সমাজ জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রভাব

আধুনিক সভ্যতার ক্রমবিকাশে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রভাব অপরিসীম। টেকসই উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন,কর্মসংস্থান সৃষ্টি সর্বোপরি মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সরাসরি প্রভাব লক্ষ্যণীয়।
আইসিটির উন্নয়ন মানব সমাজের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রকে পরিবর্তিত করেছে এবং বিভিন্নভাবে আমাদের জীবন যাত্রাকে প্রভাবিত করছে। সমাজ জীবনে আইসিটির প্রভাব কখনো ইতিবাচক আবার কখনো নেতিবাচক। বর্তমান বিশ্বে আইসিটির অন্যতম প্রধান একটি সেবা হচ্ছে ইন্টারনেট। এর মাধ্যমে এখন খুব সহজেই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে খবর পাঠানো যায়। ব্যন্ডউইথ, ব্রডব্যন্ড ইত্যাদির কর্মদক্ষতা ও ইন্টারনেট সংযোগের গতির প্রেক্ষিতে যে কোন তথ্য এখন মুহূর্তের মধ্যে পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পাঠানো সম্ভব।

আবার ইন্টারনেট ব্যবহার করলে যোগাযোগ খরচ অন্যান্য যোগাযোগ মাধ্যম যেমন- টেলিফোন, কুরিয়ার সার্ভিস এগুলোর তুলনায় অনেক কম হয়। ইন্টারনেটের মাধ্যমে মানুষ অনেক বেশি তথ্য সেবা পেতে পারে। কারণ, ইন্টারনেটের সংযোগ খরচ তুলনামূলক ভাবে অনেক কম। এভাবেই আইসিটি যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি সাধন করছে। আইসিটির অগ্রগতি ফলে দিন দিন কাগজের ব্যবহার হ্রাস পাচ্ছে। আইসিটির প্রভাবে শিক্ষা ব্যবস্থাও অনেক পরিবর্তন হয়েছে। দূরশীক্ষণ, অনলাইন টিউটোরিয়াল ইত্যাদির মাধ্যমে এখন ঘরে বসেই লেখাপড়া করা সম্ভব হচ্ছে।
আইসিটি উন্নয়নের ফলে কর্মক্ষেত্রেও অনেক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। যেমন- আইসিটি কল্যাণে বিভিন্ন শিল্প কারখানায় রোবোট ব্যবহার করে ২৪ঘন্টা কার্য পরিচালনা সম্ভব হচ্ছে যা কখনোই একজন মানুষকে দ্বারা সম্ভব নয়। আবার অনেক কাজ কর্মক্ষেত্রে না গিয়ে ও ঘরে বসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে করা যাচ্ছে।এর ফলে আসা যাওয়ার সময় ও খরচ বাঁচানো যাচ্ছে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মিডিয়া ও প্রযুক্তির মূল ব্যবহারকারী হচ্ছে এদেশের তরুণ সমাজ। এটা অবশ্যই অনেক ভালো দিক যে, আমাদের দেশের তরুণ-তরুণীরা বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলছে। কিন্তু কথা হচ্ছে, মিডিয়া ও প্রযুক্তির ব্যবহারে আমাদের তরুণ তরুণীরা কতোটুকু সচেতন?
আমি একটা কথাই বলতে চাই, শিক্ষিত ও সচেতন তরুণ সমাজ অবশ্যই মিডিয়া ও প্রযুক্তির সুফল ভোগ করছে। শুধুমাত্র মিডিয়া ও প্রযুক্তিকে ব্যবহার করেই আমাদের শিক্ষিত তরুণ সমাজ গড়ে তুলেছে এক বিশাল কর্মক্ষেত্র। কিন্তু বর্তমান শহরে জীবন হতে শুরু করে গ্রামের অর্ধশিক্ষিত এবং অশিক্ষিত তরুণরাও খুব সহজে পেয়ে যাচ্ছে তথ্য প্রযুক্তির ছোয়া। কিন্তু তাদের মধ্যে অনেকেরই সচেতনতা নেই। সে কারণে মিডিয়া ও প্রযুক্তির অপব্যবহার হচ্ছে বেশি। বেড়ে যাচ্ছে আত্মহত্যা, খুন, অপহরণ ও ইভটিজিংসহ নানা ধরনের সামাজিক অপরাধ। আমাদের টিভি চ্যানেলগুলো সম্পূর্ণ ব্যবসায়িক মনভাবাপন্ন। বিজ্ঞাপন মিডিয়াকে পুরো পুরি গ্রাস করে ফেলছে। আর বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে নারী পুরুষ সকলেই পণ্যে পরিণত হচ্ছে। যেখানে সচেতনতার চেয়ে পুঁজি ও মুনাফাই প্রধান।
কিছু রাজনৈতিক নেতা ইন্টারনেট প্রযুক্তিকে ভয় পান। এতে হয়তো জনগণের মত প্রকাশ দৃশ্যমান হয়ে পড়বে! লিবিয়ান প্রেসিডেন্ট গাদ্দাফি অন্যতম! কিছু চাইনিজ ব্লগার সবার আগে ব্লগিংয়ের দ্বারা সরকারের সমালোচনা শুরু করে। কিছু দেশের সরকার এতে বাধা তৈরি করে।
এখন ভাবার সময় চলে এসেছে, কিভাবে প্রযুক্তি সমাজে প্রভাব বিস্তার করে। কিসে আমাদের জনগণ ভালো। সব প্রযুক্তি মানব কল্যাণে তৈরি ভাবলেও তা কিছুটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলকও। যা আমরা খোলা চোখে দেখতে পারি না। নিজস্ব সংস্কৃতি আর ইতিহাসের প্রতি সমুন্নত থাকলেই কেবল সকল প্রকার প্রযুক্তির খারাপ দিক গুলো এড়িয়ে লাভটা আদায় করে নেওয়া সম্ভব।
তবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নির্ভর করছে ব্যক্তির নিজস্ব চিন্তা ও চেতনার উপর। কেউ ইচ্ছে করলে একে খারাপ কাজে ব্যবহার করতে পারেন, আবার ভালো কাজেও ব্যবহার করতে পারেন। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সমাজের জন্য এক বিরাট আশীর্বাদ। তাই এর নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার, দ্রুত প্রসার এবং উন্নয়ন পৃথিবীকে আরও সুন্দর এবং সমৃদ্ধ করবে।

Related Posts

7 Comments

মন্তব্য করুন