শয়তানের নিঃশ্বাস বলতে কি শয়তানের নিঃশ্বাস ত্যাগ করাকে বুঝাচ্ছে?
না, একদই না।
শয়তানের নিঃশ্বাস নামটির সাথে আমরা অপরিচিত হলেও আমরা যখন এর বিস্তারিত জানব তখন মনে হবে এটি আমাদের চিরচেনা। মূ্লত শয়তানের নিঃশ্বাসের সাথে আমরা অনেক আগে থেকেই জড়িয়ে আছি। একটা ঘটনা দিয়ে তাহলে শুরু করা যাক।
”একদিন সোহান অনলাইনে মোবাইল বিক্রির একটি বিজ্ঞাপন দেয়। সেটা দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে সে একজন ক্রেতাও পেয়ে যায় কিন্তু শর্ত ছিলো যে মোবাইলটা সোহানকে পৌছে দিতে হবে ক্রেতার ঠিকানায়। শর্ত মতো সোহান মোবাইল নিয়ে ক্রেতার ঠিকানায় পৌঁছালো। এবং ক্রেতা খুশি হয়ে আসার সময় সোহানের জন্য কিছু ঝালমুড়িও আনলো। সোহান ও ক্রেতাকে মোবাইল দেখতে দিয়ে ঝালমুড়ি খেতে শুরু করে দিল। তারপর হঠাৎ সোহানের মাথাটা ঝিমঝিম করতে শুরু করলো। এরপর আর কিছুই সোহানের মনে নেই। যখন সে জ্ঞানে ফিরে আসে তখন সে দেখে তার মোবাইল এবং টাকা কিছুই নেই, নেই তার সে ক্রেতাও।”
কেন সোহানের ঝালমুড়ি খাওয়ার পরের ঘটনা কিছুই মনে ছিলোনা তা নিয়ে এবার আমরা বিস্তারিত জানব। সোহানের ঝালমুড়ি খাওয়ার পরের ঘটনা মনে ছিলোনা কারণ তার উপর তখন শয়তানের নিঃশ্বাস নামক এক প্রকার মারাত্মক ঔষধ প্রয়োগ করা হয়েছিল। এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাক-
এই পোস্টটি পড়লে আমরা যা যা জানতে পারব তা এক নজরেঃ
১/ শয়তানের নিঃশ্বাস কি?
২/এটির উৎপত্তি।
৩/এটি প্রয়োগের ফলে মানুষের যা হয়।
৪/যেযব দেশে এটি বেশি ব্যবহার করা হয়।
৫/এটি যে কারণে ব্যবহার করা হয়।
৬/ এটি যারা ব্যবহার করে থাকেন।
৭/এর ফলে সমাজে সৃষ্ট সমস্যা।
৮/যেভাবে এটি প্রয়োগ করা হয়।
৯/ এটি থেকে বাঁচার উপায়।
১/শয়তানের নিঃশ্বাস কি?
এটি হলো একধরনের ভয়ংকর ঔষধ বা মাদক। যা ইংরেজিতে স্কোপালোমিন ড্রাগ নামে পরিচিত। এটি মূলত জর্জি লস্কর বা ফ্লিকার দাতুরা উদ্ভিদ ফুল থেকে তৈরি হয়। এই ফুলগুলির গাছগুলোকে বলা হয় ‘শয়তানের গাছ। ‘ এই গাছগুলোর আরও কিছু নাম রয়েছে যেমন-
নরকের ঘণ্টা, শয়তানের শিংগা, দেবদূতের তূরী, হেনবেন, মুনফ্লাওয়ার, জিমসন আগাছা ইত্যাদি।
জর্জি লস্কর বা ফ্লিকার ফুলগুলো দেখতে সাদা, হলুদ, গোলাপি এবং বেগুনি রঙ এর হয়ে থাকে। এই ফুলগুলি তাদের বিষাক্ত শক্তিতে একদম আবদ্ধ করে রাখে।
২/ এর উৎপত্তিঃ
শয়তানের নিঃশ্বাস নামক ঔষধের এর উৎপত্তি হয় কলম্বিয়াতে। ১৮৮০ সালে সর্বপ্রথম জার্মান বিজ্ঞানী আলবার্ট লাদেনবার্গ ‘ সত্যের সিরাম’ অর্থাৎ সত্যের সন্ধানে এটির ব্যবহার নিয়ে গবেষণা করা শুরু করেন। এবং ১৯২২ সালে এটি কারাবন্দিদের উপর প্রয়োগ করা হয় ”ড. রবার্ট হাউস ‘ নামক একজনের সন্ধানে তথ্য বের করার ক্ষেত্রে।
