্য কোন বয়স, কাল, স্থান নেই । একজন মানুষ তার জীবনের যে কোন বয়েসে গিয়ে শিখতে পারে।শিক্ষার ফলে ব্যক্তির মনের বিকাশ ঘটে।
ট্রেনিং হচ্ছে পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কাউকে কিছু আয়ত্ব করানো। বিভিন্ন চাকরীজীবি, ব্যবসায়ী, উদোক্ত্যা, খামারী, আরো বিভিন্ন পেশার সাথে জড়িত লোকদের কৌশল এবং দক্ষতা বৃদ্ধির একটি উপায় হলো ট্রেনিং।
প্রশ্ন হলো, আমাদের শিশুদের কি আমরা শিক্ষার ব্যবস্থা করছি , নাকি জোড় করে ট্রেনিং করাচ্ছি। একটি সিংহ সার্কেসে খেলায় দেখায়, ডলফিন খেলা দেখায় কথা শুনে, এরা কিন্তু সবাই ট্রেনিং প্রাপ্ত কিন্তু তাদের আমরা শিক্ষিত বলতে পারি না। তাদের মধ্যে কোন মানুসিক বিকাশ ঘটে না তারা সেটা শুধু করায়ত্ব করে বা অভ্যেসে পরিণত করে।
আমাদের শিশুদের জোড় করে মুখস্ত করানো, শীট আকারে সমাধান দিয়ে দেওয়া, এগুলো কোন শিশুর মানুসিক বিকাশে কোন রকম ভূমিকা রাখে না। সবচেয়ে বড় কথা হলো, উপকরণ ছাড়া শিক্ষার কোন বিকল্প নেই ।আপনি যদি শিক্ষক হন আপনার দায়িত্ব শিশুকে কিছু উপকরণ আর সমস্যা দেয়া শিশু সেই উপকরণ ব্যবহার করে সমস্যা উত্তরণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেবে ,এভাবে শিশু যে শিখনফল অর্জন করবে সেটা স্থায়ী।
আমরা সবাই শিম্পাঞ্জির উদাহরণ জানি, একবার এক শিম্পাঞ্জি কে খাচায় বন্দি করা হয়েছিলো। খাঁচার বাইরে একটু দূরে এক ছড়া কলা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিলো। আর খাঁচার মধ্যেই একটি লাঠি রাখা হয়েছিলো। শিম্পাঞ্জিটি অনেকবার চেষ্টা করলো কলা খাওয়ার জন্য ,দূরে থাকার কারণে পারলো না। একটা সময় সে তার পাশে রাখা লাঠিটি ব্যবহার করে কলার ছড়া কাছে আনলো, এবং কলা খেলো। এই লাঠিটি ছিলো শিম্পাঞ্জির জন্য উপকরণ। কেউ তাকে শিখিয়ে দেয়নি , কিন্তু উপকরণের সাহায্যে সে ঠিকই তার সমস্যা সমাধাণ করতে পেরেছিলো।
আমাদের শিশুদের সামনেও বিভিন্ন উপকরণ রাখতে হবে, নোট বই বা শীট নয়। যেমন গণনা করার জন্য মার্বেল, কাঠি, বীচি, ছবি, অডিও ,ভিডিও ইত্যাদি । এমনকি আপনার মাসের বাজার ও শিশুদের জন্য কোন কোন ক্ষেত্রে উপকরণ। বিভিন্ন ফল, সবজি, তরকারি সে রান্নাঘর থেকে শিখতে পারে। শিশুকে আপনার কাছ থেকে দূরে না পাঠিয়ে কাছাকাছি রাখুন , হয়তো আপনি জানেন না আপনার দৈনন্দিন কার্যক্রম থেকে সে অনেক কিছু শিখছে।
শিক্ষককের কাজ শিক্ষার্থীদের সমাধান করিয়ে দেয়া নয়, শিক্ষকের কাজ হলো শিক্ষার নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করা এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎসাহ তৈরি করা।
মনে রাখবেন , আপনার শিশু যদি আপনাকে প্রশ্ন করতে করতে পাগল করে ফেলে তাহলে সে সঠিক পথে আছে। কিন্তু আপনার শিশু যদি চুপচাপ থেকে পড়ালেখা করে তাহলে বুঝে নেবেন সে সঠিক পথে নেই। আপনার শিশুর ভবিষ্যৎ আপনার হাতে , আপনার শিশুকে আপনি ট্রেনিং দিবেন না শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করবেন।