৩/এটি প্রয়োগের ফলে মানুষের যা হয়ঃ
এই অষুধেটি খুবি অল্প পরিমানে ব্যবহার করা হয়। এর ফলে মানুষ অনেকটা হিপ্নোটাইজের মতো হয়ে যায়। তখন মানুষ নিজের বষে কিংবা স-জ্ঞানে থাকেনা। অন্যের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। এবং এই ঔষুধের কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর সেইসময়ে সংঘটিত কোন ঘটনা বা কথা মানুষের মনে থাকেনা।
৪/ যেসব দেশে এটি বেশি ব্যবহার করা হয়ঃ
মূলত, পাশ্চাত্য দেশ সমূহে এটির ব্যবহার বেশি পরিলক্ষিত হলেও আজকাল পাশ্চাত্য সহ পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই এর ব্যবহার দেখা যাচ্ছে। আমাদের দেশেও এর ব্যবহার ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৫/ এটি যে কারণে ব্যবহার করা হয়ঃ
এটির উৎপত্তিকালে অপরাধী খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হলেও বর্তমানে এটি বিভিন্ন অপকর্ম করার ক্ষেত্রে বেশি ব্যবহার করা হয়। যেমন- চোরি, ডাকাতি, খুন ইত্যাদির ক্ষেত্রে।
৬/ এটি যারা ব্যবহার করেঃ
মূলত এটির ব্যবহার অপকর্মে জড়িত থাকা লোকজনেরাই করে থাকেন। এর ফলে তাদের অবৈধ কাজকর্ম করতে সুবিধা হয়। যেমন – চোর কিংবা ডাকাত রা এই মাদক প্রয়োগ করে মানুষ থেকে তাদের মুল্যবান জিনিসপত্র খুব সহজেই নিয়ে নিতে পারেন এবং যেহেতু ঔষধের কার্যকারীতা নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর মানুষের কিছুই মনে থাকেনা সেহেতু তারা ধরা পড়া থেকে সুরক্ষিতও থাকেন। এভাবে শয়তানের নিঃশ্বাস নামক এই মারাত্মক ঔষধটি ব্যবহারের করে অপরাধীরা বড় বড় অপরাধ করেও বেঁচে যাচ্ছে। এবং তাদের অপকর্মের সাক্ষীও কেউ হতে পারছেনা।
৭/ এটির ফলে সমাজে সৃষ্ট সমস্যাঃ
এই ঔষধের ফলে সমাজে অপকর্ম করাটা সহজতর হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে সমাজে বেড়ে যাচ্ছে চুরি, ডাকাতি,রাজাহানির মতো নানা রকম সামাজিক সমস্যা।
৮/ যেভাবে এটি প্রয়োগ করা হয়ঃ
নানাভাবে এবং নানা কৌশলে এটি প্রয়োগ করা হয়ে থাকেন। যেমন- খাবারের সাথে মিশিয়ে, কাগজে মিশিয়ে পড়েতে দিয়ে, পানির সাথে মিশিয়ে ইত্যাদি।
৯/ এটি থেকে বাঁচার উপায়ঃ
এই মারাত্মক ঔষধ থেকে বাঁচার উপায় হলো একটিই। নিজেকে সাবধানে রাখা। কথায় আছে, সাবধানতার মার নেয়।এর থেকে বাঁচতে হলে যা করতে হবে-
* অপরিচিত কারো কাছ থেকে কিছু নেয়ে যাবেনা।
*অপরিচিত মানুষকে গায়ের কাছে আসতে দেয়া যাবেনা।
*অপরিচিত কেউ কিছু পড়তে দিলে সেটা নেয়া যাবেনা।
সুতরাং, সাবধানে থাকুক,
সুস্থ আর ভালো থাকুন।
ধন্যবাদ।